প্রত্যাবাসন বা ডিপোর্ট প্রক্রিয়াকে কার্যকর করতে বড় অভিযানে নেমেছে জার্মানির পুলিশ৷ ইউরোপের দেশটির উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মেকলেনবুর্গ-ফরপর্মানের রাজধানী শ্যোয়েরিনে অভিযান চালিয়ে ডিপোর্টের আদেশ পাওয়া দুই যুবককে আটক করা হয়েছে৷
পুলিশের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, ১৮ এবং ২২ বছর বয়সি দুই তরুণের ডিপোর্টেশন কার্যকর করতে বুধবার ভোরে অভিযান শুরু করে পুলিশ কর্মকর্তারা৷ গির্জার অধীনে আশ্রয় নেয়া ছয় সদস্যের ওই পরিবারটি পুলিশি কাজে বাধা দেয়ার চেষ্টা করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ৷
পুলিশ আরো জানিয়েছে, প্রায় চার ঘণ্টা পরিবারটির সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা করা হয়েছে৷ কিন্তু তাতে কোনো ফল না আসায় পরে বাধ্য হয়ে ফ্ল্যাটে ঢুকে পড়েন পুলিশ কর্মকর্তারা৷ এসময় ২২ বছর বয়সি যুবকটি একটি ভাঙা কাঁচের টুকরো দিয়ে নিজের শরীরে নিজেই আঘাত করেন৷ এসময় মানসিক স্থিতি হারিয়ে ফেলেন ওই তরুণের মা৷
গাড়ি বহরে থাকা অ্যাম্বুলেন্সে করে এই দুই জনকেই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলেও নিশ্চিত করেছে পুলিশ৷
অভিযান শেষে পুলিশ জানিয়েছে, ‘‘তল্লাশিতে মা, তার ২২ বছর বয়সি ছেলে ও কন্যার শরীরে লুকিয়ে রাখা ছুরি পাওয়া গেছে৷’’
হুমকি ও জবরদস্তির জন্য ৪৭ বছর বয়সি ওই মায়ের বিরুদ্ধে ফৌজদারি কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে পুলিশ৷
পুলিশি অভিযানের তীব্র সমালোচনা করেছে দ্য রিফিউজি কাউন্সিল৷ সংস্থাটি বলেছে, গির্জায় আশ্রয় নেয়া লোকেদের সরিয়ে দিতে বলপ্রয়োগ করে সীমা লঙ্ঘন করেছে পুলিশ৷ এর মধ্য দিয়ে জার্মানিতে আশ্রয়প্রার্থী মানুষের কাছে একটি ভীতিকর বার্তাও দিয়েছে পুলিশ৷
এক বিবৃতিতে সংস্থাটি আরো বলেছে, ‘‘ক্রিসমাসেও তারা (আশ্রয়প্রার্থীরা) নিরাপদ বোধ করতে পারছেন না৷ এর মধ্য দিয়ে গির্জার আশ্রয়ণ ব্যবস্থাকেও বার্তা দেয়া হলো৷ কারণ, গির্জা সংশ্লিষ্টরাও এখন অনিশ্চিত যে তারা উদ্বাস্তুদের আশ্রয় এবং আশা দেখাতে পারবেন কিনা৷’’
ছয় সদস্যের ওই পরিবারে ৪৯ বছর বয়সি বাবা, ১৩ বছরের একটি মেয়ে এবং ১০ বছরের একটি ছেলেও রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ৷ তারা সবাই আফগান নাগরিক৷
উত্তর জার্মানির প্রোটেস্ট্যান্ট চার্চের একজন মুখপাত্র বলেন, যে পরিবারটি নিয়ে প্রশ্ন, তাদের পরিবারে ছয় জন সদস্য রয়েছেন৷ তারা সবাই আফগানিস্তান থেকে এসেছেন৷ ওই পরিবারের প্রাপ্তবয়স্ক দুই সন্তানকে স্পেনে ডিপোর্ট করার সিদ্ধান্ত হয়েছে৷ কারণ, তারা দুই জন স্পেন হয়েই প্রথম ইউরোপীয় ইউনিয়নে এসেছেন৷
জার্মানির উত্তরাঞ্চলীয় শহর কীলের অভিবাসন কর্তৃপক্ষ ডিপোর্টের এই নির্দেশ দিয়েছে৷
একজন স্থানীয় বাসিন্দা জানিয়েছেন, বুধবার সকালে ওই বাড়ির সামনে পুলিশের দুটি গাড়ি এসে থামে৷ কিছুক্ষণ পরই একজন নারীর চিৎকার শোনা যায়৷ পুলিশের দাবি, ওই নারী তার দুই সন্তানের নির্বাসন ঠেকানোর চেষ্টা করেছিলেন৷
-সূত্র ডয়চেভেলে