Home জাতীয় তথ্য গোপন করে এলসি বন্ধ করতে হবে: অর্থমন্ত্রী

তথ্য গোপন করে এলসি বন্ধ করতে হবে: অর্থমন্ত্রী

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল

ঢাকা: দাম বেশি দেখিয়ে আমদানির প্রমাণ পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, দাম বাড়িয়ে আমদানির জন্য ঋণপত্র (এলসি) খোলা হচ্ছে, বাধা দিলে এক ব্যাংক থেকে আরেক ব্যাংকে গিয়ে তথ্য গোপন করে এলসি খুলছে।

একই সঙ্গে কৃত্রিমভাবে ডলার সংকট সৃষ্টি করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে অর্থমন্ত্রী হুঁশিয়ার করে দেন।

বুধবার সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত ও অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এছাড়া আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে ঋণের আবেদন নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, আইএমএফের শর্ত দেশের উন্নয়ন নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা সেটা দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

বিদায়ী অর্থবছরে আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। কোনো কোনো গণমাধ্যম আমদানির ক্ষেত্রে দাম বেশি দেখিয়ে অর্থ পাচারের বিষয়টি তুলে ধরে সন্দেহ প্রকাশ করে। এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞরা সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কঠোর নজরদারির তাগিদ দিয়েছেন।

এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমদানি করা প্রয়োজন, কিন্তু দাম বাড়িয়ে আমদানি করা হচ্ছে, প্রমাণ পেয়েছি। বাধা দেওয়া হলে তথ্য গোপন করে এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে গিয়ে এলসি খোলার ব্যবস্থা করা হয়। এগুলো ঠিক না, এসব বন্ধ করতে ব্যবস্থা নিতে হবে। বিভিন্নভাবে চেষ্টা করছি বন্ধ করার জন্য।’

তিনি আরও বলেন, ‘ডলারের কৃত্রিম সংকট কারা করছে, সেখানে উদ্দেশ্য কী আছে আমি জানি না। আমদানির নামে কিছু অব্যবস্থাপনা আছে, এগুলো দূর করতে নির্দেশনা দিয়েছি।’

মুস্তফা কামাল বলেন, ‘ডলারের দাম চাহিদা ও সরবরাহের ওপর নির্ভর করবে। চাহিদা বাড়লে সরবরাহ না থাকলে দাম বাড়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হবে। কেউ আটকাতে পারবে না। যেসব খাত থেকে ডলার আসার কথা, আসছে। যন্ত্রপাতি, কাঁচামাল ও অনেক খাদ্যশস্য বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এসব ব্যয় নিয়ন্ত্রণের জন্য যে পরিমাণ অর্থ দরকার সেগুলো আমাদের হাতেই আছে।’ তিনি বলেন, ‘ডলারের জোগান হলো রপ্তানি। রপ্তানির পরিমাণ বেড়েছে। রপ্তানির বিপরীতে কিছু আমদানি থাকে সেটা বাদ দিয়েও আমাদের নেট রপ্তানি বাড়ছে।’

এছাড়াও রেমিট্যান্স দেশের ডলার আসার বড় খাত উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০২০-২১ অর্থবছরে ২৫ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে ২১ বিলিয়ন ডলার এসেছে। রেমিট্যান্স ও রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা পূরণ করতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

অর্থমন্ত্রী গত সপ্তাহেই বলেছিলেন যে, আইএমএফের ঋণ প্রয়োজন নেই। কিন্তু গত রবিবার অর্থ বিভাগ থেকে আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে চিঠি দিয়ে ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ চেয়েছে বাংলাদেশ। বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে প্রথমবারের মতো সুদমুক্ত সুবিধায় ১০০ কোটি ডলার চেয়েছে। তাহলে দেশের অর্থনীতিতে কি হঠাৎ করেই কোনো চাপ সৃষ্টি হয়েছে নাকি অর্থমন্ত্রী এ বিষয়টি লুকাতে চান সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতি অনুযায়ী অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা করা হয়ে থাকে। সরকার যদি ডিমান্ড এক্সপোজ করে (চাহিদার বিষয়টি বলে দেয়) তাহলে সবাই জানতে পারবে। তখন ঋণের শর্ত ও সুদ নিয়ে দর কষাকষিতে সরকার শক্তিশালী অবস্থানে থাকবে না। সেজন্য এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান পরিষ্কার করে কিছু বলা হয়নি।’

অপর এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘৬ ও ৯ শতাংশ সুদহারের কারণে দেশের অর্থনীতি ভালো আছে। এই সুদহার বেঁধে না দিলে করোনার সময় অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হারিয়ে যেত। ফলে এটি অনেক ভালো সিদ্ধান্ত। এতে ব্যাংক খাতে স্থিতিশীল অবস্থায় আছে। বেসরকারি খাতও ভালো আছে। আইএমএফ বললেই এই সিদ্ধান্ত থেকে সরকার সরে যাবে তেমন নয়। তবে বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন দরকার হলে সরকার তা করবে।’

যেসব দেশ আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের টাকা নিচ্ছে তারাই দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে। অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এগুলো বলার জন্য অনেকেই আছে। মানে এটা মিথ্যা। এটা সঠিক কথা নয়। যদি সঠিক কথা হতো, তাহলে আইএমএফ টাকা দেবে কেন। বিশ্বব্যাংক টাকা দেবে কেন। জাইকা টাকা দেবে কেন। এরা কি ইচ্ছাকৃতভাবে টাকা দেবে। টাকা জলাঞ্জলি দেবে। এটা হতে পারে না। তারা বুঝেশুনেই টাকা দেবে।’

বিদেশি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ভালো জানিয়ে মুস্তফা কামাল বরেন, ‘আমরা তাদের জানি তারাও আমদের জানে। আমাদের প্রতি তাদের পূর্ণমাত্রায় আস্থা আছে। আমাদের প্রতি আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক, জাইকার পূর্ণ আস্থা আছে।’

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ঋণের বিষয়ে জানতে চাইলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিশ^ব্যাপী বড় ধরনের ভারসাম্যহীনতা চলছে। এ অবস্থায় আইএমএফের কাছ থেকে ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ নেওয়া যেতে পারে। তবে আইএমএফ মুদ্রানীতি, বিনিময় হার, ভর্তুকি নিয়ে যেসব শর্ত দেবে সেগুলো কীভাবে পূরণ করবে সেটা দেখার বিষয়।’