বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক
ভারতের ১৫তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য আজ সোমবার সকালে ১০টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হবে। দিল্লিতে সংসদ ভবন ছাড়াও প্রতিটি রাজ্য বিধানসভা ভবনে ভোট গ্রহণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বিজেপি তথা এনডিএ প্রার্থী দ্রৌপদী মুর্মুর জয় নিয়ে গোড়া থেকেই কোনও সংশয় ছিল না। যত দিন গিয়েছে তাঁর দিকে সমর্থনের পাল্লা ভারী হয়েছে। অঙ্কের হিসাবে বিরোধী প্রার্থী যশবন্ত সিনহার পক্ষে আছে ৪০ শতাংশের কাছাকাছি ভোট। কিন্তু ক্রস ভোটিং ঠেকানো না গেলে দ্রৌপদীর জয়ের মার্জিন দুই তৃতীয়াংশ ছাপিয়ে যেতে পারে, মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
খাতায় কলমে দৌপদীকে সমর্থনের কথা জানিয়েছে ৩৬টি দল। অন্যদিকে, যশবন্তের পক্ষে আছে ১৬ দলের সমর্থন। রাজনৈতিক মহলের খবর, দৌপদীর জয় নিশ্চিত করার পর বিজেপির লক্ষ্য বিরোধী শিবিরের ভোট ভাঙিয়ে ২০২৪-এর লোকসভার লড়াইকে আরও সহজ করে নেওয়া। যাতে বিরোধীরা আর হাত ধরাধরির রাস্তায় না হাঁটে। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোট গোপন ব্যালটে। ফলে ‘বিবেকের ডাকে সাড়া’ দিয়ে কেউ প্রতিপক্ষ শিবিরের প্রার্থীকে ভোট দিলে তা ধরার উপায় নেই।
মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা বর্তমান প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি কমলনাথ অভিযোগ করেছেন, দ্রৌপদীকে সমর্থনের জন্য কংগ্রেস বিধায়কদের বিজেপি মাথাপিছু এক কোটি টাকা করে দেওয়ার টোপ দিয়েছে। রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, ক্রস ভোটিংয়ের সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখে আগেভাগে অভিযোগ করে রেখেছেন কমলনাথ।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোটার হলেন লোকসভার ৫৪৩, রাজ্যসভার ২৩৩ সাংসদ এবং বিভিন্ন রাজ্যের ৪০৩৩জন বিধায়ক। গত বছরের তুলনায় এবার ৮৭জন ভোটার কম। জম্মু-কাশ্মীরের বিধানসভা বর্তমানে না থাকায় সেখানকার ৮৭জন বিধায়ক এবার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। অতীতে এমন নজির নেই।
নির্বাচন কমিশনের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ১৫ তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিধায়কদের ভোটের মূল্য ৫ লাখ ৪৩ হাজার ২৩১। আর এমপি-দের সম্মিলিত ভোটের মূল্য হল ৫ লাখ, ৪৩ হাজার ২০০। তারমানে সব মিলিয়ে ভোটের মূল্য হল ১০ লাখ, ৮৬ হাজার ৪৩১।
ভোট আর ভোটের মূল্য
লোকসভা, বিধানসভার ভোটে প্রত্যেকের ভোটের মূল্য সমান এবং তা হল ১। কিন্তু রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোট ছাড়াও ভোটের মূল্য বলে একটি বিষয় আছে। এই দুই নির্বাচনে প্রতিটি ভোটের মূল ১ নয়। বরং অনেক বেশি এবং তা রাজ্যে রাজ্যে আলাদা। এবার যেমন, এমপি, এমএলএ মিলিয়ে মোট ভোটার ৪৮০৯জন। কিন্তু তাঁদের ভোটের মূল্য হল ১০ লাখ ৮৬ হাজার ৪৩১। ৪৮০৯জন ভোটারের মাথাপিছু ভোট মূল্য এবার ৭০০। গতবার ছিল ৭০৮। আগেই বলেছি, জন্মু-কাশ্মীরের ৮৭জন বিধায়ক এবার ভোট দিতে পারবেন না। ফলে ভোটের মূল্য গতবারের থেকে মাথাপিছু আট কমে ৭০০ হয়েছে। অর্থাৎ এবার একজন বিধায়ক বা সাংসদরা ভোট দিতে প্রতি ভোটের মূল্য হবে ৭০০।
ভোটের মূল্য বিষয়টি কী?
