Home First Lead তবুও চলছে ‘বকশিশ সিন্ডিকেট’ চক্রের তৎপরতা

তবুও চলছে ‘বকশিশ সিন্ডিকেট’ চক্রের তৎপরতা

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি

রংপুর: রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অভিযুক্ত ১৬ জন কর্মচারীকে বদলি করার পরও থেমে নেই ‘বকশিশ সিন্ডিকেট’ চক্রের তৎপরতা।

জানা যায়, হাসপাতালে আগত রোগী ও স্বজনদের জিম্মি করে বকশিশের নামে ছয়-সাত গুণ বেশি ভর্তি ফি আদায় এবং মোটা অঙ্কের বকশিশের বিনিময়ে ট্রলিতে রোগীদের বহন করে থাকে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের একটি সিন্ডিকেট। এমনকি লাশ নামাতেও জোর করে টাকা আদায়সহ নানান অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগে গত মঙ্গলবার রাতে হাসপাতালটির ১৬ কর্মচারীকে স্ট্যান্ড রিলিজ করে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে বদলির আদেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তবে এই আদেশ স্থগিতের জন্য সিন্ডিকেট চক্রটি বিভিন্নভাবে তদবির অব্যাহত রেখেছে। আর অন্যদিকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডে গতকাল বৃহস্পতিবারও ‘ট্রলি বাণিজ্য’সহ বিভিন্ন অপকর্ম অব্যাহত ছিল বলে অভিযোগ উঠেছে।

গত ১৭ সেপ্টেম্বর এ হাসপাতালেরই চিকিৎসক রাশেদুল আমিনের মাকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে নিলে ভর্তি ফি ২০০ ও ট্রলি ফি ২০০ টাকা দাবি করেন কর্মচারী নেতারা। এ ঘটনায় ১৯ সেপ্টেম্বর ঐ চিকিৎসক হাসপাতালের পরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। পরে চুক্তিভিত্তিক তিন কর্মচারীকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। চিকিৎসকের মায়ের কাছে টাকা চাওয়া নিয়ে অন্য চিকিৎসকের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এ ঘটনার প্রতিবাদে ২৬ সেপ্টেম্বর হাসপাতালের সামনে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেন চিকিৎসকরা। চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের ঐ সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তারা ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেন। ঐ সময়ের মধ্যে চতুর্থ শ্রেণির ১৬ কর্মচারীকে বদলির আদেশ দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে আরো ৭৫ জনকে বদলির প্রক্রিয়া চলছে বলে জানা গেছে। ১৬ কর্মচারীকে বদলির আদেশ দেওয়ার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হাসপাতাল চত্বরে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বদলির আদেশ পাওয়া কর্মচারী ও তাদের গডফাদাররা গা ঢাকা দিয়েছে। সিন্ডিকেটের মূল হোতারা কর্মচারী ইউনিয়নের নেতা। তাদের কয়েক জনের বিরুদ্ধে একাধিক হত্যা মামলাও রয়েছে। এদের কয়েক জন অনেক আগে থেকে সাসপেনশনেও রয়েছে। সাধারণ কর্মচারীদের অভিযোগ, হাসপাতালে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নেওয়া হলে সেখানকার পরিস্থিতি আরো খারাপ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বৃহস্পতিবার বিকালে হাসপাতালের জরুরি বিভাগসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঘুরে দেখা গেছে, ১৬ কর্মচারীর একযোগে বদলির আদেশ হওয়ার পরেও দালালের দৌরাত্ম্য কমেনি। বিশেষ করে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের কথিত নেতার ক্যাডাররা হাসপাতালের জরুরি বিভাগে রোগী ভর্তি বাবদ ২৫ টাকার স্থলে থেকে দেড়শ টাকা পর্যন্ত আদায় করছে। তবে এখন কিছুটা রাখ-ঢাক করে টাকা নেওয়া হয়েছে। ‘ট্রলি বাণিজ্য’ও অব্যাহত ছিল।

নীলফামারী থেকে আসা অসুস্থ মমতাজ মিয়াকে অ্যাম্বুলেন্স থেকে নামানোর পরপরই দুই কর্মচারী তাকে ট্রলিতে তুলে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিতে দেড়শ টাকা দাবি করে। রোগীর স্বজনরা টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় তারা আধাঘণ্টা ঐ রোগীকে ট্রলিতেই শুইয়ে রাখে। পরে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে গেলে তারা সটকে পড়ে। পরে স্বজনরাই রোগীকে বহন করে জরুরি বিভাগে নিয়ে যান। একইভাবে ট্রলিবাহকদের হাতে আরো বেশ কিছু রোগীকে হেনস্তা হতে দেখা গেল। আসমা বেগম নামে ট্রলিবাহকদের একজনের কাছে টাকা দাবি করার বিষয়ে জানতে চাইলে সে বলে, ‘রোগীর লোকজন এমনিতেই বকশিশ দেয়, বলতে হয় না।’

রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. শরীফুল হাসান জানান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ১৬ জনকে একযোগে বদলির আদেশ দিয়েছে। তাদের সাত দিন সময় দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট স্থানে যোগদান করার জন্য। বদলির আদেশ বাতিল হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তিনি গণমাধ্যম কর্মীদের সহযোগিতা কামনা করে বলেন, ‘এক মাস হলো পরিচালক হিসেবে যোগদান করেছি। এখানে সকল ক্ষেত্রেই অনিয়ম ও দুর্নীতি। চেইন অব কমান্ড নেই। সময় দেন সব পরিষ্কার করে ফেলব।’