বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
ঢাকা: জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে নিজের গায়ে আগুন দেয়া ব্যবসায়ী গাজী আনিসুর রহমান আনিস (৫০) শেখ হাসিনা জাতীয় বার্নে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) মারা গেছেন। মঙ্গলবার ভোর সোয়া ছয়টার দিকে মৃত্যু হয়েছে তার।
সোমবার (০৪ জুলাই) বিকালে ঋণের দায়ে নিজের গায়ে আগুন দেন তিনি। দগ্ধ অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। সেখানকার আবাসিক সার্জন ডাঃ আইউব হোসেন তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, প্রেসক্লাব থেকে দগ্ধ অবস্থায় আসা গাজী আনিস শেখ হাসিনা জাতীয় বার্নের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার (০৫ জুলাই) ভোর সোয়া ৬টার দিকে মারা যান। তার শরীরে ৯০ শতাংশ দগ্ধ ছিল।
মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দীর্ঘ এক স্ট্যাটাস দেন গাজী আনিস।এতে তিনি বলেন, ‘প্রিয় শুভাকাঙ্ক্ষী ভাই বোন বন্ধু। আমি মো. আনিসুর রহমান (গাজী আনিস) একজন কবিতা প্রেমিক মানুষ। নিজে হয়তো ভালো কবিতা লিখতে পারি না, কিন্তু আমি ভীষণ ভাবে কবিতা ভালোবাসি।’
‘আমি একজন ব্যবসায়ী এবং জীবনে প্রচুর রোজগার করেছি। আমার রোজগারের সবচেয়ে বড় অংশ স্থানীয় স্কুল, মাদ্রাসা, মসজিদ এবং অসহায় দুস্থ মানুষের জন্য উৎসর্গ করেছি। সেইসাথে নিজেও সুখী স্বাচ্ছন্দ্যময় এবং সৎ জীবন যাপন করেছি। আমি তিনটি কন্যা সন্তানের জনক। আমার বড় মেয়ে মেধা রহমান আঁচল এবার এইচএসসি পরীক্ষার্থী আগস্ট ২০২২, মেঝো মেয়ে প্রতিভা রহমান অহনা এসএসসি পরীক্ষার্থী জুন ২০২২ এবং ছোট মেয়ে জয়িতা রহমান অবনী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত।’
‘২০১৬ সাথে হেনোলাক্স গ্রুপের কর্ণধার মো. নুরুল আমিন এবং তার স্ত্রী ফাতেমা আমিনের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। ধীরে ধীরে তাদের সাথে আমার সখ্যতা এবং আন্তরিকতা গড়ে উঠে। আমি কুষ্টিয়া জেলায় জন্মগ্রহণ করেছি এবং কুষ্টিয়া শহরেই বসবাস করি।’
‘তবে প্রতিমাসেই নিজের প্রয়োজনে ঢাকা এলে তাদের সাথে আমার সার্বক্ষণিক যোগাযোগ হতো এবং উপহার বিনিময় ও ভালো রেস্তোরাঁয় আমরা একসাথে খাওয়া দাওয়া করতাম এবং বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে যেতাম। যেহেতু আমি স্বচ্ছন্দ দিনযাপনে অভ্যস্ত এবং অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী নিজস্ব গাড়িতেই সব সময় যাতায়াত করি। আমি মো. নুরুল আমিন এবং ফাতেমা আমিনের সঙ্গে নিজের খরচায় দেশের বাইরেও একাধিকবার বেড়াতে গিয়েছি।’
‘২০১৮ সালে কলকাতা হোটেল বালাজীতে একইসাথে অবস্থান কালে উনারা আমাকে হেনোলাক্স গ্রুপে বিনিয়োগের এবং যথেষ্ট লাভবান হওয়ার সুযোগ আছে বলে জানান। আমি প্রথমে অসন্মতি জ্ঞাপন করলেও পরবর্তীতে রাজি হই এবং প্রাথমিক ভাবে এককোটি টাকা বিনিয়োগ করি। পরবর্তীতে তাদের পীড়াপীড়িতে আরও ছাব্বিশ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করি(অধিকাংশ টাকা ঋণ হিসেবে আত্মীয় স্বজন বন্ধু বান্ধবের কাছ থেকে নেয়া)। বিনিয়োগ করার সময় পরস্পরের প্রতি সম্মান এবং বিশ্বাসের কারণে এবং তাদের অনুরোধে চুড়ান্ত রেজিস্ট্রি চুক্তি করা হয়নি তবে প্রাথমিক চুক্তি করা হয়েছে। বিনিয়োগ পরবর্তী চুড়ান্ত রেজিস্ট্রি চুক্তিপত্র সম্পাদন করার জন্য বারবার অনুরোধ করি কিন্তু উনারা গড়িমসি করতে থাকেন। এক পর্যায়ে উনারা প্রতিমাসে যে লভ্যাংশ প্রদান করতেন সেটাও বন্ধ করে দেন এবং কয়েকবার উনাদের লোকজন দ্বারা আমাকে হেনস্তা ব্ল্যাকমেইল করেন এবং করার চেষ্টা করেন। বর্তমানে লভ্যাংশ’সহ আমার ন্যায্য পাওনা তিনকোটি টাকার অধিক।’
‘এ-বিষয়ে কুষ্টিয়া আমলী আদালতে আমি উনাদের আসামী করে দুইটি মামলা দায়ের করেছি যা বিচারাধীন রয়েছে এবং গত ২৯/০৫/২০২২ তারিখ জাতীয় প্রেসক্লাব ঢাকায় সাংবাদিক সম্মেলন করি এবং যাবতীয় ডকুমেন্টস সম্মানিত সাংবাদিকদের নিকট উপস্থাপন করি। এবিষয়ে বিস্তারিত তথ্যাদি জনাব তুহিন আহমেদ মোবাইল নং ০১৭১২৫০০১০২ এবং জনাব রাজু হামিদ মোবাইল নং ০১৭১৬০০৯৯৬৫ এর মাধ্যমে জানা যাবে।’
‘ভীষণ মানসিক নিপট খরায় আমি উল্লেখিত তথ্যাদি উপস্থাপন করলাম। আমার সামনে বিকল্প পথ না থাকায় ফেসবুকেও সবাইকে জানালাম।’
‘আমি এই প্রতারক দম্পতির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট অনুরোধ করছি। সেইসাথে যারা আমার শুভাকাঙ্ক্ষী তারাও সোচ্চার হবেন বলে আশা করছি।’