এটাই হল সাধারণ নাগরিকের রাষ্ট্রপতি ভোটে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পরোক্ষ ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থার মূলে আছে জনসংখ্যা। প্রত্যেক রাজ্যের জনসংখ্যা (১৯৭১ জনগণনার পরিসংখ্যান অনুযায়ী) অনুযায়ী এটা ঠিক হয়ে থাকে। জনসংখ্যাকে বিধানসভার সংখ্যা এবং এক হাজারের গুণ ফল দিয়ে ভাগ করলে যে সংখ্যা আসবে সেটাই হল বিধায়কদের ভোটের মূল্য।
১৯৭১ সালের জনসংখ্যাকে ভোটের মূল্য নির্ধারণে মাপকাঠি করা হয় কেন?
আসলে জনসংখ্যার ভিত্তিতে ওই বছর নতুন করে লোকসভা ও বিধানসভার আসন সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়েছিল। ২০০৪ সালে আসনগুলির সীমানা নতুন করে নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু লোকসভা ও বিধানসভার রাজ্যভিত্তিক আসন সংখ্যা অপরিবর্তিত আছে।
বাংলার ভোটের মূল্য কত?
পশ্চিমবঙ্গের ভোটের মূল্য ১৫১। সবচেয়ে বেশি হল উত্তরপ্রদেশের, ২০৮। সবচেয়ে কম সিকিমের, ৭। বাংলার ২৯৪ আসন মিলিয়ে মোট ভোটের মূল এবার ৪৪,৩৯৪। এর বেশিরভাগই শাসক দল তৃণমূলের দখলে।
কোন শিবিরে কত ভোট?
শাসক শিবির এনডিএ-র হাতে আছে ৪৮ শতাংশ ভোট। এরমধ্যে প্রধান শরিক বিজেপির আছে ৪২ শতাংশ। বাকি ছয় শতাংশ শরিকদের।
অন্যদিকে, কংগ্রেস ও তার সহযোগী দলগুলির হাতে আছে মাত্র ২৪ শতাংশ ভোট। একমধ্যে কংগ্রেসের ভোট ১৩.৫ শতাংশ।
এই দুই শিবিরের বাইরে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ভোট আছে তৃণমূল কংগ্রেসের হাতে—৫.৪ শতাংশ, ওয়াইএসআর কংগ্রেস—৪ শতাংশ, বিজু জনতা দল—২.৮৫ শতাংশ এবং বামেদের ২.৫ শতাংশ। বাকি আছে জেএমএম-সহ ছোট দলগুলির সঙ্গে। বিজু জনতা দল, ওয়াইএসআর কংগ্রেস প্রভৃতি দলগুলি প্রকাশ্যেই জানিয়ে দিয়েছে তারা দ্রৌপদীকে সমর্থন জানাবে। পরে শিবসেনাও সেই তালিকায় নাম লিখিয়েছে। যেমন, জেএমএম ঝুঁকে দ্রৌপদীর দিকে। এত গেল সাদা চোখের হিসাব।
ক্রস ভোটিংয়ের ভয়
এরপর জনজাতি এবং মহিলা রাষ্ট্রপতি প্রার্থী বলে ক্রস ভোটিংয়ের সুবাদে দৌপদী মার্জিন কতটা বাড়াতে পারেন সেটাই এখন দেখার। বস্তুত, ক্রস ভোটিংই শেষ পর্যন্ত এবারের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিরোধী দলগুলির জন্য চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। হাটে গরু-ছাগল বিক্রির মতো টাকা নিয়ে বিকিয়ে যেতে অভ্যস্ত নেতারা গোপন ব্যালটের ভোটে কে কোন দিকে ছাপ দেবে বলা মুশকিল। যশবন্ত সিনহার দাবি, বিবেকের টানে কেউ তাঁর ডাকে সাড়া দেবেন না, এটা ধরে নেওয়া যায় না।