Home First Lead খেলাপি ঋণ নবায়নে আরও সুবিধা দিল বাংলাদেশ ব্যাংক

খেলাপি ঋণ নবায়নে আরও সুবিধা দিল বাংলাদেশ ব্যাংক

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি

ঢাকা: ব্যাংকের খেলাপি গ্রাহকদের আরও সুবিধা দিল বাংলাদেশ ব্যাংক। খেলাপি ঋণ পুনঃতপসিল করা যেতো ৩ বার। এখন থেকে শর্তসাপেক্ষে তা ৪ বার পর্যন্ত করতে পারবে। বাড়ানো হয়েছে ঋণ পরিশোধের সময়ও।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত মাস্টার সার্কুলার নতুন করে জারি হয়েছে সোমবার। এ সংক্রান্ত নীতিমালায় বলা হয়েছে, খেলাপি অবস্থায় থাকা ১০০ কোটি টাকার কম মেয়াদি ঋণের ক্ষেত্রে ১ম ও ২য় বার পুনঃতফসিল করে পরিশোধ করার জন্য গ্রেস পিরিয়ডসহ সর্বোচ্চ ৬ বছর সময় পাওয়া যাবে। ১০০ কোটি টাকার বেশি কিন্তু ৫০০ কোটি টাকার কম মেয়াদি ঋণ পুনঃতফসিল করে পরিশোধে সময় পাওয়া যাবে ৭ বছর। ৫০০ কোটি টাকার বেশি মেয়াদি ঋণ পুনঃতফসিল করে পরিশোধের জন্য সময় পাওয়া যাবে সর্বোচ্চ ৮ বছর।

 ব্যাংক খাতে থাকা খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করে পরিশোধে সর্বোচ্চ সময় পাওয়া যেত ৩ বছর। তবে এবার খেলাপি ঋণ আদায়ের স্বার্থে বিশেষ বিবেচনায় ৪র্থবার পুনঃতফসিলের সুযোগ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চারবারে ঋণ পরিশোধে ২০ বছরেরও বেশি সময় পাওয়া যাবে।

খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলে বড় ধরনের এই ছাড় দেওয়ার কারণ সম্পর্কে বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, কভিড-১৯ এর দীর্ঘ মেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব, বহির্বিশ্বে সাম্প্রতিক যুদ্ধাবস্থা বাড়তে থাকায় উদ্ভূত বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং নতুন ভাবে করোনার সংক্রমণ বাড়তে থাকায় আর্থিক খাতে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা ও শ্রেণিকৃত ঋণের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার স্বার্থে পুনঃতফসিলের নতুন এই নীতিমালা জারি করা হয়েছে।

ব্যাংক খাতে আন্তর্জাতিক চর্চা অনুসরণে ২০১২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল নীতিমালায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়। এতে ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ কমিয়ে আনা হয় এবং ডাউনপেমেন্ট গ্রহণের হার বাড়ানো হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, নতুন নীতিমালা অনুযায়ী ঋণ পুনঃতফসিলের কোনো নথি ব্যাংকগুলোকে আর বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠাতে হবে না। নীতিমালা মেনে ব্যাংকগুলো নিজেরাই খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করতে পারবে।

চলমান ও তলবি ঋণের ক্ষেত্রে ১ম ও  ২য় বার পুনঃতফসিলের ক্ষেত্রে ৫০ কোটি টাকার কম ঋণ সর্বোচ্চ ৫ বছর মেয়াদে পুনঃতফসিল করা যাবে। ৫০ কোটি টাকা ও তদূর্ধ্ব কিন্তু ৩০০ কোটি টাকার কম ঋণ ৬ বছর মেয়াদে পুনঃতফসিল করা যাবে। আর ৩০০ কোটি টাকা ও তদূর্ধ্ব ঋণ ৭ বছর মেয়াদে পুনঃতফসিল করা যাবে। আর তৃতীয় ও চতুর্থবার পুনঃতফসিলের ক্ষেত্রে মেয়াদি, চলমান ও তলবি ঋণে প্রতিটি ক্ষেত্রে আলোচ্য মেয়াদ হতে যথাক্রমে ১ বছর করে কম হবে। অর্থাৎ কোনো গ্রাহকের ঋণ হিসাব দ্বিতীয়বার পুনঃতফসিলের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৭ বছর হলে তৃতীয়বার পুনঃতফসিলের ক্ষেত্রে মেয়াদ হবে ৬ বছর এবং চতুর্থবার পুনঃতফসিলের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ মেয়াদ হবে ৫ বছর।

