বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
সিলেট: সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি আবুল হোসেন মোহাম্মদ শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে আটক করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। শুক্রবার (২৩ আগস্ট) রাতে সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার সীমান্তবর্তী দনা এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়।
বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফুল ইসলাম আটকের তথ্য নিশ্চিত করে জানান,
সাবেক বিচারপতি মানিক সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। এসময় স্থানীয় জনগণের হাতে তিনি ধরা পড়েন। পরে বিজিবি তাকে আটক করে।
এদিকে বিচারপতি মানিক বিজিবির হাতে আটক হওয়ার আগে তার একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে দেখা গেছে, মানিক জঙ্গলের ভেতরে কলাগাছের পাতায় শুয়ে আছেন।
ভিডিওতে বিচারপতি মানিককে একজনের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যাচ্ছে। তার কথায় মনে হচ্ছে, তখন তিনি ভারতের মধ্যে অবস্থান করছিলেন।
এ সময় তার সামনে অবস্থান করা একজনকে মানিক বলছেন, ‘আমি তোমাদের পয়সা দিয়ে দেব। পয়সা আমি দেব, আমার ভাই-বোন দেবে।
জবাবে ওই ব্যক্তিকে (যাকে ভিডিওতে দেখা যায়নি) বলতে শোনা যায়, ‘আমাদের পয়সার প্রয়োজন নাই। আপনার সেফটি….।
এরপরই মানিক বলেন, ‘ওই ফালতু লোক দুটাকে আনিও না। আমি এ দেশে এসেছি কি বাংলাদেশে ফেরত যাওয়ার জন্য’।
অপরদিকে বিচারপতি মানিককে আটকের পর আরেকটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, বিজিবি সদস্যরা তার পরিচয় জানতে চান। নিজের পরিচয় স্বীকার করে মানিক বলেন, ‘আমি বিচারপতি মানিক’।
দেশ ছেড়ে পালাচ্ছিলেন কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে মানিক বলেন, ‘প্রশাসনের ভয়ে আমি দেশ ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করেছি’।
সঙ্গে কী আছে জানতে চাইলে মানিক বলেন, গতকাল আমার কাছে অনেক টাকা ছিল। আমাকে মেরে ৬০-৭০ লাখ টাকা নিয়ে গেছে দুজন। এখন আমার সঙ্গে ব্রিটিশ পাসপোর্ট, বাংলা পাসপোর্ট আর কিছু টাকা আছে।
বিজিবি সদস্যদের এক প্রশ্নের জবাবে মানিক বলেন, আমি কোনো জুলুম করিনি।
এর আগে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য করায় সাবেক বিচারপতি মানিকের বিরুদ্ধে গত ১৯ আগস্ট নোয়াখালীর আদালতে মামলা করা হয়। জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক রবিউল হাসান পলাশ বাদী হয়ে নোয়াখালী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ১নং আমলি আদালতে মামলাটি করেন।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, জিয়াউর রহমান সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য করেন সাবেক বিচারপতি আবুল হোসেন মোহাম্মদ শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। তিনি বলেছিলেন ‘জিয়াউর রহমান মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না, ছিলেন পাকিস্তানের চর’। জিয়াউর রহমানের ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক পরিচয়ে মিথ্যাচারসহ কালিমা লেপনের হীন উদ্দেশ্যে ইচ্ছাকৃতভাবে মানহানিকর বক্তব্য দেন তিনি। যা প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক ও সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত হয়। তার এমন মন্তব্যে জিয়াউর রহমান ও তার পরিবারের সম্মান ক্ষুণ্ন হয়েছে। বিশেষ করে গত জুলাই মাসে ছাত্র আন্দোলনের সময় চ্যানেল আই-তে প্রচারিত টকশোতে মানিক কুরুচিপূর্ণ, নারী বিদ্বেষী, অপমানজনক বক্তব্য ও আচরণ করেন, যা সারা দেশবাসী দেখেছে এবং তা সোশ্যাল মিডিয়াতে ভাইরাল হয়।
কোটা আন্দোলন ইস্যুতে সম্প্রতি একটি টেলিভিশন চ্যানেলে আয়োজিত টকশোতে আলোচক হিসেবে হিসেবে অংশ নেন সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। কিন্তু আলোচনার একপর্যায়ে মেজাজ হারিয়ে সঞ্চালক দীপ্তি চৌধুরীর ওপর ক্ষিপ্ত হন তিনি। পুরো অনুষ্ঠানে বেশ কয়েকবার উপস্থাপিকার ওপর নিজের ক্ষোভ ঝাড়েন এবং উচ্চবাচ্য করেন। শুধু তা-ই নয়, তিনি অনুষ্ঠান শেষে স্টুডিও ছাড়ার আগে উপস্থাপিকাকে ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলে আখ্যা দেন। ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়।
পরে উপস্থাপিকা দীপ্তি চৌধুরীকে রাজাকারের বাচ্চা বলে সম্বোধন ও অশালীন আচরণের ঘটনায় ক্ষমা চেয়েছেন সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। একই সঙ্গে তিনি জনগণের কাছেও ক্ষমা প্রার্থনা করেন। সোমবার (১২ আগস্ট) তাকে (বিচারপতি মানিক) লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট ফাওজিয়া করিম ফিরোজের কাছে লিখিতভাবে এ ক্ষমা প্রার্থনা করেন তিনি।
এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক আপিল বিভাগের বিচারপতি ছিলেন। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে তিনি অবসরে যান। এরপর বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও টেলিভিশন টক শোতে কথা বলতেন তিনি।