বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
ঢাকা: ‘আহমদুল কবির (মনু মিয়া) ছিলেন এক ক্ষণজন্মা মানুষ, নির্লোভ ত্যাগী রাজনীতিবিদ, নন্দিত মানবপ্রেমিক। তিনি ছিলেন ব্রিটিশ, পাকিস্তান ও স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনীতি ও সাংবাদিকতার প্রতিভাদীপ্ত ব্যক্তিত্ব। তার দর্শন ছিল সাধারণ মানুষের অধিকার আদায়ে কাজ করা।’
গতকাল সংবাদের সাবেক প্রধান সম্পাদক, দেশের প্রগতিশীল ধারার রাজনীতির পুরোধা ব্যক্তিত্ব ও সাবেক সংসদ সদস্য আহমদুল কবিরের (মনু মিয়া) ১৯তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণসভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ঘোড়াশালের মিয়াবাড়িতে এ স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়।
আহমদুল কবিরের বর্ণাঢ্য জীবন নিয়ে আলোচনা ছাড়াও তার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ঘোড়াশালের গ্রামের বাড়িতে তার কবরে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন আপামর জনতা। এছাড়া দোয়া, মিলাদ, কোরআন খতম, কাঙ্গালি ভোজ, কৃতী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদানসহ নানা আয়োজনে আহমদুল কবিরের মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয়েছে।
দিনটি শুরু হয় মরহুমের নিজবাড়ি ঘোড়াশালের মিয়াবাড়িতে সকাল ৬টায় পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে। এরপরই গরিবদের মধ্যে উন্নত খাবার বিতরণ করা হয়।
সকাল ৯টা বাজতেই সমাজের সর্বস্তরের লোকজন আসতে শুরু করে বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি খচিত ফুলের তোড়া নিয়ে। এতে মরহুমের সমাধিস্থল হয়ে উঠে লোকে লোকারণ্য।
সমাধিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করে আহমুদুল কবির মনু মিয়া স্মৃতি সংসদ, সংবাদ পরিবার, পলাশ উপজেলা প্রেসক্লাব, জিনারদী ও চরসিন্দুর আহমুদুল কবির মনু মিয়া স্মৃতি সংসদ, মেসার্স ইসলাম ট্রান্সপোর্ট অ্যান্ড মেসার্স ইসলাম ট্রেডার্স, পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের জনগণসহ পলাশ ঘোড়াশালের সর্বসাধারণ। এ সময় পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন মনু মিয়া স্মৃতি সংসদের সাধারণ সম্পাদক কার্তিক চ্যাটার্জী, পাঁচদোনা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ মনির হোসেন প্রধান, বেনু মাস্টার, জিনারদী ইউপি আওয়ামী লীগ নেতা মো. শাহজাহান, আওয়ামী লীগ নেতা আল আমীন, ঘোড়াশাল পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নুরুল ইসলাম, পলাশ উপজেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আশাদুল্লাহর নেতৃত্বে আক্তারুজ্জামন, সারোয়ার রুবেল, শফিকুল ইসলাম, সংবাদের পলাশ প্রতিনিধি এস কে দেবনাথ সমীর, বিল্লাল হোসেন, সিয়াম সারকার, জিনারদীর এমএ বাশার, সমাজ সেবক নাজমুল হোসেনসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা।
এছাড়া সংবাদ পরিবারের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন সংবাদের চিফ রিপোর্টার সালাম জুবায়ের, ইউনিট চিফ ও প্রধান সম্পাদনা সহকারী খোরশেদ আলম, কমার্শিয়াল ম্যানেজার মাহবুব আলম, হিসাব বিভাগের কর্মকর্তা বিধান দত্ত, ফটো জার্নালিস্ট সোহরাব আলম, স্টাফ রিপোর্টার মোস্তাফিজুর রহমান, আইটি বিভাগের নিজাম উদ্দিন, বিজ্ঞাপন বিভাগের আলমগীর খান, সার্কুলেশন বিভাগের শওকত আলী সাজু, সাইফ আহমেদ, আবদুল কাদের, অফিস সহকারী আরিফ হোসেন প্রমুখ।
পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে ঘোড়াশাল মিয়াবাড়ির সামনে মাঠে শুরু হয় আহমুদুল কবির (মনু মিয়া) স্মরণসভা। পাঁচদোনা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ মো. মনির হোসেনের সভাপতিত্বে ও কাউন্সিলর নুরুল ইসলামের সঞ্চালনায় স্মরণসভায় বক্তৃতা করেন কার্তিক চ্যাটার্জী, ঘোড়াশাল পৌরসভার সাবেক পৌর প্রশাসক ইলিয়াস হোসেন, ডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ সৈয়দ ইকবাল, মুক্তিযোদ্ধা ফরহাদ হোসেন, আলহাজ একেএম জাকির হোসেন বেনু মাস্টার, আওয়ামী লীগ নেতা আল আমীন, মো. শাহজাহান, ডা. বিজয় মল্লিক, শ্রমিক লীগ নেতা আলম খন্দকার প্রমুখ।
সভায় বক্তারা বলেন, বস্তুনিষ্ঠ খবর প্রকাশের মধ্যদিয়ে অসাম্প্রদায়িক, প্রগতিশীল ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার এক নতুন ধারা সৃষ্টি করেন আহমুদুল কবির (মনু মিয়া)। তদানীন্তন পাকিস্তানের রাজনীতিতে অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল যে ধারা এদেশে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বিপুল জনগোষ্ঠীর রাজনৈতিক চেতনাকে নাড়া দিয়েছিল, সেই ধারার পুরোধা ব্যক্তিত্ব ছিলেন আহমদুল কবির।
বক্তারা আরও বলেন, আহমদুল কবিরের হাত ধরেই পলাশ নরসিংদীর সুস্থ রাজনীতির ধারা শুরু হয়। তিনি ছিলেন রাজনীতিবিদদের গুরু। নরসিংদী, পলাশ, ঘোড়াশালের মানুষ কোনদিনই কবির সাহেবের নাম ভুলবে না।
আহমদুল কবিরের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এদিন বাদ জোহর এলাকার সবগুলো মসজিদে মরহুমের আত্মার শান্তি কামনায় দোয়া মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। দুপুরে ৪টি এতিমখানার এতিমদের উন্নত খাবার ও আগত মেহমানদের দুপুরে খাবার পরিবেশেন করা হয়। এছাড়া বাদ আসর ৭নং ওয়ার্ডের ১৮টি মসজিদে মরহুমের আত্মার শান্তি ও পরিবারের সবার শান্তি কামনায় দোয়া মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
১৯২৩ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন ঢাকা জেলার কালীগঞ্জ থানার ঘোড়াশাল মিয়া বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন আহমদুল কবির ( মনু মিয়া)। ২০০৩ সালের ২৪ নভেম্বর কলকাতার একটি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি নরসিংদী-২ আসন থেকে ১৯৭৯ ও ১৯৮৬ সালে সংসদ-সদস্য (এমপি) নির্বাচিত হন। ১৯৫৪ সালে সংবাদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব নেন। ১৯৭২ সালে সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২০০১ সালে প্রধান সম্পাদক হন এবং আমৃত্যু তিনি এ দায়িত্ব পালন করে গেছেন।