মেহেদী হাসান, রাজশাহী: বাংলাদেশে প্রাণিজ প্রোটিনের অনেকাংশ আসে ডিম-মুরগি থেকে। বর্তমানে নানা সংকটের কারণে স্বল্প সময়ে অধিক মাংস উৎপাদনকারী ব্রয়লার মুরগি পালনে আগ্রহ হারাচ্ছেন পোল্ট্রি খামারিরা। তুলনায় বেশি লাভের আশায় ঝুঁকছেন দেশীর মতোই সোনালী জাতের মুরগির দিকে।
রাজশাহী হরিপুর এলাকার মুস্তাকিম বিল্লাহ দীর্ঘদিন ব্রয়লার মুরগি পালন করেছেন। গত ৬ মাস থেকে পালন করছেন সোনালী মুরগি। তাঁর খামারে কোরবানির ঈদের আগে তৈরি হয় মুরগি। ঈদের একদিন পর বিক্রি করেন তিনি। ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রাম গড় ওজনের মুরগি বিক্রি করেন ভালো দামে। ১ হাজার মুরগিতে তাঁর লাভ হয় ২০ হাজারের মতো। অথচ ব্রয়লার মুরগি
ব্রয়লার স্বল্প সময়ে অর্থ্যাৎ ১ মাসেই বিক্রি করা গেলেও কেন তিনি সোনালী পালন করতে চান। এমন প্রশ্নে এই খামারি বলেন, ব্রয়লার মুরগির বাচ্চা ৪০ টাকা পিস কিনতে হবে। এরপর খাদ্যের বর্তমান দাম অনুযায়ী ৩২০০ টাকা বস্তার খাবার, সাথে ভ্যাকসিন, পরিশ্রম বাদ দিলেও ব্রয়লার মুরগি বেচার সময় ১০০ থেকে ১১০ টাকা কেজি বিক্রি করতে হয়। তখন হিসেব করে দেখা যায় ১০ হাজার টাকা ঘাটতি। ২ মাসের মধ্যে যখন একবার লাভ হয় তখন আরেকবার ঘাটতি পড়ে। তাই আর ব্রয়লার পালনের ইচ্ছা চলে গেছে।
সোনালী মুরগিতে লাভের সম্ভাবনা কতটুকু জানতে চাইলে তিনি বলেন, সোনালী মুরগির খাবারের দাম বস্তায় ব্রয়লারের তুলনায় ২০০ থেকে আড়াইশ টাকা কম পাওয়া যায়। ১ হাজার সোনালী মুরগি পালন করতে খুববেশি খাবার দরকার হবে না। ৪০ বস্তা খাবার খাবে যদি মুরগি ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রাম ওজনে বিক্রি করে দিই। বর্তমান সোনালী মুরগির বাজার অর্থাৎ ২২০ টাকা থেকে ২৩০ টাকা দরে বিক্রি করতে পারি তাহলে কমপক্ষে ২০ হাজার টাকা লাভ আসবে। তাহলে কেন সোনালী পালন করব না!
সোনালীতে কোন ঝুঁকি আছে কিনা বিষয়ে এই অভিজ্ঞ পোল্ট্রি খামারি বলেন, সোনালী বলেন আর ব্রয়লার বলেন; পোল্ট্রি সেক্টর ঝুঁকির। যদি ১০০ মুরগি মারা যায় তাহলে আপনি ২০ হাজার টাকা লাভ করতে পারবেন না। যদি সব মুরগি গড়ে ভালো ওজন আনতে পারেন তাহলে লাভ হবে আশা করা যায়।
জানতে চাইলে রাজশাহী পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক বলেন, আমাদের এখানে ব্রয়লার মুরগির পাশাপাশি সোনালী মুরগি পালন বেশি হয়ে থাকে। পবা উপজেলার বেশিরভাগ খামার লেয়ার মুরগির। সদরের আশেপাশের খামারে সোনালী মুরগি। শহরের উপকন্ঠে আমচত্তর, কাশিয়াডাঙ্গা এলাকার বেশিরভাগ খামারে এখন সোনালী মুরগি পালন হচ্ছে।
কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ব্রয়লার মুরগির দাম উঠানামা করে বেশি। আর সোনালী মুরগির দাম বেশি কমলেও লোকসান ততটা হয় না। আরো একটা সুবিধে হলো সোনালী মুরগি ১০ দিন বেশি খামারে রাখা সম্ভব হয়। কিন্তু ব্রয়লার মুরগি ৫-৭ দিন খামারে রাখা সম্ভব হয় না। তাই সোনালী মুরগিতে বেশি আগ্রহ।
পাইকারি মুরগি বিক্রেতা শফিকুল ইসলাম বলেন, ৫ টাকা কেজিতে বাড়ছে আবার কমছে। ব্রয়লারের কেজি সর্বনিন্ম ১৬০ টাকা রাখা দরকার। তাহলে আমাদের দেশের খামারিরা লাভবান হতে পারবে। ব্রয়লার মুরগির দাম সবচেয়ে বেশি উঠানামা হয়েছে। এরআগে সচরাচর ব্রয়লারের কেজিতে ১০ টাকা বাড়লে আবার ১০ টাকা কমে যায়। বাজারে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি ১৫০ টাকা, সোনালী ২৮০ টাকা, লাল লেয়ার ২৫০ টাকা, সাদা লেয়ার ২৪০ টাকা, দেশী মুরগি ৪৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি।
বাজারের ডিম ব্যবসায়ী শামীম হোসেনবলেন, মাস খানেক ধরেই ডিমের দাম কিছুটা বেড়েছে। প্রতিহালি (৪টি) লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ৩৮ টাকায়। প্রতি একশ লাল ডিম ৯৫০ টাকা, সাদা ডিম ৮৫০ টাকা ও হাঁসের ডিম ১২৫০ থেকে ১২০০ টাকা শ হিসেবে বিক্রি করছি। যা জানতে পারছি- দাম আরো বাড়তে পারে।