বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক
ইতিহাস এভাবেই রচিত হয়। যেন রূপকথার জয়। যে দেশটি আর্থিক সংকটে জেরবার। যে দেশের প্রশাসন বলে কিছু নেই। জনমানসে দেশের রাষ্ট্রনায়কদের সম্পর্কে তীব্র বিদ্বেষ, তারাই এশিয়া সেরা ক্রিকেটে। শ্রীলঙ্কাই চ্যাম্পিয়ন এশিয়া কাপে । ফাইনালে পাকিস্তানকে ২৩ রানে হারিয়ে নতুন ভোর লঙ্কায়। ৮ বছর পরে ফের তারা এশিয়া সেরা।
পাক দলের ব্যাটিংকে সাধারণ স্তরে নামিয়ে আনলেন শ্রীলঙ্কার বোলাররা। বিশেষ করে প্রমোদ মদুশনের চার উইকেট ও হাসারাঙ্গার তিন উইকেট মেরুদন্ড ভেঙে দিয়েছে পাক ব্যাটিংয়ের। শ্রীলঙ্কার ১৭০ রানের বিনিময়ে বিপক্ষ দল করতে পেরেছে ১৪৭ রান। সব থেকে বড় কথা, যে দলটি আফগানিস্তানের বিপক্ষে হার দিয়ে অভিযান শুরু করেছিল, তারা টানা ৫ ম্যাচ জিতে কামাল করে দেবে, কেই বা ভেবেছিল। যদিও ফাইনালের আগের সাক্ষাতেও শ্রীলঙ্কা জিতে বার্তা দিয়ে রেখেছিল পাক দলকে।
এদিন টস জিতে পাকিস্তান প্রথমে শ্রীলঙ্কাকে ব্যাটিং করতে পাঠায়। কুশল মেন্ডিসের উইকেট শুরুতেই ছিটকে দেন নাসিম শাহ। শ্রীলঙ্কার রান তখন মাত্র ২, অন্য ওপেনার নিসাঙ্কাও (৮) বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। মাত্র ২৩ রানেই শ্রীলঙ্কার দুই ওপেনার ফিরে যান ডাগ আউটে।
নিসাঙ্কাকে ফেরানোর পরে হ্যারিস রাউফ ফের আঘাত হানেন শ্রীলঙ্কার ইনিংসে। দলীয় রান যখন ৩৬, তখন হ্যারিস রাউফ ফিরিয়ে দেন গুণতিলককে (১)। একটা সময় শ্রীলঙ্কার ৫ উইকেট পড়ে যায় ৫৮ রানে। সেই অবস্থা থেকে দলকে টেনে তুলেছেন ভানুকা রাজাপাকসে।
ধনঞ্জয় ডি সিলভা ২৮ রানে আউট হন। তবে শ্রীলঙ্কাকে লড়াইয়ে ফেরান রাজাপাকসে ও হাসারাঙ্গা। ভানুকা শেষপর্যন্ত অপরাজিত থেকে যান ৭১ রানে, মাত্র ৪৫ বলে দুরন্ত ইনিংস খেলেছেন।
অন্যদিকে হাসারাঙ্গা ২১ বলে লড়াকু ৩৬ রান করেন। অধিনায়ক শানাকা (২) ব্যর্থ হন। শেষের দিকে করুণারত্নে অপরাজিত থেকে যান ১৪ রানে।
পাক দলের সমস্যা হয়ে গিয়েছে অধিনায়ক বাবর আজম রান না পাওয়ায়। এমনকি ফখর জামানও শূন্য রানে ফিরে যাওয়ায়। দলের অন্য ওপেনার রিজওয়ান ৫৫ রানে লড়ে গেলেও বাকিদের সহায়তা না পাওয়ায় এই হার। পাক অহঙ্কারকে চূর্ণ করে শ্রীলঙ্কার বাজিমাত দেশের সংকটের মধ্যেও।
ফাইনালে রবিবার বড় ঘটনা ঘটল পাক ব্যাটিং ইনিংসের সময়। শিরোপো জয়ের জন্য ১৭১ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই শ্রীলঙ্কান বোলার দিলশান মধুশঙ্কার বিরল বোলিং দেখল সারা বিশ্ব। তিনি টানা ৫টি ওয়াইড এবং নো বল দিলেন।
শুরুতেই পেসার মধুশঙ্কার হাতে বল তুলে দেন অধিনায়ক দাসুন সনকা। প্রথম বলটিই নো দিলেন। ওভারস্টেপিং ছিল সেটি। ফলে ফ্রি হিট পেয়ে যায় পাকিস্তান।
পরের বল ফ্রি-হিট বাঁচাতে গিয়ে ওয়াইড দিয়ে বসেন মধুশঙ্কা। দ্বিতীয় বল আবারও ওয়াইড দিলেন তিনি। তৃতীয় বলটি তো ওয়াইড দিলেনই, বলটি লেগ স্ট্যাম্পের এত বাইরে ছিল যে, উইকেটরক্ষক কুশল মেন্ডিস ঝাঁপিয়ে পড়েও বল রক্ষা করতে পারলেন না। হল বাউন্ডারি। এই বল থেকে ৫ রান যোগ হয় পাকিস্তানের স্কোর বোর্ডে।
তাতেও শ্রীলঙ্কার জয় পাওয়া আটকায়নি। তাদের বোলাররা আসল দিনে নিজেদের সেরা বোলিং করে গেলেন। পাশাপাশি টস হারলেই ম্যাচ হার, এটিও ভুল প্রমাণ করলেন সিংহলিরা।