চাঁপাইনবাবগঞ্জ: এখানে পৌর এলাকা থেকে সম্প্রতি এক ভুয়া সাংবাদিককে পুলিশ প্রেপ্তার করেছে। তিনি নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিতেন। একাধিক পত্রিকার জাল পরিচয়পত্র ঝুলিয়ে রাখতেন। এছাড়াও তার মোটরসাইকেলেও লাগানো ছিল প্রেস স্টিকার। তিনি বাল্যবিয়ে দেয়া ছেলের বাবার কাছ থেকে চাঁদা দাবির অভিযোগে ধরা পড়েন। পরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানায় চাঁদাবাজি মামলায় তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
পাশের জেলা রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে গণধোলাইয়ের শিকার হন চাঁপাইনবাবগঞ্জের এক কথিত সাংবাদিক। এছাড়াও চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের নারী দিয়ে ফাঁদ পেতে ব্লাকমেইলের সময় জেলা গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন এক ভুয়া সাংবাদিক এবং দুই নারীসহ ৫ জন। দেড় মাস আগে চাঁপাইনবাবগঞ্জ র্যাব ক্যাম্প সদস্যরা পৌর এলাকার পল্লীবিদ্যুৎ মোড়ে আরেক কথিত সাংবাদিককে মদসহ গ্রেফতার করে। কথিত ওই সাংবাদিক গ্রেফতারে এলাকাবাসীর মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে।
এভাবে সাংবাদিকতার নাম ভাঙিয়ে আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে ভুয়া সাংবাদিকদের দৌরাত্ম্য। তথাকথিত আইপিটিভি (ইউটিউব), অনলাইন নিউজপোর্টাল ও যত্রতত্র ফেইসবুক লাইভ, প্রেস লেখা স্টিকার, আইডি কার্ড ঝুলিয়ে অবাধে চলাচল করছেন এসব সাংবাদিক নামধারী ব্যক্তিরা।
নারী নির্যাতন, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ব্লামেইলিংয়ের সঙ্গে জড়িতরাও সাংবাদিক পরিচয় দিচ্ছে সর্বত্র। এছাড়াও শিক্ষাগত যোগ্যতা কিংবা সংবাদ লিখতে না জানলেও নামসর্বস্ব কিছু পত্রিকার কার্ড কিনে রাতারাতি হয়ে যাচ্ছে সাংবাদিক। লাখ টাকা দিয়ে টেলিভিশন চ্যানেলের আইডি কার্ড কিনে সাংবাদিক হয়েছেন এমন খবরও শোনা যায়। যোগ্যতা যাচাই নয়, টাকা দিলেই কার্ড মিলছে। চাঁপাইনবাগঞ্জে এক টেলিভিশন চ্যানেলেরই রয়েছেন ৩ জন প্রতিনিধি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের সাংবাদিক নেতারা বলছেন, যেখানে-সেখানে অবাধে বিচরণ করছে এরকম অর্ধশত ভুয়া সাংবাদিক। চালাচ্ছে নানা অনৈতিক কর্মকান্ড। এসব নীতিহীন কর্মে বাড়ছে গুজব, অপপ্রচার। বিভ্রান্ত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এমন বাস্তবতায় তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নজরদারি। ভবিষ্যতে বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা এড়াতে এসব ভুয়া সাংবাদিকদের এখনই নিয়ন্ত্রণ করার দাবি জানান তারা
পেশাদার সাংবাদিকরা বলছেন, প্রতিদিনই এ রকম ভুয়া সাংবাদিকদের নানা বেআইনি তৎপরতার খবর পান তারা। এইসব ভুয়া সাংবাদিকদের ঠাটবাট এমন যে, তাদের সাধারণ মানুষ সহজে ধরতে পারেন না। এমনকি পেশাদার সাংবাদিকরাও তাদের দেখে মাঝেমধ্যে বিভ্রান্ত হন। তারা অনেকেই দামি গাড়িতে চলাফেরা করে। আর ক্যামেরায় জাল স্টিকার লাগিয়ে মানুষকে ভয়ভীতি দেখিয়ে চাঁদা আদায় করে। বর্তমানে জেলাজুড়ে এরকম অন্তত ৫০ জন ভুয়া সাংবাদিক আছে যারা দল বেঁধে চলাফেরা করেন। এরা থানা, বিআরটিএ, পাসপোর্ট অফিসে বিভিন্ন তদবিরে যান নিয়মিত। দল বেঁধে বিয়ের অনুষ্ঠানেও চাঁদা দাবি করেন। ঝামেলা এড়াতে বাধ্য হয়ে চাঁদা দেন সাধারণ মানুষ।
সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) চাঁপাইনবাবগঞ্জ শাখার সিনিয়র সদস্য অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম রেজা জানান, স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশকে ভুয়া সাংবাদিক চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম এবং প্রেসক্লাবগুলোকে এ কাজে সহযোগিতা করতে হবে। নয়তো সাংবাদিকদের প্রতি মানুষের আস্থা কমে যাবে। পেশাদার সাংবাদিকদের আরও বেশি বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হবে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দীন বলেন, জেলার বিভিন্ন স্থানে সাংবাদিকতার নামে চাঁদাবাজি ও নানা ধরনের অনৈতিক কর্মকান্ড চালাচ্ছে কার্ডধারীরা। এ ধরনের কথিত সাংবাদিকরা বিভিন্ন এলাকায় বাসাবাড়ি, মিলকারখানা, বেকারিসহ নানা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রচার কিংবা ভ্রাম্যমাণ আদালতের ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজি করছে। তারা নিজেরাই বিভিন্ন স্থানে গড়েছে প্রেসক্লাবসহ নামে-বেনামে সংগঠন। অনেকসময় দেখা যায়, মূলধারার কিছু সাংবাদিক, প্রশাসন, থানা পুলিশ এবং স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তির সঙ্গে সখ্য রয়েছে স্বঘোষিত সাংবাদিকদের। অপকর্মে জড়িতদের দমনে কঠোর পদক্ষেপ নেবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, এমন প্রত্যাশা মূলধারার সাংবাদিকদের।
এ বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আতোয়ার রহমান বলেন, অপরাধ করলে যে কারো বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে কারও পরিচয় বিবেচনার কোন সুযোগ নেই। চাঁদাবাজি ও ব্লাকমেইলের বিষয়ে অভিযোগের ক্ষেত্রে সরাসরি আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়।
-সূত্র: জনকণ্ঠ