ঢাকা: শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত দেশের শীর্ষস্থানীয় বিস্কুট প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান হয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির ৩ কোটি ১০ লাখ শেয়ারধারী আজিজ মোহাম্মদ ভাই। আর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন তারই বোন নুরজাহান হুদা।
২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুসারে, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজের ১৪টি বোর্ড সভা হয়েছে। কিন্তু আজিজ মোহাম্মদ ভাই কোনোটিতে অংশ নেননি। ২০১৮ সালে অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ভাই এবং ২০২৩ সালে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোবারক আলীর মৃত্যুর পরে দুটি পদ শূন্য হয়। ওই বছরের জুন মাসে কোম্পানিটি আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের ছেলে আসার আজিজ এম ভাইকে অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজে ৩ দশমিক ২৯ শতাংশ শেয়ারের অধিকারী আম্বি লিমিটেড কর্তৃক মনোনীত পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয়।
এ ছাড়া আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের প্রয়াত ভাই রাজা মোহাম্মদ ভাইয়ের ছেলে আহাদ মোহাম্মদ ভাইকে কোম্পানিটির শেয়ারহোল্ডার পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। আহাদ বর্তমানে অন-ডিমান্ড ভিডিও স্ট্রিমিং সেবাদাতা বঙ্গ বিডির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার পদে রয়েছেন।
দেশের শীর্ষস্থানীয় বিস্কুট উৎপাদক অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের পরিচালক পর্ষদে নিয়োগ পেয়েছেন ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের ছেলে ও ভাতিজা। এর মাধ্যমে তার দ্বিতীয় প্রজন্ম অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবসায় যুক্ত হলো।
৩০ জুন ২০২৩ পর্যন্ত কোম্পানিটিতে উদ্যোক্তা পরিচালকদের ৪৪ দশমিক ৬৬ শতাংশ শেয়ার রয়েছে, যা এক বছর আগে ছিল ৩৭ দশমিক ৩৪ শতাংশ। কোম্পানিটিতে সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের কাছে ১১ দশমিক ৫১ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে ২৩ দশমিক ৯৬ শতাংশ এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ১৯ দশমিক ৮৭ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।
১৯৭৯ সালে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের বাবা মরহুম মোহাম্মদ ভাই বেঙ্গল কার্বাইড লিমিটেড নামে একটি ব্যাটারি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। পরে কোম্পানির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। ১৯৯৬ সালে কোম্পানি বিস্কুট প্রস্তুতের ব্যবসায় আসে। মোহাম্মদ ভাই এরপর নিজের ছেলেমেয়েদের কোম্পানির মালিকানায় যুক্ত করতে থাকেন। এ ছাড়া কোম্পানি পরিচালনার জন্য ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে তার ভাই মোবারক আলীকে নিয়োগ দেন।
২০১৮ সালে কোম্পানির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ভাই মারা যান। এরপর আজিজ মোহাম্মদ ভাই ছাড়া তার পরিবারের কোনো সদস্য কোম্পানির পরিচালক বোর্ডে ছিলেন না। মোবারক আলীর ছেলে মুনির আলী ইতোমধ্যেই কোম্পানিতে যোগ দিয়েছেন। চলতি বছরেই মোবারক আলীর মৃত্যু হয়।
গত তিন বছরে ব্যবসার বহুমুখীকরণ ও সম্প্রসারণে প্রায় ১৫৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগের মাধ্যমে কোম্পানিটি ইনস্ট্যান্ট ন্যুডলস, ড্রাই কেক, সফট কেক, চকলেট ওয়েফার, ফিলড ক্যান্ডি, টফি, টোস্ট, রাস্কসহ নানান মুখোরোচক নাশতা তৈরির মতো সেগমেন্টে বিনিয়োগ করেছে, যা তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণের কৌশলকেই তুলে ধরছে।
অর্থনৈতিক সংকটে অলিম্পিকের ব্যবসা খুব একটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। বরং সংকটের মধ্যেও তারা ব্যবসা সম্প্রসারণে বিনিয়োগ অব্যাহত রাখে। বাংলাদেশ অটো বিস্কিট অ্যান্ড ব্রেড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ ব্রেড ও বিস্কুট কনফেকশনারি প্রস্তুতকারক সমিতির তথ্য মতে, স্নাকস শিল্পে ২২ শতাংশ বাজার দখল নিয়ে প্রথম অবস্থানে রয়েছে অলিম্পিক। অটো-বিস্কুট প্রস্তুতকারক শিল্পের স্থানীয় বাজারে তাদের দখল প্রায় ২৫-৩০ শতাংশ।