Home খেলাধুলা যেন আমার একটা অংশ চলে গেল- ফেডেরার বিদায়ে বিষণ্ণ রাফা

যেন আমার একটা অংশ চলে গেল- ফেডেরার বিদায়ে বিষণ্ণ রাফা

ফেডেরার বিদায়ে বিষণ্ণ রাফা

বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক

শুক্রবার গভীর রাতে সুইজারল্যান্ডের টেনিস তারকা রজার ফেডেরার ২০২২ লেভার কাপ-এ নিজের ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ খেলে ফেললেন। কয়েকদিন আগে এই টুর্নামেন্টের পর অবসরের ঘোষণা করেছিলেন এই তারকা খেলোয়াড়। তিনি লেভার কাপের শেষ ম্যাচটি ডাবলসে খেলেছিলেন। যেখানে ফেডেরার সঙ্গী ছিলেন স্পেনের তারকা খেলোয়াড় রাফায়েল নাদাল। তবে, তাঁরা এই ম্যাচে ৪-৬, ৭-৬(২), ১১-৯ ফলে হারে। ম্যাচের পর সতীর্থ খেলোয়াড়দের জড়িয়ে ধরে নিজের মনের কথা বলতে গিয়ে ভীষণ আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন ফেডেরার। এই ঘটনার বহু ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হচ্ছে।

৪১ বছর বয়সী ফেডেরার, যিনি কিছু সময়ের জন্য চোটের সঙ্গে লড়াই করেছিলেন, ২০২১ সালে উইম্বলডনে তাঁর শেষ টুর্নামেন্ট খেলেছিলেন। ফেডেরার তাঁর ক্যারিয়ারে মোট ২০টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম শিরোপা জিতেছেন এবং রাফায়েল নাদাল এবং নোভাক জকোভিচের পরে সর্বাধিক গ্র্যান্ড স্লাম বিজয়ীদের তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছেন। নাদালের ২২টি এবং জকোভিচের ২১টি শিরোপা রয়েছে। ২০১৮ সালে অস্ট্রেলিয়া ওপেনে রজার তাঁর শেষ গ্র্যান্ড স্লাম জিতেছিলেন, শিরোপা লড়াইয়ে ক্রোয়েশিয়ার মারিন সিলিককে পরাজিত করেছিলেন।

প্রায় চার বছর পরে টেনিসকে বিদায় জানালেন রজার ফেডেরার। ২৪ বছর ধরে টেনিস বিশ্বে তার মহানুভবতা দেখানোর পর হারের সঙ্গে টেনিসকে বিদায় জানানোটা ফেডেরার পক্ষে কঠিন ছিল। কিন্তু তিনি ভেজা চোখে তা গ্রহণ করেছিলেন। শেষ ম্যাচে ফেডেরারকে খুব আবেগপ্রবণ দেখাচ্ছিল। ম্যাচের পর তিনি সাত মিনিটের বিদায়ী ভাষণ দেন এবং সেখানে তিনি কাঁদতে থাকেন।

রাফায়েল নাদাল বলেন, ‘এই মুহূর্তটা দারুণ ছিল। যখন রজার ট্যুরের বাইরে চলে যাচ্ছিলেন তখন আমার জীবন থেকে গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় যেন চলে যাচ্ছে। কারণ সমস্ত মুহূর্তে তিনি আমার সামনে অথবা আমার পাশে ছিলেন। তাই এমন মুহূর্তে তাঁকে এবং তাঁর পরিবারকে দেখে একটু আবেগে ভেসে গিয়েছি। এই বিষয়টা ব্যাখ্যা করা সত্যি খুব কঠিন।’

রাফায়েল নাদালও এই ম্যাচে ফেডেরারের সঙ্গে খেলছিলেন। ফেডেরারকে জয় দিয়ে বিদায় জানানোর জন্য তিনি সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু সফল হননি। শেষে যখন ফেডেরার কথা বলছিলেন, রাফায়েল নাদালও চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি। পুরো ক্যারিয়ারে ফেডেরারকে চ্যালেঞ্জ করা নাদাল এই ম্যাচে তাঁর সঙ্গে জুটি বেঁধে খেলছিলেন। একই সময়ে, এই যুগের তৃতীয় সেরা খেলোয়াড় নোভাক জকোভিচও এই ম্যাচ দেখতে এসেছিলেন। ফেডেরারের বিদায়ে তিনিও চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি।

নিজের শেষ ম্যাচের দিন ফেডেরার বলেন, ‘কোথাও কোথাও আমরা সবাই এই মুহূর্তের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। এটি একটি দুর্দান্ত দিন ছিল। আমি খুশি, দুঃখি নই। এখানে থাকাটা গর্বের বিষয়। শেষবার আমি আমার জুতার ফিতা বেঁধে খুব খুশি। এখানে আমার সকলের জন্য শেষ সময় ছিল। আমি টেনশন করিনি। যাইহোক, আমি অনুভব করছিলাম যে কিছু একটা ঘটতে চলেছে, কিন্তু ম্যাচটি দুর্দান্ত ছিল। নাদাল এবং সকলের সঙ্গে খেলাটা চমৎকার ছিল। বিস্ময়কর মানুষ এবং কিংবদন্তিরা এখানে এসেছেন। আপনাদের সকলকে ধন্যবাদ।’

ফেডেরার নিজের স্ত্রীর সম্পর্কে বলেছেন, ‘তিনি আমাকে অনেক আগেই থামাতে পারতেন, কিন্তু তিনি করেননি। তিনি আমাকে চালিয়ে যেতে এবং খেলতে দেন। এটা চমৎকার। ধন্যবাদ।’ ২৪ বছরের কেরিয়ারের শেষদিনে নিজের আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেন না ফেডেরার। তিনি বললেন, ‘এই কান্না আনন্দের। আমি আনন্দে কাঁদছি।’ ম্যাচ শেষ করে সঞ্চালকের সঙ্গে কথা বলতে বলতে অঝোরে কাঁদলেন টেনিসের রাজা। কখনও স্ত্রী মির্কাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদলেন, কখনও সন্তানদের কাছে টেনে নিয়ে কাঁদলেন। কখনও সতীর্থদের আলিঙ্গন করে তাঁকে কাঁদতে দেখা গেল। ফেডেরার সঙ্গে কাঁদল গোটা টেনিস বিশ্ব। কোর্টে যে আর রজার ফেডেরারকে দেখা যাবে না।