বিগত সময়ে নৌকায় ভোট দেওয়ার জন্য রাজশাহীবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়তে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ভোট প্রত্যাশা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আগামীতে নির্বাচন আসবে, এই বছরের শেষে বা আগামী বছরের শুরুতে সেখানে আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দেবেন কি-না ওয়াদা চাই।’ এ সময় রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা মাঠে সমবেত জনতা দুই হাত তুলে সমস্বরে চিৎকার করে প্রধানমন্ত্রীর কথায় সায় দেন।
তিনি সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ যেন গড়তে পারি সেজন্যই আপনারা সকলে নৌকায় ভোট দেবেন।’
রাজশাহী সফরে গিয়ে রোববার পাঁচ বছর পর আওয়ামী লীগের জনসভায় বক্তব্য দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বেলা ৩টার দিকে আওয়ামী লীগ সভাপতি সারদা পুলিশ একাডেমি থেকে হেলিকপ্টারে করে নগরীর জেলখানা প্রশিক্ষণ মাঠে নেমে গাড়িতে করে সভামঞ্চে আসেন। তখন ময়দান ভর্তি জনতা হাততালি ও গগনবিদারি স্লোগান দিয়ে তাকে স্বাগত জানায়। প্রধানমন্ত্রী হাত নেড়ে জনতার প্রতি শুভেচ্ছা জানান।
মাদ্রাসা মাঠে পৌঁছে প্রধানমন্ত্রী রাজশাহীর জন্য করা এক হাজার ৩১৭ কোটি টাকার ২৫টি প্রকল্প উদ্বোধন করেন। এ ছাড়া ৩৭৬ কোটি টাকার আরও ছয়টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
আওয়ামী লীগ প্রধান বলেন, ‘নৌকায় ভোট না দিলে দেশ স্বাধীন না হতো না। দেশ স্বাধীন না হলে তাদের নেতা জিয়াউর রহমান মেজর থেকে মেজর জেনারেল পদে প্রমোশন পেত না। এটা তারা ভুলে যায়। আর দেশ স্বাধীন না হলে কোনোদিন ক্ষমতায় আসতে পারতো না খালেদা জিয়া, প্রধানমন্ত্রীও হতে পারতো না। সেই নৌকার ওপর এত রাগ কেন!’
‘নৌকায় ভোট দিয়েছে বলে খাদ্যে নিরাপত্তা পেয়েছে। একদিনে ১০০ সেতু, একদিনে ১০০ সড়ক কোন সরকার করতে পেরেছে? আওয়ামী লীগ সরকার, নৌকা মার্কার সরকার। সেই করতে পারে, আর কেউ করতে পারে না।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। আমরা দারিদ্রের হার ৪০ ভাগ থেকে ২০ ভাগে নামিয়েছি।
সামাজিক নিরাপত্তাবলয়ের কর্মসূচির আওতায় বিভিন্ন ভাতা ও সুবিধা প্রদানের পাশাপাশি ভূমিহীন-গৃহহীনদের জন্য বিনামূল্যে দুই কাঠা জমিসহ ঘর নির্মাণ করে দেওয়ার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের এই বাংলায় একটি মানুষও যাতে গৃহহীন না থাকে, কেউ যেন খাদ্যের জন্য কষ্ট না পায় সেজন্য আওয়ামী লীগ সরকারের পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা জনগণের কল্যাণে কাজ করি। এই রাজশাহীর অবস্থা কী ছিল আপনারা একবার চিন্তা করে দেখেন। ২০০১ সালের কথা চিন্তা করেন, বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায়, প্রতিনিয়ত হত্যা-জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, নারী ধর্ষণ, নির্যাতন; এই রাজশাহীতে মহিমা, রাজুফা
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই রাজশাহীতে জাতির পিতা স্বাধীনতার পর কল-কারখানা করে দেন। এরপর সব বন্ধ হয়ে যায়। আওয়ামী লীগ বন্ধ কারখানা চালু করতে কাজ করে। পদ্মা নদীর ভাঙন থেকে রক্ষার জন্য দীর্ঘ বাঁধ করে দিয়ে সেই ভাঙন আমরা রোধ করে দেই। এই রাজশাহীর মানুষের কর্মসংস্থানের কোনো ব্যবস্থা নেই। এরইমধ্যে রাজশাহীর মানুষের জন্য অনেকগুলো পদক্ষেপ নিয়েছি আমরা।
রাজশাহী জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোহাম্মদ আলী কামাল এবং সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার সমাবেশ সঞ্চালনা করেন।
সমাবেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য নুরুল ইসলাম ঠাণ্ডু, ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বক্তৃতা করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। বিদেশে থাকায় আমরা দুই বোন বেঁচে যাই। আমি জিয়াউর রহমানের ষড়যন্ত্র রুখে শুধু দেশের মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের লক্ষ্যে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশে আসি। জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়া কেউ এদেশের মানুষের খাদ্যের নিরাপত্তা দেয়নি। আওয়ামী লীগ আজ দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছে। বিএনপি বলে ক্ষমতা গেলে পালানোর সুযোগ পাবেন না। আমি বলতে চাই, আওয়ামী লীগ কখনো পালায় না। পালায় আপনাদের নেতারাই। যেই নেতা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে মুচলেকা দিয়ে দেশ থেকে ভেগে গিয়েছিল, সেই দুর্নীতিতে সাজাপ্রাপ্ত নেতা আজ বড় বড় কথা বলে। বিএনপি-জামায়াতের পাচার হওয়া ৪০ কোটি টাকা দেশে ফেরত আনা হয়েছে।