বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শাখা ছাত্রদলের নবগঠিত আহ্বায়ক কমিটিকে ‘অনিয়মিত ছাত্র ও ছাত্রলীগ নিয়ে পকেট কমিটি’ আখ্যা দিয়ে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে সংগঠনের একটি অংশ।
আজ মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০০৮-০৯ শিক্ষাবষের ছাত্র মেহেদী হাসান হিমেলকে আহ্বায়ক ও বাংলা বিভাগের ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষের শামসুল আরেফিনকে সদস্যসচিব করে ২১ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়। পরে সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করে শাখা ছাত্রদলের কয়েকটি পক্ষ।
বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী নেতাকর্মীরা বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের যেসব নেতাকর্মীরা আন্দোলন-সংগ্রামে নিজের জীবনকে উপেক্ষা করে দলীয় কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে, সেসব নেতাকর্মীদের উপেক্ষা করে অনিয়মিত ও শাখা ছাত্রদলের ব্যানারে আন্দোলন না করা কর্মীদের কমিটি দেওয়া হয়েছে। এমনকি বিগত ১৫ বছরে ফ্যাসিস্ট হাসিনার আমলে যারা সর্বাধিক কারাভোগ করেছে, তাদেরকেও রাজনীতি থেকে মাইনাস করার একটি পাঁয়তারা হিসেবে এ কমিটি দেওয়া হয়েছে।
কমিটিতে পদ পাওয়া একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করে বলেন, যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে আহ্বায়ক কমিটি দেওয়া হয়েছে, তার বিন্দুমাত্র উদ্দেশ্য পূরণ করতে পারবে না এ কমিটি। বরং ক্যম্পাসে ছাত্রদলের গৌরবোজ্জ্বল ইমেজকে নষ্ট করে বিভেদের সৃষ্টি করবে এ কমিটি। তাই তারা এ কমিটিতে প্রত্যাখ্যান করেন। কেন্দ্রীয় নেতারা নিজেদের মাইম্যানকে ইউনিটগুলোতে বসাতে গিয়ে ত্যাগীদের সাথে তামাশা শুরু করেছে বলেও অভিযোগ তাদের।
জবি ছাত্রদলের সাবেক সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক আব্দুস শুকুর আইমান বলেন, ‘দীর্ঘ দিন পরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটি হয়েছে। এই কমিটিতে বিগত দিনে যারা আন্দোলন-সংগ্রামে জীবনবাজি রেখে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রাজপথে থেকেছে, তাদের বাদ দিয়ে নিজস্ব মাই ম্যান সেটাপ করতে সিন্ডিকেট করে ‘পকেট কমিটি’ গঠন করেছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে অ্যাকটিভ দুটা ব্যাচের নবম এবং একাদশ ব্যাচের কাউকে কমিটিতে রাখা হয়নি, ছাত্রলীগ থেকে ৫ তারিখের পরে ছাত্রদলে যোগ দেওয়া ছেলেদের কমিটিতে রাখা হয়েছে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র না হয়েও এই কমিটিতে স্থান পেয়েছে—সুতরাং এই কমিটি আমরা ৪৫ দিন নয় এক দিনও মানি না।’
জবি ছাত্রদলের সাবেক মানবাধিকারবিষয়ক সম্পাদক ইয়াসির আরাফাত বলেন, ‘আমরা অংশগ্রহণ মূলক রাজনীতি চাই। যারা ৫ আগস্টের পরে রাজনীতিতে এসেছে, এমন অনেককেই কমিটিতে দেখছি, অথচ অনেক সিনিয়র ও অভিজ্ঞদের কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। রাজনীতিতে সকলেই সম্মিলিত অংশগ্রহণ ব্যতীত স্বচ্ছতা সম্ভব নয়।’
বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করা তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ও শাখা ছাত্রদলের কর্মী আতিকুর রহমান তানজিল বলেন, ‘যারা আন্দোলন-সংগ্রামের ব্যানার ধরার জন্য দ্বিতীয় ব্যক্তি খুঁজে পেত না, তারা এখন নেতা।
যারা ছাত্রলীগ করে ৫ তারিখের পরে ছাত্রদলে আসছে, সেও কমিটিতে আসছে। আমরা এ কমিটিকে মানি না। আগামীর রাষ্ট্রনায়ক তারেক রহমানের কাছে দাবি জানাই, অযোগ্যদের নিয়ে ঘোষিত এ কমিটিকে বাতিল করে যারা সবচেয়ে বেশি ত্যাগ শিকার করে ছাত্রদলের পতাকাকে সমুন্নত করেছে, তাদের এবং ক্যাম্পাসে রানিং শিক্ষার্থীদের আস্থাভাজনদের হাতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের নেতৃত্ব দেওয়া হোক।’
এর আগে দুপুরে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছিরের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে মেহেদী হাসান হিমেলকে আহ্বায়ক ও শামসুল আরেফিনকে সদস্যসচিব করে এ কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটির অনন্যরা হলেন যুগ্ম আহ্বায়ক জাফর আহমেদ, সুমন সরদার, মোস্তাফিজুর রহমান রুমি, মো. শাহরিয়ার হোসেন, মাহমুদুল হাসান খান মাহমুদ, কাজী রফিকুল ইসলাম, নাহিদ চৌধুরী, নাহিয়ান বিন অনিক, রবিউল আউয়াল, শাখাওয়াত ইসলাম খান পরাগ, রাসেদ বিন হাসিম, জাহিদুল ইসলাম জাহিদ, মাইন উদ্দীন চৌধুরী মাইন, মেহেদী হাসান রুদ্র, মোহাম্মদ মোজাম্মেল মামুন ডেনি, হাসিবুল ইসলাম হাসিব, রবিন মিয়া শাওন ও শামীম মিয়া।
সদস্যরা হলেন মোহাম্মদ রিয়াসাল রাকিব, মোবাইদুর রহমান, এম তানভীর রহমান, আবু হেনা মোরসালিন, ইমরান হোসেন ইমন, মাহিদ হোসেন, মাশফিকুল রাইন।