বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, রাজশাহী: রাজশাহীতে ছাত্রাবাসে ঢুকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক সমন্বয়ককে হাতুড়ি পেটা করেছে দৃর্বৃত্তরা। হাতুড়ি ছাড়াও তাকে লাঠি ও রড দিয়েও পেটানো হয়। ঘটনার পর তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়েছে।
আহত সমন্বয়কের নাম নুরুল ইসলাম শহীদ। তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) অন্যতম সমন্বয়ক। রাবির ক্রপ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের লেভেল-২ এর দ্বিতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী। গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরে। চার বছর ধরে তিনি নগরের ষষ্ঠীতলা এলাকার ‘কিউট ছাত্রাবাস’-এ থাকেন। মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে এই ছাত্রাবাসেই তার ওপর হামলা হয়। ২০ থেকে ২৫ জন ব্যক্তি তাকে মারধর করেছেন বলে জানিয়েছেন সমন্বয়ক নুরুল ইসলাম শহীদ।
এদিকে, এ ঘটনার প্রতিবাদে রাবিতে মানববন্ধন করা হয়েছে। বুধবার দুপুরে রাবির প্যারিস রোডে এ কর্মসূচির আয়োজন করে স্টুডেন্টস রাইটস অ্যাসোসিয়েশন। মানববন্ধন থেকে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হয়।
আহত সমন্বয়ক নুরুল ইসলাম শহীদ জানান, রাতে তিনি তার কক্ষে বসে ভাত খাচ্ছিলেন। তখন অজ্ঞাত এক ব্যক্তি ছাত্রাবাসে এসে প্রতিটি কক্ষের দরজা ধাক্কা দিয়ে কাউকে খুঁজতে থাকেন। খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, ছাত্রাবাসে বাইরে থেকে এক ব্যক্তি এসে ঢুকে লুকিয়েছেন। ওই ব্যক্তিকেই খোঁজা হচ্ছে। তিনি বের হয়ে নিজেও খুঁজতে শুরু করেন।
এরপর চারতলার রান্নাঘরে শামিম নামের ওই ব্যক্তিকে পাওয়া যায়। যারা শামিমকে খুঁজতে এসেছিলেন তাদের কাছে তাকে হস্তান্তর করার জন্য তাদেরকে ডাকছিলেন তিনি। এরইমধ্যে ছাত্রাবাসে ঢুকে পড়েন শামিমের পক্ষের ২০-২৫ জন ব্যক্তি। তারা কোনকিছু না শুনেই সমন্বয়ক নুরুল ইসলাম ও ছাত্রাবাসের মালিক রোকন উদ্দীনকে মারধর শুরু করেন।
সমন্বয়ক নুরুল ইসলাম শহীদ জানান, তাকে হাতুড়ি, রড ও লাঠি দিয়ে মারধর করা হয়েছে। বহিরাগত ব্যক্তিরা মারধর করে চলে যাওয়ার পর হাসপাতালে গিয়েছিলেন। হাতুড়ি ও রডের আঘাতে হাত ভেঙে গিয়েছে বলে তিনি আশঙ্কা করেছিলেন। তবে এক্স-রে করে দেখেছেন, হাত ভাঙেনি। তাই হাসপাতাল থেকে চলে এসেছেন। এখনও শরীরে প্রচণ্ড ব্যাথা রয়েছে। পরিবার ও বড় ভাইদের সঙ্গে আলোচনার পর তিনি মামলা করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।
নগরের বোয়ালিয়া থানার ওসি মেহেদী মাসুদ জানান, হৃদয় ও মোস্তক মিল্টন নামের দুই তরুণের দ্বন্দ্ব আছে প্রেমঘটিত বিষয়ে। রাতে হৃদয় ওই এলাকায় মিল্টনকে ধরে আনে। সেখানে হৃদয়ের দুলাভাই শামিমও আসেন। খবর পেয়ে মিল্টনের লোকজন তাদের ধাওয়া দেয়। এ সময় শামিম গিয়ে ওই ছাত্রাবাসে লুকিয়ে পড়েন। পরে শামিমের লোকজন তাকে উদ্ধারে ছাত্রাবাসে ঢুকে দেখেন, সমন্বয়ক নুরুলের কাছে শামিম। নুরুলই তাকে আটকে রেখেছেন, এই ধারণা করে তাকে মারধর করা হয়েছে। আসলে এটা ভুল বোঝাবুঝি।
ওসি বলেন, ‘খবর পেয়ে আমরা সমন্বয়ক নুরুলের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। ঘটনাস্থলে পুলিশও গিয়েছিল। নুরুল চাইলে মামলা করতে পারেন। মামলা করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’