বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক
চিনের পরে করেনাভাইরাসে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা ইতালিতে। সেখানে আক্রান্ত প্রায় ২৮ হাজার। মারা গেছে ২১৫৮ জন। প্রতি মুহূর্তে নতুন নতুন আক্রান্ত হচ্ছে এবং মারা যাচ্ছে।
‘কোভিড ১৯ অ্যান্ড ইতালি’ নামের একটি মেডিক্যাল জার্নালে আশঙ্কা করা হয়েছে, আর দুয়েক দিনের মধ্যেই মৃতের সংখ্যা ছোঁবে প্রায় ১০ হাজার, আক্রান্ত হবেন ৩০ হাজার! এই পরিস্থিতিতে চিকিৎসকদের বেছে নিতে হবে, কার প্রাণ বাঁচানো জরুরি এবং কার নয়। এমন পরিস্থিতিতে ইতিমধ্যেই এমনই এক অসহায় অবস্থায় পড়েছেন সে দেশের চিকিৎসকরা। কারণ চিকিৎসা ব্যবস্থার অপ্রতুলতা এবং পরিকাঠামোর অভাবে হাত-পা বাঁধা পড়েছে তাঁদের।
ইতালিতে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রথম সারিতে থাকা চিকিৎসকরা বলছেন, এত রোগীর ভিড় বাড়ছে রোজ, যে কাদের তাঁরা চিকিৎসা দিয়ে বাঁচানোর চেষ্টা করবেন এবং কাদের বাধ্য হয়ে ফেলে রাখবেন, তা তাঁদের বেছে নিতে হচ্ছে। যে কোনও চিকিৎসকের জন্যই এ এক অসহায় অবস্থা।
অথচ এমনই দ্রুততায় অসুখ ছড়াচ্ছে, যে সামাল দেওয়াই কার্যত অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শুধু তাই নয়। সূত্রের খবর, এই বিপুল পরিমাণ রোগীদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পর্যাপ্ত আইসোলেশন ইউনিট তৈরি করে এত সংখ্যক বেডের ব্যবস্থা করতেই রীতিমতো যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
চিকিৎসকদের এমন মনোভাব অনেকের কাছে সমালোচনাযোগ্য মনে হলেও, এই অবস্থা এড়ানোর আর উপায় দেখছেন না চিকিৎসকরা। দেশের মানুষের স্বার্থেই, করোনাভাইরাসকে পরাস্ত করার স্বার্থেই তাঁদের এই ‘বাছাবাছি’ করতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
উত্তর ইতালির লম্বার্ডিয়া অঞ্চলের বার্গামো শহরের একটি হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটের প্রধান চিকিৎসক, ডক্টর ক্রিশ্চিয়ান সালারোলি তাঁর অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক একটি সংবাদমাধ্যমে। সেখানেই এই পরিস্থিতির কথা এবং পেশাগত অসহায়তার কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেছেন, “আমাদের এখন অদ্ভুত এক অবস্থা।
নীতি বলছে, বয়স-লিঙ্গ না দেখে প্রতিটি মানুষকে সেরা চিকিৎসা-পরিষেবা দিতে হবে আমাদের। অথচ বাস্তব পরিস্থিতি বলছে, নীতি থেকে সরতে হবে আমাদের। ৮০ থেকে ৯৫ বছর বয়সের ব্যক্তিরা যদি অসুস্থ হয়ে আসেন, তাঁরা যদি ভীষণ শ্বাসকষ্টেও ভোগেন তবে চিকিৎসার জন্য এগিয়ে যেতে পারছি না আমরা। কারণ অল্পবয়সি অসংখ্য মানুষ একই সঙ্গে এসে দাঁড়িয়েছে চিকিৎসার জন্য। এটা শুনতে খুব খারাপ লাগছে। বলতে পারি, ভয়াবহ লাগছে। কিন্তু এটাই এখন সত্যি। শত আক্ষেপের পরেও আমরা এই অবস্থা থেকে বেরোতে পারছি না।”
তাহলে কারা চিকিৎসার সুযোগ পাবেন বেশি? কারণ এই অবস্থায় ‘ফার্স্ট কাম ফার্স্ট সার্ভড’ অর্থাৎ আগে এলে আগে পরিষেবা পাওয়ারও সুযোগ নেই। সব দিক বিবেচনা করে চিকিৎসক ও নার্সদের এক কঠিন বাছাই প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে নিয়ম মেনে। বলা হয়েছে, ইনটেনসিভ চিকিৎসায় যাদের সেরে ওঠার সম্ভাবনা বেশি, সেই রোগীদেরই অগ্রাধিকার দিতে হবে। তাঁদের মধ্যে আবার বয়সের ভিত্তিতে যাঁরা যুব, তাঁরা আরও অগ্রাধিকার পাবেন।
রাষ্ট্রপুঞ্জের তথ্য বলছে, প্রবীণ জনগোষ্ঠীর সংখ্যার দিক থেকে জাপানের পরেই বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ইতালি। এমনিতেই মারণ করোনাভাইরাসটির প্রবণতা রয়েছে বয়স্ক মানুষদের সহজে কাবু করে ফেলার। এখন ইতালির বড় সংখ্যার বয়স্ক জনগোষ্ঠীর মধ্যে যদি করোনাভাইরাস সংক্রমিত হতে শুরু করে গণহারে, তাহলে তাঁরা মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়বেন।