Home Second Lead রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ অবসরে যেসব সুবিধা পাবেন

রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ অবসরে যেসব সুবিধা পাবেন

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ

আগামী এপ্রিলে বঙ্গভবন ছাড়ছেন বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। টানা দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন তিনি। তাঁর বিদায়ের দিনগণনা শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যেই দেশের পরবর্তী (২২তম) রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছেন মো. সাহাবুদ্দিন।
আগামী ২৪ এপ্রিল থেকে নতুন রাষ্ট্রপতির দায়িত্বভার গ্রহণ করার কথা। আর ২৩ এপ্রিল বর্তমান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের মেয়াদ শেষ হবে। ফলে, স্বাভাবিকভাবেই বঙ্গভবন ছাড়বেন আবদুল হামিদ। বঙ্গভবন ছাড়ার পর তিনি রাজধানীতে কোথায় গিয়ে উঠবেন, সে আলোচনা-প্রস্তুতিও চলছে। বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ আবদুল হামিদ একসময় লালমাটিয়ার বাসায় থাকতেন।
গত বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) তাঁর প্রেস সেক্রেটারি মো. জয়নাল আবেদীন জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতির মেয়াদ শেষে রাজধানীর নিকুঞ্জের একটি বাসায় উঠবেন তিনি। তবে রাষ্ট্রপতির পারিবারিক দুটি সূত্র জানিয়েছে, মো. আবদুল হামিদের জন্য ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় অবস্থিত একটি ফ্ল্যাটও প্রস্তুত রাখা হচ্ছে।
১৫ ফেব্রুয়ারি বিকেলে রাষ্ট্রপতি হামিদ তিন দিনের সফরে জন্মস্থান কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলায় গেছেন। বাসস জানিয়েছে, রাষ্ট্রপতি সন্ধ্যায় মিঠামইনে ‘রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ অডিটোরিয়ামে’ জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এ সময় তিনি জনগণের আস্থা অর্জনে নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করতে জনপ্রতিনিধিদের প্রতি আহ্বান জানান।
মো. আবদুল হামিদ প্রথম দফায় ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল দেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন। এরপর ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল দ্বিতীয়বারের মতো ২১তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন তিনি। আগামী ২৩ এপ্রিল তাঁর রাষ্ট্রপতির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এর আগে তিনি সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রয়াত মো. জিল্লুর রহমান বিদেশে চিকিৎসাধীন থাকার সময় জাতীয় সংসদের স্পিকার হিসেবে কিছুদিন ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি এবং জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর বেশ কিছুদিন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্বও পালন করেন।
১৯৭০ সালে ময়মনসিংহ-১৮ আসন থেকে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন আবদুল হামিদ । এরপর আর তাঁকে পেছনে তাকাতে হয়নি। কিশোরগঞ্জের হাওর এলাকা থেকে সাতবার আওয়ামী লীগের হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। একজন সফল রাজনীতিবিদ হিসেবে রাষ্ট্রের এক নম্বর ব্যক্তি হয়ে বঙ্গভবন ছাড়ছেন তিনি। তবে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন শেষে অবসরে গেলেও আইন অনুযায়ী অবসর ভাতা, চিকিৎসাসুবিধাসহ অন্য কিছু সুযোগ-সুবিধা পাবেন আবদুল হামিদ।
রাষ্ট্রপতির অবসর ভাতা, আনুতোষিক ও অন্যান্য সুবিধা আইনের তথ্য বলছে, কোনো ব্যক্তি রাষ্ট্রপতি পদে কমপক্ষে ছয় মাস দায়িত্ব পালন শেষে পদত্যাগ করলে অথবা মেয়াদ শেষ হলে মৃত্যুর আগপর্যন্ত রাষ্ট্রপতি হিসেবে সর্বশেষ যে মাসিক বেতন পেতেন, তার ৭৫ শতাংশ হারে মাসিক অবসর ভাতা পাবেন। ‘দ্য প্রেসিডেন্টস (রেমিউনারেশন অ্যান্ড প্রিভিলেজেস) অ্যাক্ট অনুযায়ী বর্তমানে রাষ্ট্রপতির মাসিক বেতন ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। এই হিসাবে অবসরের পর আবদুল হামিদ মাসে ৯০ হাজার টাকা অবসর ভাতা পাবেন।
ওই আইন বলছে, কোনো ব্যক্তি রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার আগে অন্য কোনো চাকরি বা পদ থেকে অবসরে গিয়ে অবসর ভাতা গ্রহণ করলে তিনি ওই অবসর ভাতা এবং রাষ্ট্রপতির অবসর ভাতার মধ্যে তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী যেকোনো একটি পাওয়ার যোগ্য হবেন। রাষ্ট্রপতি অবসর ভাতা গ্রহণ করে মারা গেলে তাঁর বিধবা স্ত্রী অথবা ক্ষেত্রমতে বিপতœীক স্বামী তাঁর প্রাপ্য অবসর ভাতার দুই-তৃতীয়াংশ হারে আমৃত্যু মাসিক ভাতা পাবেন।
অবসর ভাতা গ্রহণের প্রাধিকার অর্জন করা সাবেক কোনো রাষ্ট্রপতি অবসর ভাতার পরিবর্তে আনুতোষিকও (এককালীন অর্থ) গ্রহণ করতে পারবেন। কোনো ব্যক্তি ছয় মাসের বেশি রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত থাকা অবস্থায় আনুতোষিক পাওয়ার অভিপ্রায় ব্যক্ত না করে অথবা অবসর ভাতা গ্রহণ না করে মারা গেলে তিনি আনুতোষিক পাওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন বলে গণ্য হবে। তখন আনুতোষিকের টাকা মনোনীত ব্যক্তি অথবা উত্তরাধিকারীরা পাবেন।
অবসরে যাওয়ার পর সাবেক রাষ্ট্রপতি হিসেবে আইনানুযায়ী অন্য কিছু সুবিধাও পাবেন মো. আবদুল হামিদ। তিনি একজন ব্যক্তিগত সহকারী ও একজন অ্যাটেনডেন্ট (সাহায্যকারী) পাবেন। দাপ্তরিক ব্যয়ও পাবেন, যার মোট বার্ষিক পরিমাণ সময়ে সময়ে সরকার নির্ধারণ করবে। একজন মন্ত্রীর প্রাপ্য চিকিৎসাসুবিধার সমপরিমাণ চিকিৎসাসুবিধাদি পাবেন সাবেক রাষ্ট্রপতি। সরকারি অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য বিনা মূল্যে সরকারি যানবাহন ব্যবহার, আবাসস্থলে একটি টেলিফোন সংযোগ পাবেন এবং সরকার সময়ে সময়ে নির্ধারিত সীমা পর্যন্ত এর বিল পরিশোধ থেকে অব্যাহতি দেবে। সাবেক রাষ্ট্রপতি হিসেবে একটি কূটনৈতিক পাসপোর্টও পাবেন মো. আবদুল হামিদ। তখন তিনি দেশের ভেতর ভ্রমণকালে সরকারি সার্কিট হাউস বা রেস্টহাউসে বিনা ভাড়ায় অবস্থানের সুবিধা পাবেন।
মো. আবদুল হামিদ তার স্ত্রীসহ আইনানুযায়ী, চিকিৎসাসুবিধা, কূটনৈতিক পাসপোর্ট এবং দেশের ভেতরে সরকারি সার্কিট হাউস বা রেস্টহাউসে বিনা ভাড়ায় অবস্থানের সুবিধা পাবেন।