বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক
বাবার সঙ্গে মাল বওয়ার কাজ করত ছোট্ট ছেলেটা। দিনমজুরি করে বাবা দিনে আয় করত মেরেকেটে ১০ টাকা। সংসার টানতে হিমশিম খেতে হত। দু’বেলা ভাতও জুটত না ঠিক করে। কিন্তু হার মানেনি সেই ছোট্ট ছেলেটা। লড়াই চালিয়ে গেছে। আর এখন সেই ভারতের বিশিষ্টজনেদের মধ্যে একজন। গোটা ভারতজুড়ে তার নাম। তিন হাজার কোটি টাকার মালিক।
সেই ছোট্ট ছেলেটা আজকের ‘ব্রেকফাস্ট কিং’ পিসি মুস্তাফা। আইডি ফ্রেশ ফুডের মালিক। ভারতীয়দের প্রাতঃরাশ ও জলখাবার তৈরি করে তাঁর সংস্থা। ইডলি-দোসার উপকরণের জন্য আইডি ফ্রেশ ফুড বিখ্যাত। এই সংস্থার তৈরি খাবারের উপকরণ বিদেশেও রফতানি হয়।
কেরলের ওয়ানাড়ে জন্ম। আদার গুদামে কাজ করতেন বাবা। মাল বওয়ার কাজ করতে হত তাঁকে। তাছাড়া দিনমজুরিও করতেন। স্কুল থেকে ফিরেই বাবার সঙ্গে কাজে হাত লাগাত ছোট্ট মুস্তাফা। পরিশ্রম করতে গিয়ে পড়াশোনাটা আর হচ্ছিল না। ক্লাস সিক্সে ফেল করেন। তারপর বোঝেন পড়াশোনা না করলে কোনওভাবেই উন্নতি সম্ভব নয়। তাই বাবার সঙ্গে কাজ করার পাশাপাশি পড়াশোনাতেও মন দেন। কঠোর পরিশ্রমেই সাফল্য আসে। ক্লাস টেনের বোর্ডের পরীক্ষায় প্রথম হন মুস্তাফা।
পড়াশোনার পাশাপাশি তখনও চলছে বেঁচে থাকার লড়াই। তবে ক্লাস টেনের সাফল্য অনেকটাই আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছিল মুস্তাফাকে। আরও ভাল পড়াশোনার চেষ্টা চলতে থাকে তাঁর। এ ভাবেই দ্বাদশের গণ্ডী পেরিয়ে এনআইটিতে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সুযোগ পান। চাকরি পান বহুজাতিক সংস্থাতেও।
মুস্তাফা বলেছেন, “সেই ছোট থেকেই ইনভেস্টমেন্ট ও সঞ্চয়ের দিকে ঝোঁক বাড়ে তাঁর। বাবার যা আয় হত আর নিজের টিফিনের খরচ বাঁচিয়ে রোজ কিছু করে জমা করতেন। এইভাবে ১৫০ টাকা জমিয়ে একটা ছাগল কিনেছিলেন। তারপর সেটা বেশি দামে বেচে একটা গরু কেনেন। পরিবারের সকলে সেই গরুর দুধ খেতেন। কীভাবে টাকা বাড়াতে হয় সেই অভ্যাস তৈরি হয় তখন থেকেই।”
ইউরোপ এবং মধ্য প্রাচ্যের একাধিক সংস্থায় কাজ করেছেন মুস্তাফা। তারপর নিজের ব্যবসা খোলার কথা ভাবেন। ২০০৫ সালে সাড়ে পাঁচশো বর্গফুট একটি অফিসে শুরু হয় তাঁর ব্যবসার কাজ। শুরুতে পাঁচ হাজার কেজি চাল থেকে ১৫ হাজার কেজি ইডলির উপকরণ তৈরি করেছিল মুস্তাফার সংস্থা। মাত্র ৫০ জন কর্মী নিয়ে শুরু হয় কাজ। এক বছরের মধ্যেই বিপুল লাভের মুখ দেখেন। ২০০৬ সাল থেকে পথ চলা শুরু হয় আইডি ফ্রেশ ফুডের।
এখনও পর্যন্ত বার্ষিক আয় কখনও নিম্নমুখী হয়নি সংস্থাটির। শেষ আর্থিক বছরে ২৯৪ কোটি টাকা আয় করেছে মুস্তাফার সংস্থা। যা আগের বছরের ২৩৮ কোটির থেকে ২৩.৫ শতাংশ বেশি। দেশের প্রথম ১০ ‘সেল্ফ মে়ড ম্যান’-এর তালিকায় প্রথমেই আছেন পিসি মুস্তাফা। এখন তিনি প্রত্যন্ত এলাকায় তরুণদের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিচ্ছেন। তাঁর সংস্থা আরও বাড়ছে আর সেখানে কাজ করছেন প্রান্তিক এলাকার তরুণেরাও।