অনুসন্ধানে জানা যায়, গাংনীর সিন্দুরকোটা গ্রামের ভাটপাড়ার বাসিন্দা মন্টুকে (৪৮) বোমা মন্টু নামে চেনেন গ্রামের সবাই। একসময় ছিলেন ডাকাত দলের সরদার। বোমার আঘাতে দুই হাতের কবজি হারানোর পর ডাকাতির পেশা ছেড়ে দিয়ে বিদেশে ভিক্ষাবৃত্তির পথ বেছে নেন।
মটমুড়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য (মেম্বার) ভাটপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ফারুক হোসেন বলেন, ‘বোমা মন্টু অনেকবার হজ ভিসায় সৌদি আরবে গেছে। তবে গ্রামে কখনো তাকে নামাজ পড়তে দেখিনি।’
একই গ্রামের বাসিন্দা চায়ের দোকানদার হোসেন খন্দকার বলেন, ‘কম পয়সায় ভারত হয়ে হজে যাওয়া সহজ হওয়ায় ১২-১৪ বার মন্টু হজে গিয়ে ভিক্ষা করে দেশে বিপুল অর্থ এনে, সেই অর্থে সহায় সম্পদ গড়েছে।’
ভাটপাড়া গ্রামের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাসিন্দা বলেন, ‘একবার হজে গিয়ে ভিক্ষা করে প্রায় ৪০ লাখ টাকা আয় হয়েছিল মন্টুর। তারপর থেকে হজের নামে সৌদি গিয়ে ভিক্ষাবৃত্তিতে আসক্ত হয়ে পড়ে সে। মূলত হজ করতে নয়, সেখানে গিয়ে ভিক্ষাবৃত্তিই তার নেশা ও পেশা। ডাকাত থেকে এখন সে আন্তর্জাতিক ভিক্ষুক হয়েছে। ছোট থেকেই চতুর স্বভাবের ছিল মিন্টু। তাই দুই হাতের কবজি হারিয়ে সে অভিনব এ কাজ করে গ্রামে প্রায় ৪০ বিঘা জমির মালিক হয়েছে। গবাদিপশু পালন করে। চাষাবাদ ও ব্যবসা রয়েছে। সব মিলিয়ে মন্টু ডাকাত এখন কোটিপতি।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করোনা পরিস্থিতির কারণে এবং ভারত সীমান্ত বন্ধ থাকায় গত দুই বছর হজে যাওয়া হয়নি মন্টুর। দেশ থেকে ‘ধানসিঁড়ি ট্রাভেল এয়ার সার্ভিস’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে হজ ভিসা নিয়ে সৌদি গিয়ে এবারই প্রথম দেশটির পুলিশের হাতে আটক হন। গত বুধবার স্থানীয় সময় বেলা ৩টার দিকে মদিনা শরিফে ভিক্ষাবৃত্তি করার সময় সৌদি পুলিশ তাকে আটক করে। অবশ্য পরে বাংলাদেশ হজ মিশনের একজন কর্মী গিয়ে মুচলেকা দিয়ে তাকে ছাড়িয়ে নেন। এ ঘটনায় দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হওয়ায় ধানসিঁড়ি ট্রাভেলসকে হজ ও ওমরাহ ব্যবস্থাপনা আইন-২০২২-এর ৯ ধারায় কারণ দর্শানোর নোটিস (শোকজ) দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। হজের নামে হজ ভিসায় সৌদি আরবে গিয়ে মন্টুর ভিক্ষাবৃত্তির ঘটনায় বিব্রত ও লজ্জিত সরকারের হজ মিশন এবং মেহেরপুরের স্থানীয় প্রশাসন ও তার গ্রামের বাসিন্দারা।
মন্টুর স্ত্রী মমতাজ পারভীন বলেন, এক ছেলে, তিন মেয়ে ও শাশুড়িকে নিয়ে তার সংসার। দুই হাত না থাকলেও তার স্বামী নিজের সব কাজ নিজেই করতে পারেন। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার মন্টুর সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হয়েছে তার। তখন তিনি (মন্টু) বলেন, ‘ভালো আছি, হজ শেষে চলে আসব।’ ওই দিনের পর থেকে মোবাইল ফোনের সংযোগ বন্ধ পাওয়ায় আর স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি মমতাজ। তিনি জানান, করোনার কারণে সীমান্তপথ বন্ধ না থাকলে প্রায়ই ভারতে যেতেন তার স্বামী। ভারত এবং বাংলাদেশ হয়ে অনেকবার হজ ভিসায় সৌদি আরবে গেছেন মন্টু। তবে বিদেশে গিয়ে স্বামী কী করেন, তা জানা নেই বলে দাবি করেন মমতাজ।
মটমুড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোহেল আহমেদ বলেন, ‘ভিক্ষা করতে গিয়ে মন্টু সৌদি পুলিশের হাতে ধরা পড়লে মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিপত্রটি টিএনও র মাধ্যমে পেয়ে পুরো বিষয় আমি জানতে পারি। হজের নামে সৌদি গিয়ে মদিনা শরিফে ভিক্ষার ঘটনা দেশের এবং আমাদের জন্য খুবই লজ্জার। তার পাসপোর্ট বিশ্লেষণ করলে প্রমাণিত হবে সে আন্তর্জাতিক ভিক্ষুক। সে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার চোখ ফাঁকি দিয়ে ভিক্ষা করতে মুসলিম-অধ্যুষিত বিভিন্ন দেশে ঘুরে বেড়ায়।’
মন্টু গ্রামে পেশাগতভাবে কিছুই করেন না জানিয়ে চেয়ারম্যান সোহেল আহমেদ বলেন, ‘অথচ মন্টু প্রতি বছর ৫-৭ লাখ টাকা ব্যয় করে হজ ভিসায় সৌদি যায়। সেখানে ভিক্ষা করে খরচের টাকাসহ অনেক টাকা আয় করে। এই লোভেই সে বিদেশে ভিক্ষার পেশা বেছে নিয়েছে। গ্রামে ফিরে প্রথমেই সে জমি কেনে। এভাবে ৩৫-৪০ বিঘা জমি কিনেছে। দেশে এমন ভিক্ষুকদের একটি চক্র রয়েছে। তাদের শনাক্ত করা উচিত।’