বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
সুনামগঞ্জ: সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক পানিতে তলিয়ে গিয়ে সারা দেশের সঙ্গে সুনামগঞ্জের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। শুক্রবার বন্যার্তদের উদ্ধারে কাজ শুরু করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
জেলার প্রতিটি উপজেলাই কমবেশি প্লাবিত হয়েছে। অধিকাংশ ঘরেই হাঁটু থেকে গলাসমান পানি। নৌকার অভাবে অনেকে ঘর ছেড়ে নিরাপদেও যেতে পারছে না। এমন অবস্থায় পানিতে আটকে পড়া মানুষকে উদ্ধারে জেলার তিন উপজেলায় সেনাবাহিনী নেমেছে।
সিলেটের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) দেবজিৎ সিংহ বলেন, সুনামগঞ্জে বন্যার পানিতে আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধারে সেনাবাহিনীকে উদ্ধার তৎপরতা চালানোর অনুরোধ জানানো হয়েছে। সুনামগঞ্জ সদর, ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলায় শিগগির এ উদ্ধার কার্যক্রম শুরু হবে।
এর আগে গত বুধবার থেকে উজান থেকে ব্যাপক পরিমাণে পাহাড়ি ঢল নামা শুরু হলে বন্যা পরিস্থিতির তৈরি হয়। শুক্রবার পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। জেলার প্রায় সব উপজেলা বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। অসংখ্য রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়েছে। জেলা সদরের সঙ্গে পাঁচটি উপজেলার সরাসরি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন কয়েক লাখ মানুষ।
সুনামগঞ্জ শহরের প্রায় প্রতিটি বাসাতেই পানি ঢুকেছে। উকিলপাড়া এলাকার একজন বাসিন্দা বলেন, সুনামগঞ্জে এর আগে এত ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছে। জেলা শহরে সড়কে চলছে নৌকা, সড়ক যোগাযোগ হয়ে পড়েছে বিচ্ছিন্ন, সেই সঙ্গে গত ৩দিন ধরে বিদ্যুৎ নেই।
স্থানীয় সরকার বিভাগ সুনামগঞ্জের উপপরিচালক মোহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় পুরোপুরি বিপর্যস্ত সুনামগঞ্জ জেলা। তবে প্রশাসন সর্বাত্মক চেষ্টা করছে মানুষের পাশে দাঁড়াতে।
সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নাদের বখত বলেন, ‘পৌর শহরের সব রাস্তাঘাট ও বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করেছে। মানুষ উঁচু এলাকা খুঁজে খুঁজে আশ্রয় নিচ্ছে। এক ভয়াবহ দুর্যোগে পড়েছে জেলা শহরের বাসিন্দারা।’
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রায়হান কবির বৃহস্পতিবার বিকেলে বলেন, ‘দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত তাহিরপুর উপজেলায় টাঙ্গুয়ার হাওরসহ বিভিন্ন পর্যটন এলাকাগুলোতে নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
তিনি জানান, উপজেলা সীমান্তের যাদুকাটা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে ৮ দশমিক শূন্য ৫ মিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে ২০ মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তারা সেগুলো বিতরণ করবে। সীমান্তের যাদুকাটা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।’
উপজেলার ৩০টি আশ্রয়কেন্দ্র ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সার্বক্ষণিক খোলা রাখা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত আশ্রয়কেন্দ্রে কেউ ওঠেননি।
উপজেলার সদর বাজার, সুলেমানপুর বাজার, বালিজুরি বাজার, পাতারগাঁও বাজার, কাউকান্দি বাজার, একতা বাজার, নতুন বাজার ও শ্রীপুর বাজার পানির নীচে তলিয়ে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে দিনমজুর ও খেটে খাওয়া মানুষ। সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে নিন্মাঞ্চলের কয়েক হাজার মানুষকে নিজ নিজ বাড়িতে অবস্থান করতে হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, বৈরী আবহাওয়ার কারণে বিদ্যুৎ নেই। এ ছাড়া উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পানিতে তলিয়ে গেছে।
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। আমরা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বানভাসি মানুষদের সহায়তা করে যাচ্ছি। সন্ধ্যা থেকে অঝোর বৃষ্টি হচ্ছে সুনামগঞ্জে, যাতে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নেওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে।’
সন্ধ্যায় সুনামগঞ্জে সুরমার পানি বিপৎসীমার ৭৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শামসুদ্দোহা বলেন, মেঘালয়ে প্রায় সাড়ে ছয় শ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে গত ২৪ ঘণ্টায়। আগামী ৭২ ঘণ্টায় সুরমায় পানি বাড়তে পারে। এতে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটতে পারে।
ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতিতে সুনামগঞ্জ জেলাসহ সিলেট বিভাগের ১৬ উপজেলা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
শুক্রবার সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেন জানান, গ্রিডে সমস্যা হওয়ায় সুনামগঞ্জের সব উপজেলাসহ বিভাগের ১৬ উপজেলা পুরোপুরি বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সুনামগঞ্জ থেকে সিলেট এখন একেবারেই বিচ্ছিন্ন। পুরো সুনামগঞ্জ জেলাসহ মোট ১৬টি উপজেলায় বিদ্যুৎ নেই। যার কারণে মোবাইল ফোন যোগাযোগও ব্যাহত হচ্ছে। কোনো কোনো জায়গায় কোনরকমে মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক চালু রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বৃষ্টি আর ভারতের মেঘালয়-আসামের উজানের ঢলে চলতি মৌসুমে তৃতীয় দফা বন্যা দেখা দিয়েছে সিলেট অঞ্চলে।
আগামী ৭২ ঘণ্টায় দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং তৎসংলগ্ন ভারতের আসাম, মেঘালয় ও হিমালয় পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গে ভারি থেকে অতিভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে।
সে কারণে সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোণা জেলার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছে পূর্বাভাসে।
বন্যাকবলিত এলাকার স্থানীয়রা জানিয়েছে, বন্যায় জেলায় যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। এই মুহূর্তে সুনামগঞ্জের সবার ঘরে খাওয়ার পানি নেই। বিদ্যুৎ নেই। মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ। পরিস্থিতি ক্রমে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে।
জেলার প্রতিটি উপজেলাই কমবেশি প্লাবিত হয়েছে। অধিকাংশ ঘরেই হাঁটু থেকে গলাসমান পানি। নৌকার অভাবে অনেকে ঘর ছেড়ে নিরাপদেও যেতে পারছে না। এমন অবস্থায় পানিতে আটকে পড়া মানুষকে উদ্ধারে জেলার তিন উপজেলায় সেনাবাহিনী নেমেছে।
সিলেটের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) দেবজিৎ সিংহ বলেন, সুনামগঞ্জে বন্যার পানিতে আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধারে সেনাবাহিনীকে উদ্ধার তৎপরতা চালানোর অনুরোধ জানানো হয়েছে। সুনামগঞ্জ সদর, ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলায় শিগগির এ উদ্ধার কার্যক্রম শুরু হবে।