Home Second Lead পাচার করা অর্থ কর দিয়ে দেশে ফেরত আনার সুযোগ

পাচার করা অর্থ কর দিয়ে দেশে ফেরত আনার সুযোগ

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি

ঢাকা: পাচার করা অর্থ ফেরত আনতে প্রায় ৯ বছর আগে গঠন করা টাস্কফোর্স পুনর্গঠন করা হয়েছে। টাস্কফোর্সে সদস্য সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি কার্যপরিধিও নতুন করে নির্ধারণ করা হয়েছে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব মোকাবিলায় ডলার সংকট মেটাতে বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার সুযোগ দিচ্ছে সরকার। এ বিষয়ে শিগগিরই নির্দেশনা দিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ জন্য আমলা, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ীসহ যেসব বাংলাদেশি অর্থ পাচার করেছেন, নিদিষ্ট পরিমাণে কর দিয়ে সে অর্থ দেশে ফেরানোর সুযোগ পাবেন। এরই অংশ হিসেবে টাস্কফোর্স পুনর্গঠন করা হয়েছে।

আসছে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করা হবে ৯ জুন। বাজেটেও পাচার হয়ে যাওয়া অর্থ ফেরতের বিষয়ে দিকনির্দেশনা থাকবে। অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতায় থাকতে পারে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ কর দিলে ফেরত আনা অর্থ দেখানো যাবে আয়কর নথিতে। তার আগেই বিদেশে পাচার হয়ে যাওয়া সম্পদ দেশে ফেরত আনার বিষয়ে গঠিত টাস্কফোর্স পুনর্গঠন করেছে সরকার। গত রবিবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের উপসচিব মো. জেহাদ উদ্দিন স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে পুনর্গঠন করা হয়। ২০১৩ সালে গঠন করা এ সংক্রান্ত টাস্কফোর্সে সদস্য ছিলেন ১০ জন। এবার সদস্য সংখ্যা চারজন বাড়িয়ে ১৪ জনে উন্নীত করা হয়েছে। পাচার করা অর্থ দেশে ফেরত আনতে সংশ্লিষ্ট বিদেশি সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ, তথ্য সংগ্রহ ও অভ্যন্তরীণ সমন্বয় করবে পুনর্গঠিত টাস্কফোর্স।

পুনর্গঠিত টাস্কফোর্সের আহ্বায়ক অ্যাটর্নি জেনারেল ও সচিব করা হয়েছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) উপপ্রধান কর্মকর্তাকে। এছাড়া সদস্য হিসেবে থাকবেন বিএফআইইউ’র প্রধান কর্মকর্তা, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের কমিশনার, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক, দুর্নীতি দমন কমিশনের মহাপরিচালক (মানিলন্ডারিং), আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের যুগ্মসচিব (কেন্দ্রীয় ব্যাংক), জননিরাপত্তা বিভাগের একজন যুগ্মসচিব, আইন মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্মসচিব, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেলের মহাপরিচালক, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (জাতিসংঘ), পুলিশের সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক (বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগ)।

টাস্কফোর্সের কার্যপরিধিতে বলা হয়, এ টাস্কফোর্স বিদেশে পাচারকৃত সম্পদ মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর বিধান অনুযায়ী বাংলাদেশে ফেরত আনার উদ্যোগ গ্রহণ করবে। পাচারকৃত সম্পদ উদ্ধারে দায়েরকৃত মামলাগুলোর কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্ন করার  ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করার পাশাপাশি তা দূর করার উদ্যোগ নেবে। এছাড়াও এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিদেশি সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ, তথ্য আহরণ ও অভ্যন্তরীণ সমন্বয় করবে। ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) টাস্কফোর্সকে সাচিবিক সহায়তা দেবে।

গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির তথ্যমতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের আড়ালে প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে গড়ে ৬৪ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ পাচার মনিটরিং সংস্থা- বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিআইএফইউ) মতে প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সুইজারল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাত, থাইল্যান্ডসহ ১০টি দেশে টাকা পাচার হচ্ছে। পাচারকৃত টাকার পরিমাণ বিবেচনায় দক্ষিণ এশিয়ায় পাচারকারী  দেশ হিসেবে দ্বিতীয় স্থানে বাংলাদেশ। ২০১৭ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত চার বছরে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা জমার তথ্য প্রকাশ করেছে সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বৈদেশিক বাণিজ্যের আড়ালেই বাংলাদেশ থেকে ৪ হাজার ৯৬৫ কোটি ডলার পাচার হয়েছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ সোয়া ৪ লাখ কোটি টাকা।

এ বিষয়ে গত ২৬ মে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, বিভিন্ন দেশে তো এ সুযোগ অনেকে নিয়েছেন। ইন্দোনেশিয়া যখন এমন একটি অ্যামনেস্টি ঘোষণা করল, তখন অনেক টাকা বিদেশ থেকে দেশে ফেরত এসেছে। আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের এখান থেকে যারা টাকা নিয়ে গেছেন, এ সুযোগটি তাদের জন্য অত্যন্ত ভালো একটি সুযোগ, সেটি তারা কাজে লাগাবেন। সব দিক থেকে আমাদের চেষ্টা করতে হবে।

জানা গেছে, জার্মানি, ইন্দোনেশিয়া বেলজিয়াম, ইতালি, স্পেন, পাকিস্তান ইত্যাদি দেশ যেভাবে তাদের দেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার কৌশল অবলম্বন করছে, বাংলাদেশও সে পথে হাঁটবে।