Home Third Lead ‘অঞ্জু ওয়েডস নাসরুল্লা’

‘অঞ্জু ওয়েডস নাসরুল্লা’

ভারতে ২ বাচ্চাকে ফেলে বিয়ে পাকিস্তানিকে

সীমা হায়দার-শচীন মীনার প্রেম কাহিনি অনেকেই জানান। বর্তমানে পাকিস্তানি বধূ সীমা রয়েছেন ভারতের উত্তরপ্রদেশ পুলিশের আতশকাচের নীচে। দু’দেশের সীমানা প্রেমকে আটকে রাখতে পারেনি। সব ভুলে প্রেমের টানে সীমানা পেরিয়ে যাচ্ছেন এমন নারী-পুরুষের সংখ্যা নেহাত কম নয়। সীমার পর ঠিক একই কারণে রবিবার থেকে সংবাদের শিরোনামে উঠে এসেছেন ভারতের অঞ্জু (Indian Woman Anju)!

সীমা (Seema Haider) যেমন পাকিস্তান (Pakistan) থেকে নেপাল ঘুরে ভারতে বেআইনিভাবে ঢুকে পড়েছিলেন, ঠিক তেমনই রাজস্থানের বধূ অঞ্জু ওয়াঘা বর্ডার পেরিয়ে চলে গেছেন পাকিস্তানে। পাকিস্তানের এক যুবকের সঙ্গে ফেসবুকে আলাপ, সেই থেকেই সীমানা পেরনোর মতো সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন অঞ্জু।

অনলাইন জিও নিউজ বলেছে, অঞ্জু মঙ্গলবার  তার পাকিস্তানি প্রেমিক নাসরুল্লাহকে বিয়ে করেছেন। তার আগে তিনি হিন্দু থেকে ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলিম হয়েছেন। এখন অঞ্জু আর অঞ্জু নেই। নাম পরিবর্তন করে হয়েছেন ফাতিমা।  এই প্রেমিক-প্রেমিকা খাইবার পখতুনখোয়া প্রদেশের আপার ডিরে জেলা ও সেশনস জজ আদালতে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।

এ খবরের সত্যতা স্বীকার করেছেন মালাকান্ড ডিভিশন ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল নাসির মেহমুদ সাত্তি। তিনি বলেছেন, ওই নারী ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে ফাতিমা নাম ধারণ করেছেন। তিনি আরও বলেন, পুলিশি নিরাপত্তায় ওই নারীকে বাসায় পৌঁছে দেয়া হয়েছে। ওই রিপোর্টের সঙ্গে এই যুগলের একটি ছবিও পোস্ট করা হয়েছে।

নাসরুল্লা এবং অঞ্জুর (ফতিমা) একটি ভিডিয়োও প্রকাশ করা হয়েছে। যে ভিডিয়োয় লেখা হয়েছে, ‘অঞ্জু ওয়েডস নাসরুল্লা’ (Anju weds Nasrullah)। পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ওই ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে যে কোনও এক পাহাড়ি এলাকায় একে অপরের হাত ধরে ঘুরছেন নাসরুল্লা এবং অঞ্জু। যেমন প্রি-ওয়েডিং শ্যুট হয়ে থাকে, সেরকম ধাঁচেই ওই ভিডিয়ো করা হয়েছে। আর যেরকম সব শট আছে, তা দেখে মনে হচ্ছে যে ভিডিয়োর পিছনে যথেষ্ট খরচও করেছেন নাসরুল্লা এবং অঞ্জুরা। সম্ভবত ড্রোনও ব্যবহার করা হয়েছে।

অথচ এর একদিন আগে সোমবার ভারতের সরকারি বার্তা সংস্থা পিটিআই দেয় উল্টো খবর।

তাতে বলা হয়, ফেসবুকে পরিচয়ের পর পাকিস্তানে নাসরুল্লাহ (২৯) নামের বন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে ওই দেশটিতে সফরে গিয়েছেন ভারতের বিবাহিত এক নারী অঞ্জু (৩৪)। আগামী ২০শে আগস্ট আবার ভারত ফিরবেন তিনি। এদিনই তার ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। পিটিআই আরও জানায়, তাদেরকে নিয়ে প্রেম সংক্রান্ত যে রিপোর্ট প্রকাশ পেয়েছে তা প্রত্যাখ্যান করেছেন নাসরুল্লাহ। তবে এ নিয়ে দেশে বিদেশে বিস্তর লেখালেখি হয়েছে। বলা হয়েছে, ফেসবুকে বন্ধুত্বের পর তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সেই প্রেমের টানে পাকিস্তানের প্রত্যন্ত এক গ্রামে নাসরুল্লাহর কাছে ছুটে যান অঞ্জু।

