বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক
চরম আর্থিক সঙ্কট আর খাদ্যসঙ্কটে জেরবার পাকিস্তান। পূর্ব থেকে পশ্চিম, উত্তর থেকে দক্ষিণ— সব প্রান্তেই শুধু হাহাকারের ছবি। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম আকাশছোঁয়া। আর্থিক সঙ্কটে ধুঁকতে থাকা পাকিস্তানে নতুন সঙ্কট হিসাবে জুড়ে গিয়েছে তীব্র খাদ্যসঙ্কট। বন্যায় ফসলের বিপুল ক্ষতি হওয়ায় নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম হু-হু করে বাড়তে শুরু করে। যা সামাল দিতে ব্যর্থ হয়েছে পাকিস্তান সরকার। তার উপর বিদেশি ঋণের বোঝা তো আছেই।
গমের আকাল চলছে দেশ জুড়ে। আর তার সঙ্গে লাফিয়ে বেড়েছে গম এবং ময়দার দাম। পাকিস্তানের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, এক লিটার দুধের দাম ২১০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। মুরগির মাংস কেজিতে ৭০০-৮০০ টাকা, সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে। দোকানে বিদেশি কফির দাম প্রায় ৮০০ টাকা, তাই কিনতেই লোকজনের লম্বা লাইন পড়েছে। গত দু’সপ্তাহে ১৫ কেজি ময়দার দাম ৩০০ পাক রুপি বেড়েছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যেই দাম বেড়েছে জ্বালানির। পাকিস্তানে পেট্রল এবং ডিজেলের প্রতি লিটারে দাম বাড়ল ৩৫ টাকা। পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী ইশাক দার জানিয়েছেন, জ্বালানি এবং গ্যাস নিয়ামক সংস্থার সুপারিশ মেনেই দাম বাড়ানো হয়েছে।
সম্প্রতি ইন্টারন্যাশনাল ফোরাম ফর রাইটস অ্যান্ড সিকিউরিটি (আইএফএফআরএএস) রিপোর্টে উঠে এসেছে, পাকিস্তানে কৃষি ব্যবস্থায় অবিবেচনাপ্রসূত পরিকল্পনা এবং অব্যবস্থাপনা পাকিস্তানকে তীব্র খাদ্য সঙ্কটের মুখে এনে ফেলেছে । এই রিপোর্ট অনুযায়ী, পাকিস্তানের গ্রামীণ এলাকার বিশাল সংখ্যক মানুষ অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন।
সম্প্রতি পাকিস্তানের স্টেট ব্যাঙ্ক দেশের ঋণ সংক্রান্ত তথ্য সামনে এনেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, গত এক অর্থবর্ষে পাকিস্তানের সরকারি ঋণ ছিল ৯ লক্ষ ৩০ হাজার কোটি পাকিস্তানি রুপি। কিন্তু ২০২২ সালের জুনের শেষে এই ঋণ রেকর্ড মাত্রা ছুঁয়ে হয় ৪৯ লক্ষ ২০ হাজার কোটি।
বিদেশি মুদ্রার ভাঁড়ারও শূন্য হতে চলেছে। ইমরান খান পরিচালিত সরকারের আমলে সে দেশের বিদেশি মুদ্রার ভান্ডারে ছিল ১ হাজার কোটি ডলার। কিন্তু ২০২৩ অর্থবর্ষের শুরুতেই ভয়ানক ভাবে তা কমতে শুরু করেছে। বিদেশি মুদ্রার ভান্ডার ৩ সপ্তাহেই নিঃশেষ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এখনই আন্তর্জাতিক অর্থভান্ডার (আইএমএফ) ১০০ কোটি ডলার অনুদান না দিলে সঙ্কট আরও বাড়বে। বন্ধ হতে পারে জ্বালানি আমদানিও।
দেশকে ঋণে জর্জরিত করেছে আগের সরকার। দেশবাসীকে এই ঋণের বোঝা থেকে উদ্ধারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তথ্য বলছে, তেহরিক-ই-ইনসাফ সরকারে ৪৩ মাসে ঋণের পরিমাণ সর্বোচ্চ হয়েছিল। দেশের বর্তমান আর্থিক পরিস্থিতির জন্য ইমরান খানকেই এখন দায়ী করছেন শেহবাজ শরিফ। কিন্তু তাতে চিঁড়ে ভিজছে না। দেশের বর্তমান আর্থিক পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার কোনও রাস্তাও দেখাতে পারছেন না শরিফ।