বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক
দিল্লি: ভয়াবহ রকমের বায়ুদূষণে বিপর্যস্ত ভারতের রাজধানী দিল্লি। নানামুখী চেষ্টা করেও তা নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। ধোঁয়াশায় বিপর্যস্ত দিল্লিবাসী। দিন দিন আরও ধূসর হচ্ছে সে ছবি। শীতের মুখে এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) ৪০০-র গণ্ডি ছুঁয়েছে। এ অবস্থায় কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আগামী ২০-২১ নভেম্বর এই কৃত্রিম বৃষ্টি নামানো হবে দিল্লি ও সংলগ্ন এলাকাগুলোতে। আইআইটি কানপুরের গবেষকরা কৃত্রিম মেঘ থেকেই অকাল বৃষ্টি নামাবেন।
দিল্লির বাতাস বরাবরই দূষিত। যানবাহনের ধোঁয়া আর ফসলের গোড়া পোড়ানোর ধোঁয়ায় বাতাসে ভাসমান ধূলিকণা আর গ্রিন হাউস গ্যাসের মাত্রা সবসময়েই বেশি থাকে। শীতের মুখে তা বিপদসীমা ছাড়িয়ে যায়। তখন বাতাসের অ্যারোসল, কুয়াশা, ফসল পোড়া ছাই আর গ্রিন হাউস গ্যাসের সঙ্গে মিলে ঘন কালো ধোঁয়াশা তৈরি করে। যেমন এ বছর এই ধোঁয়াশা সাঙ্ঘাতিক পর্যায় গিয়ে পৌঁছেছে। আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আশপাশের এলাকায় এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) যথাক্রমে ৪৩৮, ৪৯১, ৪৮৬ ও ৪৭৩। কাজেই অঝোর বৃষ্টিই পারে এই ধূলিকণা ভরা দূষিত মেঘকে সরিয়ে দিতে। আর অসময়ের বৃষ্টি নামাতে পারে একমাত্র কৃত্রিম মেঘ, অর্থাৎ যে মেঘকে গবেষকরা বিশেষ উপায় তৈরি করেছেন।
কৃত্রিম মেঘ তৈরি করা বা রোপন করার পদ্ধতিকে বিজ্ঞানের ভাষায় বলে ‘ক্লাউড সিডিং’। ঠিক যেভাবে ফসলের বীজ বপন করা হয়, তেমন ভাবেই আকাশে মেঘের বীজ বপন করা হয়।
মেঘের বীজ বুনলেই শুধু হল না, তার জন্য উপযুক্ত আবহাওয়ার পরিস্থিতিও দরকার। আইআইটি কানপুরের গবেষকরা বলছেন, কৃত্রিম বৃষ্টির জন্য নির্দিষ্ট আবহাওয়ার প্রয়োজন, যেমন পর্যাপ্ত আর্দ্রতা এবং উপযুক্ত বাতাস। কৃত্রিম বৃষ্টির জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরিতে আবহাওয়ায় খানিকটা রদবদল করা হয়। সে জন্য ড্রোনের মাধ্যমে মেঘের উপর সিলভার আইয়োডাইডের মতো রাসায়নিক অথবা ড্রাই আইস ছড়িয়ে দেন গবেষকরা যাতে সেই মেঘের স্তর বর্ষার কালো মেঘের মতো গাঢ় হয়। এই মেঘের স্তর জমা করা হয় আকাশে।
বাতাসে যে সামান্য পরিমাণ জলীয় বাষ্প থাকে তা এই মেঘে ছড়ানো রাসায়নিক কণার চারপাশে ঘণীভূত হয়ে ছোট ছোট বরফ দানা তৈরি করে। তারপর যেভাবে মেঘ থেকে বৃষ্টি হয় তেমনভাবেই এই বরফ দানা বাতাসের সংস্পর্ষে এসে ঘণীভূত হয়ে বৃষ্টির আকারে নেমে আসে। এই পদ্ধতিকে ‘নিউক্লিয়েশন’ বলা হয়।
দূষণ মোকাবিলায় কৃত্রিম মেঘ তৈরি করে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর বিষয়টি নিয়ে গত ৫ বছর ধরে কাজ করে চলেছে আইআইটি কানপুর। গত জুলাই মাসে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর পরীক্ষাও সফল হয়েছে তাদের। এবার দূষণে জর্জরিত দিল্লি ও সংলগ্ন এনসিআর অঞ্চলে কৃত্রিম বৃষ্টি নামাতে উদ্যত হয়েছে সংস্থা। এই বিষয়ে ডিজিসিএ-র অনুমতি নেওয়া হয়েছে বলেও আইআইটি কানপুর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। কৃত্রিম বৃষ্টি সাময়িকভাবে বায়ু দূষণ থেকে কিছুটা স্বস্তি দিতে পারে বলে জানিয়েছেন আইআইটি কানপুরের অধ্যাপক মণীন্দ্র আগরওয়াল।