পিটিআই আরও বলছে, অঞ্জুর জন্ম উত্তর প্রদেশের কাইলর গ্রামে। তিনি রাজস্থানের আলওয়ার জেলায় বসবাস করতেন। নাসরুল্লাহর সঙ্গে ২০১৯ সালে ফেসবুকে তার বন্ধুত্ব হয়। পাকিস্তানের পেশোয়ার থেকে প্রায় ৩০০ কিলোমিটার দূরে কুলশো গ্রামে বসবাস নাসরুল্লাহর। খাইবার পখতুনখাওয়া প্রদেশের আপার ডির জেলায় প্রথমে পৌঁছেন অঞ্জু। তিনি পাকিস্তানি বৈধ ভিসা নিয়ে ওই প্রদেশ সফরে গিয়েছেন। সেখান থেকে পিপিআইকে নাসরুল্লাহ বলেছেন, পাকিস্তান সফরে এসেছেন অঞ্জু। আমাদের বিয়ে করার কোনো পরিকল্পনা নেই। ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে আসায় ২০শে আগস্ট তিনি দেশে ফিরে যাবেন। আমার বাড়িতে পরিবারের অন্য নারী সদস্যাদের সঙ্গে আলাদা একটি রুমে বসবাস করছেন অঞ্জু। নয়া দিল্লিতে পাকিস্তানি হাই কমিশন থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে যে, শুধু আপার ডির সফরের জন্য ৩০ দিনের ভিসা অনুমোদন দেয়া হয়েছে অঞ্জুকে।

শেরিঙ্গালের একটি ইউনিভার্সিটি থেকে বিজ্ঞানে গ্র্যাজুয়েট করেছেন নাসরুল্লাহ। পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে তিনি সবার ছোট। পিটিআইয়ের খবরে আরও বলা হয় স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে একটি এফিডেভিটের মাধ্যমে নাসরুল্লাহ বলেছেন, তাদের বন্ধুত্বের মধ্যে কোনো প্রেম নেই। অঞ্জু দেশে ফিরে যাবেন। এতে আরও বলা হয়েছে, আপার ডির জেলার বাইরে যাবেন না অঞ্জু। এসব নিয়ে নিজের অফিসে অঞ্জুর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জেলা পুলিশ কর্মকর্তা মুশতাক। তার সফরের ডকুমেন্টগুলো চেক করেছেন। এতে কোনো অসামঞ্জস্যতা পাওয়া যায়নি। যে গ্রামে তিনি গিয়েছেন তার বেশির ভাগই পশতুন। তারা অত্যন্ত ধর্মভীরু। তারা চান, অঞ্জু নিরাপদে ভারতে ফিরে যান। তারা চান না এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাদের সম্প্রদায়ের নামে কালিমা লাগুক। ওদিকে অঞ্জুর স্বামী অরবিন্দ অবস্থান করছেন রাজস্থানে। স্ত্রী অঞ্জু ফিরে আসার আশায় প্রহর গুনছেন তিনি। তাদের ১৫ বছর বয়সী একটি কন্যা ও ৬ বছর বয়সী একটি ছেলে আছে।
অঞ্জুর ঘটনাটি সীমা গুলাম হায়দারের ঘটনার মতোই। সীমা হলেন চার সন্তানের জননী একজন পাকিস্তানি নারী। তিনি ভারতের প্রেমিক শচীন মীনার সঙ্গে বসবাস করতে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে প্রবেশ করেছেন। পাবজি গেম খেলতে খেলতে ২০১৯ সালে তাদের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সীমার বয়স ৩০ বছর। শচীনের ২২। তারা নয়া দিল্লির কাছে গ্রেটার নয়ডায় রাবুপুরা এলাকায় বসবাস করছেন। উত্তর প্রদেশ পুলিশের তথ্যমতে, সেখানে একটি স্টোর চালান শচীন।

চার সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে নেপাল হয়ে বেআইনিভাবে ভারতে প্রবেশের কারণে ৪ঠা জুলাই গ্রেপ্তার করা হয় সীমাকে। তার সব সন্তানের বয়স সাত বছরের নিচে। অবৈধ অভিবাসীদের আশ্রয় দেয়ার কারণে জেলে যেতে হয় শচীনকে। তবে সীমার সঙ্গে অঞ্জুর পার্থক্য হলো, তিনি বৈধ ভিসা নিয়ে ওয়াগা-আত্তারি সীমান্ত দিয়ে পাকিস্তানে প্রবেশ করেছেন। রাজস্থানের ভিবান্দিতে মিডিয়ার কাছে অঞ্জুর স্বামী অরবিন্দ বলেছেন, জয়পুরে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বৃহস্পতিবার বের হন অঞ্জু। পরে পরিবার জানতে পারে তিনি পাকিস্তানে। এ কথা জানার পর তিনি বা তার পরিবার এ বিষয়ে পুলিশের কাছে কোনো অভিযোগ করেনি।

Image - 'আমি সীমা নই, ভারতে ফিরব', ভালবাসার কারণেই কি পাকিস্তানে গেছেন অঞ্জু?