কৃষি ও ক্ষুদ্র ঋণ প্রথমবার পুনঃতফসিলের ক্ষেত্রে মেয়াদ হবে সর্বোচ্চ ৩ বছর এবং দ্বিতীয় ও তৎপরবর্তী প্রতিবার পুনঃতফসিলের ক্ষেত্রে মেয়াদ হবে ২ বছর ৬ মাস। ঋণের পরিমাণ বিবেচনায় ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে গ্রেস পিরিয়ড হবে ৬ মাস। তবে গ্রাহকের ক্ষতির পরিমাণ বিবেচনায় গ্রেস পিরিয়ডের মেয়াদ সর্বোচ্চ ১ বছর নির্ধারণ করা যাবে।

মেয়াদি ঋণে ১ম ও ২য় বার পুনঃতফসিলের ক্ষেত্রে ১০০ কোটি টাকার কম ঋণের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ডাউনপেমেন্টের পরিমাণ হবে মেয়াদোত্তীর্ণ কিস্তির ৭ শতাংশ অথবা মোট বকেয়া ঋণের সাড়ে ৪ শতাংশ। ১০০ কোটি টাকা ও তদূর্ধ্ব কিন্তু ৫০০ কোটি টাকার কম ঋণের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ডাউনপেমেন্টের পরিমাণ হবে মেয়াদোত্তীর্ণ কিস্তির ৬ শতাংশ অথবা মোট বকেয়া ঋণের সাড়ে ৩ শতাংশ। আর ৫০০ কোটি টাকা ও তদূর্ধ্ব ঋণের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ডাউনপেমেন্টের পরিমাণ হবে মেয়াদোত্তীর্ণ কিস্তির ৫ শতাংশ অথবা মোট বকেয়া ঋণের আড়াই শতাংশ।

চলমান ও তলবি ঋণে ১ম ও ২য় বার পুনঃতফসিলের ক্ষেত্রে ৫০ কোটি টাকার কম ঋণের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ডাউনপেমেন্টের পরিমাণ হবে মোট বকেয়া ঋণের ৪ শতাংশ। ৫০ কোটি টাকার বেশি কিন্তু ৩০০ কোটি টাকার কম ঋণের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ডাউনপেমেন্টের পরিমাণ হবে মোট বকেয়া ঋণের ৩ শতাংশ, তবে ২ কোটি টাকার কম নয়। আর ৩০০ কোটি টাকা ও তদূর্ধ্ব ঋণের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ডাউনপেমেন্টের পরিমাণ হবে মোট বকেয়া ঋণের আড়াই শতাংশ, তবে ৯ কোটি টাকার কম নয়।

আর ৩য় ও ৪র্থ বার পুনঃতফসিলের ক্ষেত্রে মেয়াদি, চলমান ও তলবি ঋণে প্রতিটি ক্ষেত্রে ডাউনপেমেন্ট আলোচ্য হারের চেয়ে যথাক্রমে ১ শতাংশ বেশি আদায় করতে হবে। অর্থাৎ কোনো গ্রাহকের ঋণ হিসাব ২য় বার পুনঃতফসিলের ক্ষেত্রে ডাউন পেমেন্টের হার সাড়ে ৩ শতাংশ হলে ৩য় বার পুনঃতফসিলের ক্ষেত্রে তা হবে সাড়ে ৪ শতাংশ এবং ৪র্থ বার পুনঃতফসিলের ক্ষেত্রে তা হবে সাড়ে ৫ শতাংশ।

সার্কুলারে আরও বলা হয়, এ নীতিমালার আওতায় ঋণ পুনঃতফসিলের পর ঋণ স্থিতির ন্যূনতম ৩ শতাংশ কম্প্রোমাইজ অ্যামাউন্ট নগদে আদায়সাপেক্ষে নতুন ঋণ দেওয়া যাবে। এ ছাড়া ঋণগ্রহীতার ঋণসীমাও বাড়ানো যাবে। তবে নতুন ঋণ মঞ্জুর বা ঋণসীমা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে গ্রাহক প্রকৃতই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল কিনা তা নিশ্চিত হতে হবে।

নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, নিয়মিত মেয়াদি ঋণের বিদ্যমান অবশিষ্ট মেয়াদের সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত মেয়াদ বৃদ্ধি করে তা পুনর্গঠন করা যাবে। কোনো ঋণ হিসাবকে ঋণের মেয়াদের মধ্যে শুধু একবারই এরূপ পুনর্গঠন সুবিধা দেওয়া যাবে। কোনো প্রকার ডাউনপেমেন্ট ছাড়াই মেয়াদি ঋণ পুনর্গঠন করা যাবে।

এর আগে ব্যাংক খাতে খেলাপির লাগাম টানতে ২০১৯ সালে খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলের বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়। ওই সময় মাত্র ২ শতাংশ ডাউনপেমেন্ট আদায় সাপেক্ষে এক বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ সর্বোচ্চ ১০ বছর মেয়াদে পুনঃতফসিল সুবিধা দেওয়া হয়। ওই সুবিধা ২০২০ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বহাল ছিল। ওই সুবিধার আওতায় ২০১৯ সালে দেশের ব্যাংকিং খাতে প্রায় ৫৩ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করা হয়।