বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
রংপুর: হাঁড়িভাঙ্গা আম রংপুরের অর্থনীতিতে চালিকা শক্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিষমুক্ত আঁশহীন হাঁড়িভাঙ্গা আমের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। কয়েক বছর ধরে ফলন ভালো হওয়ায় বেড়েছে আম উৎপাদনের পরিধিও। রংপুর সদর, মিঠাপুকুর ও বদরগঞ্জ উপজেলার বিস্তৃত এলাকার ফসলি জমি, উঁচু-নিচু ও পরিত্যক্ত জমিতে চাষ হচ্ছে এই আম।
রংপুর সদর এলাকা ছেড়ে মিঠাপুকুরের খোড়াগাছ ইউনিয়নের পদাগঞ্জে দেখা মিলবে সারি সারি গাছ। রাস্তার দু’পাশে বিভিন্ন ফসলি জমির আলে লাগানো হয়েছে আমের গাছ। বাদ পড়েনি বসতবাড়ির পরিত্যক্ত জায়গা, পুকুরপাড়, বাড়ির উঠান। মিঠাপুকুরের আখিরাহাট, মাঠেরহাট, বদরগঞ্জের গোপালপুর, নাগেরহাট, সর্দারপাড়া, রংপুর সদরের সদ্যপুষ্করনী ইউনিয়নের কাঁটাবাড়ি, পালিচড়া এলাকাতেও এখন গাছে গাছে দোল খাচ্ছে অপরিপক্ক হাঁড়িভাঙ্গা আম।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, জুনের শেষ সপ্তাহে বাজারে মিলবে পরিপক্ক হাঁড়িভাঙ্গা আম। এর আগে বাজারে হাঁড়িভাঙ্গা আম পাওয়া গেলেও তা অপরিপক্ক হবে। হাঁড়িভাঙ্গার প্রকৃত স্বাদ পেতে জুনের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকতে হবে।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এবছর রংপুর জেলায় ১ হাজার ৯০৫ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় বেশি। তাছাড়া ঝড় কিংবা বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হওয়ায় আমের তেমন ক্ষতি হয়নি। অধিক দাবদাহ থাকায় কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। তারপরও গত বছরের তুলনায় এবারে বেশি আমের ফলন হয়েছে।
খোঁড়াগাছ, গোপালপুর, সরদারপাড়া, লালপুর, পদাগঞ্জ, তেকানি, দুর্গাপুরসহ বিভিন্ন গ্রামে হাঁড়িভাঙ্গা আম চাষ হচ্ছে। হাঁড়িভাঙা আমকে ঘিরে বেকারের সংখ্যাও কমেছে রংপুরসহ আশপাশের কয়েকটি উপজেলায়। মিঠাপুকুরের লালপুর, পদাগঞ্জ, তেকানিসহ আশপাশের গ্রামের বেকার যুবকরা এখন আম ব্যবসায় জড়িয়ে বেকারত্ব দূর করেছেন। অনেকে উদ্যোক্তা হিসেবে হাড়িভাঙ্গার বাজার সম্প্রসারণ ও চাষাবাদ বাড়ানোর জন্য কাজ করছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক ওবায়দুর রহমান বলেন, এখন ব্যাপকভাবে হাঁড়িভাঙা আম চাষ হচ্ছে। খুব বেশি পরিশ্রম ও অর্থ বিনিয়োগ করতে না হওয়ায় মানুষ আমচাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। চাষি, ব্যবসায়ী ও বাগান মালিকদের কৃষি বিভাগ থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হচ্ছে। গতবছর ১ হাজার ৮৬৫ হেক্টর জমিতে হাড়িভাঙা আমের চাষ হয়।
এবার তা বেড়ে ১ হাজার ৯০৫ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। দেশের অন্যান্য স্থানের আম শেষ হয়ে যাওয়ার পর হাঁড়িভাঙ্গা আম বাণিজ্যিকভাবে বাজারে আসে। জুনের শেষ সপ্তাহ থেকে এই আম বাজারে আসবে। শুধু হাঁড়িভাঙ্গা আমই দেরি করে বাজারে আসে না, গৌরমুখি ও বারি-৪ জাতের আম আরও পরে পেকে থাকে। তবে হাড়িভাঙ্গা আমের মতো সেগুলোর বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি নেই।