বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
ঢাকা: বিশ্ববাজার কিংবা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ- দাম বাড়ার ক্ষেত্রে খোঁড়া যুক্তি দিচ্ছে সরকার। বাজার ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলার কারণেই বাড়ছে পণ্যমূল্য। পাশাপাশি ক্রেতাদের জিম্মি করে মুনাফা লুটে নিচ্ছে সিন্ডিকেট। নিয়ন্ত্রক সংস্থা এ ক্ষেত্রে কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না। মূল্যস্ফীতির কারণে বাড়ছে বৈষম্য।
সংবাদ সম্মেলনে গবেষণা রিপোর্ট তুলে ধরে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। বলা হয়, দাম ঊর্ধ্বমুখী সব পণ্যেরই। চাল, আটা, ডিম, পেঁয়াজ, চিনি, মসুর ডাল থেকে শুরু করে ভোগ্য এবং নিত্য ব্যবহার্য প্রায় সব পণ্যের গায়েই আগুন। আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় দেশে আয় বৈষম্য বেড়েছে। ২০১০ সাল থেকে ২০২২-এর মধ্যে বৈষম্যের পরিমাপক গিনি ইনডেক্স দশমিক ৪৬ থেকে বেড়ে দশমিক ৫৭ হয়েছে। নিম্ন আয়ের ৫০ শতাংশ মানুষের ব্যক্তিগত সম্পদের ৪ দশমিক ৭৭ শতাংশের মালিকানার বিপরীতে উচ্চ আয়ের ১০ শতাংশের মালিকানা ৫৮ দশমিক ৭ শতাংশ।
ভোক্তাদের স্বার্থ রক্ষায় আলাদা মন্ত্রণালয় প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ড. এম শামসুল আলম।
তিনি বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় মূলত ব্যবসাবান্ধব প্রতিষ্ঠান। তারা ব্যবসার সুযোগ-সুবিধা তৈরি করবে। এতে করে পণ্যের দাম ও মান ন্যায্য ও যৌক্তিক হবে। কিন্তু তাদের ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণের দায়িত্ব দিলে তারা সীমাবদ্ধতার শিকার। যেটা আমরা ই-কমার্সের ক্ষেত্রে দেখেছি। ই-কমার্সে প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা মানিলন্ডারিং করা হয়েছে। আমরা ভোক্তাদের জন্য আলাদা মন্ত্রণালয় চাই।
তিনি বলেন, এমন একটি মন্ত্রণালয় চাই যারা অন্য কোনো মন্ত্রণালয় দ্বারা প্রভাবিত হবে না, ভোক্তাদের স্বার্থ-সুরক্ষায় ব্যর্থতার পরিচয় দেবে না, সাপ্লাই চেনের সব জায়গায় নিয়ন্ত্রক সংস্থাদের সমানভাবে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করবে। এছাড়া ভোক্তাদের সেখানে ক্ষমতায়ন থাকতে হবে। আমরা চিঠি দিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আমদানি পর্যায়ের তথ্য পাই না। সেটি পেলে আমরা সাপ্লাই চেনের তথ্য অ্যানালাইসিস করতে পারতাম। সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান।
তিনি বলেন, গুটিকয়েক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের একচেটিয়া বাজার নিয়ন্ত্রণ, ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ও কার্টেলের বিরুদ্ধে নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি সরকারকে খাদ্য বিভাগ, টিসিবির মতো সরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নিত্যপণ্য সরবরাহ ও বিক্রির ব্যবস্থা গ্রহণ, মূল্যবৃদ্ধির লাগাম টানায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। সরকারের ব্যবসা থেকে দূরে থাকার নীতিতে জনস্বার্থ রক্ষিত হচ্ছে না।
তিনি আরো বলেন, ভারত সরকার নব্বইয়ের দশকে ভোক্তাস্বার্থ দেখার জন্য ‘মিনিস্ট্রি অব কনজ্যুমার অ্যাফেয়ার ফুড অ্যান্ড পাবলিক ডিস্ট্রিবিউশন’ নামে একটি পৃথক মন্ত্রণালয় সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশেও ‘ভোক্তাবান্ধব, জনবান্ধব’ নীতি গ্রহণ সময়ের দাবি।
বাণিজ্য সম্পর্কিত আলাদা বিভাগ, বাণিজ্য নীতি, বৈদেশিক বাণিজ্য, বাণিজ্যিক ইত্যাদি বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ওপর অর্পিত চিরাচরিত দায়িত্ব পালন অব্যাহত রাখার আহ্বানও জানান ক্যাব সভাপতি।
ভোক্তা অধিদপ্তরের সাবেক ডিজি মো. আবুল হোসেন মিয়া বলেন, বাংলাদেশে জিনিসপত্রের দাম একবার বাড়লে আর কমতে চায় না। এর ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ ভোক্তারা। এর থেকে পরিত্রাণ পেতে ভোক্তাদের সচেতন হতে হবে। এ দেশের ভোক্তারা সচেতন হলে তারা কখনো প্রতারিত হবে না।
এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির ভুঁইয়া, ক্যাব ঢাকা জেলা কমিটির সভাপতি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম শামস এ খান প্রমুখ।