Home সারাদেশ এক কিলোমিটার খালের ওপর ৪৪ সেতু

এক কিলোমিটার খালের ওপর ৪৪ সেতু

সংগৃহীত ছবি

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি

সোনাইমুড়ী (নোয়াখালী): সোনাইমুড়ী উপজেলায় চলছে খাল দখলের মহোৎসব। খাল দখল করে নির্মাণ করা হয়েছে মার্কেট ও বসতবাড়ি। এছাড়া সোনাইমুড়ী-ছাতারপাইয়া খালের ১ কিলোমিটারের মধ্যেই অবৈধ ভাবে তৈরী হয়েছে ৪৪টি সেতু। বর্তমানে খালে বাঁধ দিয়ে নতুন করে কংক্রিট দিয়ে ফিলার নির্মাণ করে নির্মাণ হচ্ছে আরও ২টি সেতু।

সোনাইমুড়ী জোড় পোল থেকে ছাতার পাইয়া সড়কের পাশে ঘেঁষে বয়ে গেছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন সোনাইমুড়ী-ছাতারপাইয়া খাল।  দৈর্ঘ্য ৪.৩৫০ কিলোমিটার ও চেইনেজ ৪.৩৫০ কিলোমিটার। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে এই প্রথম গত শীত মৌসুমে খালটি খননের কথা থাকলেও অদৃশ্য ইশারায় তা বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে সেটি দখল-দূষণে অস্তিত্বের সংকটে। সেই সাথে খালের মুখে ব্যক্তি মালিকানাধিন বিভিন্ন সেতু তৈরী করে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে পানি প্রবাহ। ফলে বর্ষার মৌসুমে সৃষ্টি হলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এখানে ৪৩ হাজার ৯০০ টি কৃষক পরিবার রয়েছে। বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ হাজার ৫৯৫ হেক্টর জমিতে। সেগুলোতে পানি দেয়ার জন্য শক্তিশালী সেচ যন্ত্র রয়েছে ২ হাজার ২৬২টি। বছরের পর বছর ধরে এই খালটি খনন না করায় শুকনো মৌসুমে বোরো ধান আবাদ করা যাচ্ছেনা। পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায়  সেচ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা।

মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সোনাইমুড়ী জোড়া পোল থেকে শুরু হওয়া খালের ওপরে প্রায় ১০০ টি দোকান তুলে মার্কেট নির্মাণ করা হয়েছে। মার্কেটের পর থেকে বাকি ১ কিলোমিটার খালের ওপর তৈরী হয়েছে ৪৪টি সেতু। এর মধ্যে ইট-পাথর দিয়ে তৈরী হয়েছে ২৫টি সেতু। যেগুলোর কারনে খালর পানি চলাচল স্থবির হয়ে গেছে। আর এই ২৫ সেতুর মধ্যে জনসাধারণের চলাচলে ব্যবহার হয় মাত্র ৫টি, বাকি ২০টি সেতু ব্যবহার হয় ব্যক্তি প্রয়োজনে। এছাড়া এই খালের ওপরে কাঠ-বাঁশ-পিলার দিয়ে ১৮টি ও স্টিল দিয়ে তৈরী হয়েছে ৩টি সেতু।

এলাকাবাসী অভিযোগ করে জানায়, এই খাল স্বাধীনতার পরে কখনো খনন হয়নি। আর দখলের কারনে দিনে-দিনে খাল সংকোচিত হয়ে যাচ্ছে। ফলে পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, কৃষি জমিতে সেচ কাজ ব্যাহত হচ্ছে। আর আসন্ন বর্ষা মৌসুমে কৃষি জমিতে স্থায়ী জলাবদ্ধতা সহ এলাকা পানিতে তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।খাল দখল করে সেতু নির্মাণের বিষয়ে এলাকার সাধারণ কৃষক ও এলাকাবাসীর ক্ষোভ থাকলেও কর্তৃপক্ষ নিরব রয়েছে বলে জানা গেছে।

সোনাইমুড়ী পৌর তহসিলদার আনোয়ার হোসেন বলেন, এই সড়কের উত্তর পাশ ১ নং খতিয়ানের খাস সম্পত্তি। তবে খালের উপর অনুমতি ব্যতিত নির্মাণ কাজ চলছে কী না তা তিনি অবগত নন। সহকারি কমিশনার ভূমির নির্দেশে ঘটনাস্থলে গিয়ে নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন।

নোয়াখালীর পওর বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মুন্সি আমির ফয়সাল জানান, সোনাইমুড়ী বাজার হয়ে ৫০০ মিটার খাল খননের আওতায় আসেনি। এর কারণ ওই স্থানে অবৈধ স্থাপনা রয়েছে। এগুলো উচ্ছেদ হলে পরে খনন করা হবে।তবে খাল দখল করে সরকারি অনুমতি না নিয়ে ব্রিজ করা নিয়ম বহির্ভূত।

সোনাইমুড়ী উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি শাহীন মিয়া জানান, মৌখিক অভিযোগ পেয়ে খালের উপর নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন।  বর্তমানে দুটি সেতুর কাজ নির্মাণাধীন আর বাকিগুলো আগেই নির্মিত হয়েছিল।

সোনাইমুড়ি পৌরসভার মেয়র নুরুল হক চৌধুরী বলেন, এলাকার জনগণ খালের উপর ব্রিজ নির্মাণ করছে। এটা সত্য। তবে তার কিছুই করার নেই।