বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক
১৯৫৪ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত আমেরিকান কথাশিল্পী আর্নেস্ট মিলার হেমিংওয়ে তাঁর গল্প-উপন্যাসে বারংবার মানুষের অপরাজেয় সংগ্রামের কথা বলেছেন। ‘দ্য ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্য সি’ উপন্যাসে তিনি বলেছিলেন, হেরে যাওয়ার জন্য মানুষের জন্ম হয়নি। মানুষ লড়াই করতে করতে ধ্বংস হয়ে যাবে, কিন্তু কখনওই পরাজয়কে মেনে নেবে না:
‘But man is not made for defeat… A man can be destroyed but not defeated.’
প্রথম মহাযুদ্ধে তিনি অ্যাম্বুলেন্স চালকের কাজ করেছেন। ধ্বংসস্তূপ থেকে মানুষের ছিন্নভিন্ন মৃতদেহ উদ্ধার করেছেন। নিজেও আহত হয়েছেন একাধিকবার। কিন্তু কখনও মৃত্যু কিংবা আত্মহত্যার কথা ভাবেননি। তাঁর ‘দ্য ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্য সি’ উপন্যাসের দুঃসাহসী বৃদ্ধ জেলে সান্তিয়াগোকেও দেখি ১৮ ফুট লম্বা এক সুবিশাল সামুদ্রিক মাছ শিকার করবে বলে মাঝসমুদ্রে সাক্ষাৎ মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করতে। ব্যক্তিগত জীবনে হেমিংওয়ে নিজেও ছিলেন ডাকাবুকো স্বভাবের মানুষ (Ernest Hemingway)। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, তিনি ছিলেন লম্বা, সুদর্শন, বলিষ্ঠ, চওড়া কাঁধ, বাদামি চোখ, গোলাপি গাল, বর্গাকৃতির চোয়াল ও সুমিষ্ট কণ্ঠের যুবক।
পুলিৎজার পুরস্কার (১৯৫৩) এবং নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর সারা বিশ্বে তাঁর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। মানবপ্রেমিক হেমিংওয়ে (Ernest Hemingway) নোবেল পুরস্কারের সমস্ত অর্থ কিউবার একটি দাতব্য সংস্থায় দান করে দেন। এই কিউবাতে বসেই ১৯৫১ সালে তিনি ‘দ্য ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্য সি’ উপন্যাসটির পাণ্ডুলিপি রচনা করেছিলেন। পৃথিবীর প্রায় সমস্ত ভাষায় অনুবাদ করা হয় তাঁর বই।
অথচ খ্যাতির শীর্ষে থাকা এই মানুষটিই একসময় আক্রান্ত হয়েছিলেন চরম বিষাদে। অবসাদে জর্জরিত হয়ে একদিন তিনি আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। আফ্রিকায় পরপর দুটি বিমান দুর্ঘটনায় তিনি মারাত্মকভাবে আহত হন। এর ফলে অসহ্য শারীরিক যন্ত্রণা তাঁর মনের অবসাদ আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল। যিনি আজীবন মানুষকে কঠিন সংগ্রামের মন্ত্র শিখিয়েছেন, সেই তিনিই কি না শেষ পর্যন্ত বেছে নিলেন স্বেচ্ছামৃত্যুর পথ!
১৯৬১ সালে ৬২ বছর বয়সে নিজের মাথায় গুলি করে আত্মহত্যা করেন নোবেলজয়ী এই লেখক । প্রথমে বেসমেন্টের স্টোর রুমের তালা খোলেন এবং সেখান থেকে তাঁর বন্দুক বের করেন। তারপর বাড়ির সামনের প্রবেশপথ দিয়ে চলে যান উপরতলায়। সেখানে গিয়ে বন্দুকের নল ঢুকিয়ে দেন নিজের মুখের মধ্যে, তারপর ট্রিগারে চাপ দিয়ে উড়িয়ে দেন নিজের মাথার খুলি। এভাবেই নিজেকে শেষ করে দেন কিংবদন্তি লেখক আর্নেস্ট হেমিংওয়ে। অথচ তাঁর বই, তাঁর সাহিত্য কখনোই মানুষের পরাজয়ের কথা স্বীকার করেনি। খ্যাতির সর্বোচ্চ শিখর স্পর্শ করলেও এই সাহিত্যিকের সমস্ত জীবন অস্থিরতার মধ্যেই অতিবাহিত হয়েছিল। তাঁর এই বীভৎস মৃত্যুর পর সমগ্র বিশ্বসাহিত্যের পাঠক শোকস্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। গবেষকেরা জানিয়েছেন, সম্ভবত তাঁর পিতার জিনঘটিত অসুখ হেমোক্রোমাটোসিস তাঁর মধ্যেও সংক্রমিত হয়েছিল। এই অসুখ দেহের রাসায়নিক প্রক্রিয়াকে অক্ষম করে মানুষকে মানসিক ও শারীরিকভাবে দুর্বল করে দেয়।