কনজেশন সারচার্জ রেফার কন্টেইনারে
বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
চট্টগ্রাম: বন্দরে বিরাজমান জাহাজ ও কন্টেইনার জট পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন ফিডার অপারেটরদের সংগঠন সিঙাপুর ভিত্তিক এশিয়ান ফিডার ডিসকাসন গ্রুপ (এএফডিজি)। চলতি সপ্তাহে পর্যালোচনা বৈঠকে বসছে সংস্থাটি। অপরদিকে, চট্টগ্রাম বন্দরমুখী রেফার কন্টেইনারে কনজেশন সারচার্জ আরোপের ঘোষণা দিয়েছে দুই মেইন লাইন অপারেটর (এমএলও)।
আমদানিকারকরা তাদের পণ্যের কন্টেইনার ডেলিভারি না নেয়ায় ভয়াবহ রকমের জটে নাস্তানাবুদ বন্দর। জায়গা না থাকায় জাহাজ থেকে কন্টেইনার নামানোর গতি স্থবির হয়ে পড়েছে। বার্থ নেয়ার পর যে জাহাজ ৪৮ ঘণ্টা থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে নোঙর তোলার কথা সেটা ৫দিনেও যেতে পারছে না। আর বার্থ খালি না হওয়ায় ভিতরে আসতে পারছে না অপেক্ষমান জাহাজ। কয়েক মাস আগেও কন্টেইনার নিয়ে আসা জাহাজ সরাসরি বা পৌঁছার পরের জোয়ারে প্রবেশ করেছে। সেখানে এখন বহির্নোঙরে আসার পর সেখানে অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে ৮ দিন থেকে ১০ দিন। ফিডার জাহাজগুলোর প্রতিটির ২৪ ঘণ্টায় ব্যয় কমপক্ষে ১০ হাজার মার্কিন ডলার।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সংকট নিরসনে চট্টগ্রাম বন্দর প্রশাসন, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রচেষ্টা অব্যাহতভাবে। দু’দফায় শতভাগ স্টোররেন্ট মওকুফের ঘোষণা দেয়া হয়েছে।আমদানিকারকদেরও অনুরোধ জানানো হয়েছে। কিন্তু প্রত্যাশিত কোন সুফল নেই। আমদানিকারকদের অনেকের শিল্প-কারখানায়, গুদামে জায়গা নেই। চলমান লকডাউন, সাধারণ ছুটির মধ্যে ট্রেইলার, ট্রাক পাওয়া যাচ্ছে না মাল নেয়ার জন্য। অন্যদিকে, প্রতিদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে ডেমারেজ ও সারচার্জ।
শিপিং সংশ্লিষ্টরা জানালেন, ফিডার অপারেটররা বিশাল ক্ষতির মুখে বন্দরের চলমান অবস্থায়। ফিডার অপারেটরদের সংগঠন সিঙাপুর ভিত্তিক এশিয়ান ফিডার ডিসকাসন গ্রুপ (এএফডিজি) সার্বক্ষণিকভাবে খোঁজ নিচ্ছে পরিস্থিতি সম্পর্কে। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি পর্যালোচনায় এএফডিজি’র বৈঠকের সম্ভাবনা রয়েছে। বিদ্যমান পরিস্থিতি, তা নিরসনে বন্দরের নেয়া বিভিন্ন উদ্যোগ এবং সংকট নিরসন হতে কতদিন লাগবে সে সম্পর্কে বিস্তারিত অবহিত হয়ে অপারেটররা তাদের ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার কর্মসূচি নিতে পারে বলে জানান শিপিং এজেন্টরা।
রেফার কন্টেইনারে কনজেশন সারচার্জ
দু’টি এমএলও চট্টগ্রাম বন্দরমুখী রেফ্রিজারেটেড কন্টেইনারে কনজেশন সারচার্জ আরোপের নোটিস দিয়েছে। ওসেন নেটওয়ার্ক এক্সপ্রেস ( ওএনই ) প্রাইভেট লিমিটেড তা কার্যকর করবে ৩ মে থেকে। প্রতি কন্টেইনারে এর পরিমান ১ হাজার মার্কিন ডলার। স্বাভাবিক ফ্রেইটের সাথে যোগ হবে সারচার্জ।
সিএমএ সিজিএম কার্যকর করবে ১০ মে থেকে। তারা কনজেশন সারচার্জ আদায় করবে প্রতি কন্টেইনারে ১৩০০ ডলার করে।
রেফ্রিজারেটেড কন্টেইনারে এমন চড়া হারে সারচার্জ কার্যকর হলে দামে ফলমূল এবং আরও কিছু পণ্যের দর বেড়ে যাবে প্রচুর। তা বহন করতে হবে ভোক্তাদের ।
৫ দিনেও জাহাজ নোঙর তুলতে পারছে না: আহসানুল
বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান আহসানুল হক চৌধুরী-এর সাথে যোগাযোগ করা হলে জানান, চট্টগ্রাম বন্দরের ইতিহাসে এমন সংকট শতবছরের ইতিহাসে এই প্রথম। প্রতিদিনি ৪ হাজার থেকে সাড়ে ৪ হাজার টিইইউস কন্টেইনার ডেলিভারি হতো বন্দর থেকে। সেটা এখন ৮০০ টিইইউসের বেশি না। তাতে বন্দরে তিল ধারণের ঠাই নেই। জাহাজ থেকে কন্টেইনার নামিয়ে রাখার জায়গা নেই। তাতে জাহাজ সময় মত ফিরে যেতে পারছে না। ৪৮ ঘণ্টা থেকে ৭২ ঘণ্টায় যে জাহাজ ফিরে যাওয়ার কথা সেটা ৫দিনেও যেতে পারছে না। অন্যদিকে, বার্থ পাওয়ার জন্য জাহাজকে বহির্নোঙরে এসে অপেক্ষা করতে হচ্ছে ১০ দিন পর্যন্ত।
অপারেটররা বড় ক্ষতির মুখে: ক্যাপ্টেন চৌধুরী
বাংলাদেশ কন্টেইনার শিপিং এসোসিয়েশনের জেনারেল সেক্রেটারি ক্যাপ্টেন এ এস চৌধুরী জানান, ফিডার অপারেটররা চট্টগ্রাম বন্দরের বর্তমান অবস্থায় বড় অংকের ক্ষতির সম্মুখীন। বার্থ পাওয়ার জন্য ৩০টির বেশি কন্টেইনার জাহাজ অপেক্ষা করছে বহির্নোঙরে। তাতে দৈনিক ক্ষতির পরিমাণ সাড়ে ৩ কোটি। এই বাড়তি ব্যয় সমন্বয় করার জন্য সিঙাপুরে বৈঠকে বসছে এএফডিজি। চলতি সপ্তাহে সেখান থেকে পরবর্তী কর্মসূচি নেয়া হবে।