Home কৃষি আবার গমের সুদিন বরেন্দ্র ভূমিতে

আবার গমের সুদিন বরেন্দ্র ভূমিতে

আসাদুজ্জামান মিঠু: তানোর (রাজশাহী) থেকে: দুই যুগ আগেও রাজশাহীসহ বরেন্দ্র অঞ্চল জুড়ে ধান ও গম চাষই ছিল কৃষকের প্রধান চাষাবাদ। তবে গমে ফলন কম,ইদুঁরের অত্যাচার বাজারে দাম না পাওয়াসহ নানা রোগ বালায়ের কারণে গম চাষ হতে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল কৃষকেরা।

বরেন্দ্র অঞ্চলে সেই হারানো গম নতুন করে সুদিনে ফিরেছে। চলতি মৌসুমে এ অঞ্চলে আবহাওয়া অনুকুল থাকায় ব্যাপক গম চাষ হয়েছে। ফলনও হচ্ছে দ্বিগুণ। বাজারে গমের ভাল দাম পেয়ে খুশি কৃষকেও। এ অঞ্চলে কৃষকেরা জানান, বর্তমানে উন্নতমানে গম বীজ পাওয়া যাচ্ছে। আবহাওয়া অনুকুল থাকায় ফলন বেড়েছে তিনগুণ দামও বেশ ভাল। এছাড়াও সরকারী ভাবে গম চাষ করার জন্য উৎসাহ প্রদান করা হচ্ছে কৃষকদের। সরকারী ভাবে কৃষকদের মধ্যে দেয়া হয়েছে বিনামূলে গম বীজ,সার প্রণোদনা। এ কারণে চলতি বছর এ অঞ্চলে দুইগুণ বেড়েছে গমের চাষ।

চলছে রবিসশ্যর কাটা-মাড়ায়ের ভরা মৌসুম। রবিসশ্যর অন্যতম ফসল হচ্ছে গম। গমের সোনালী রংঙে ভরপুর হয়ে উঠেছে পুরো মাঠ। সে সঙ্গে বাতাসে দুলছে কৃষকের সোনালী স্বপ্ন। সূর্যের ঝিলিক পড়ার সাথে সাথে পুরো মাঠ সোনার রংঙে রঙিন হয়ে উঠছে। ফাল্গুন মাসের আধাআধি সয়ম পেরুতেই বরেন্দ্র অঞ্চলে জুড়ে গমসহ সকল প্রকার রবিসশ্য কাটা-মাড়ার মহা উৎসব শুরু হয়েছে। কৃষিশ্রমিকেরা এখন সোনালী ফসল ঘরে তোলা নিয়ে দিন রাত মাঠে ব্যস্ত সময় পার করছেন। চলবে পুরো চৈতমাস পর্যন্ত।

রাজশাহী সহ বরেন্দ্র অঞ্চলে কয়েক বছর আগেও হাতেগুণা কিছু কৃষক গম চাষ করতেন। গত বছর থেকে বেড়েছে এ অঞ্চলে গম চাষ। চলতি বছর বেড়েছে কয়েকগুণ। রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর জানায়, চলতি মৌসুমে রাজশাহীতে গম চাষ হয়েছে ৩২ হাজার ৫৬১ হেক্টর। গতবছর আবাদ হয়েছিল ২৫ হাজার ২৩০ হেক্টরে। এবারে আবাদ বেশী হয়েছে ৬ হাজার ৩৩১ হেক্টর।

যার মধ্যে গোদাগাড়ী উপজেলায় সবচেয়ে বেশী গমের আবাদ হয়েছে। এই উপজেলায় আবাদ হয়েছে ৭ হাজার ২৮০ হেক্টর জমিতে। এরপরে বাঘা উপজেলা আবাদ হয়েছে ৬ হাজার ৬৬০ হেক্টর এবং চারঘাট উপজেলায় ৫ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে। এছাড়াও পবা উপজেলায় ২ হাজার ২৫০ হেক্টর, বাগমারা ২ হাজার ৫৪০ হেক্টরসহ অন্যান্য উপজেলায় হয়েছে ৭ হাজার ২৭১ হেক্টর জমিতে।
কৃষকেরা জানান,ধান উঠার আগে সরকারী ভাবে ধানের দাম নির্ধারণ করে থাকেন সরকার। কিন্ত গমের দাম নির্ধারণ করেনা। সে কারণে ধানের দাম বাড়লেও গম আবাদ করে এর নায্যমুল্য থেকে বঞ্চিত হন চাষিরা। এজন্য গম চাষে চাষিদের মাঝে অনিহা দেখা দেয়। কয়েক বছর থেকে এ অঞ্চলে গমের চাষ ছেড়ে দিয়েছিলেন চাষীরা। তবে চলতি মৌসুমে কম সেচের গমের আবাদ বেড়েছে।
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা চাদন্দালায় গ্রামের কৃষক তসিকুল ইসলাম জানান, চলতি মৌসুমে ১১ বিঘা জমিতে গম চাষাবাদ করেছেন। গম কাটা- শুরু করেছেন তিনি। গমের মাথা ভাল থাকায় অন্যনব বছরের চেয়ে ফলন বেড়েছে। প্রতি বিঘাতে ১৩ থেকে ১৫ মণ পর্যন্ত ফলন পাওয়া যাচ্ছে। বর্তমানে বাজারে প্রতিমণ গম বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৮০০ থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত।
তানোর উপজেলার মুন্ডুমালা পৌর এলাকার পাঁচন্দর গ্রামের কৃষক মতিউর রহমান জানান,তিনি দেড় যুগ আগে গম চাষ করে সেভাবে ফলন পেতেননা। তাই গম চাষ ছেড়ে দিয়েছিলেন। তবে চলতি বছর সরকারী ভাবে গম বীজ ও সার পেয়ে দুই বিঘা জমিতে গম চাষ করেছেন। কাটা মাড়াই শেষ করেছেন দুই দিন আগে। দুই বিঘা জমি এবার ৩২ মন গম পেছেন তিনি। বাজারে দাম ভাল থাকায় বেশ খুশি তিনি।

রাজশাহীর তানোর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল্লাহ আহম্মেদ জানান, নানা রোগ বালাইয়ের কারণে এ অঞ্চলে গমের আবাদ কমে গিয়েছিল। তবে,গত বছর থেকে আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এবং সরকারী ভাবে কৃষকদের মধ্যে প্রণোদনা হিসাবে উন্নত জাতের গম বীজ ও সার বিতারণ করায় বরেন্দ্র অঞ্চলে গমের আবাদ বেড়েছে কয়েকগুণ। গমের মাথা ভাল থাকায় ফলন ভাল হচ্ছে। আশা করছি এবার গমে চাষে লাভবান হবেন কৃষকেরা।