বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন আহূত কর্মবিরতি প্রত্যাহার করা হয়েছে। বুধবার ভোর থেকেই শুরু হয়েছে রেল চলাচল। রাজশাহী থেকে সাগরদাঁড়ি এক্সপ্রেস ৬টা ১০ মিনিটে খুলনার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি সাইদুর রহমান। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. মজিবুর রহমান রাত আড়াইটার দিকে ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়ে বলেন, বুধবারের মধ্যে আমাদের বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেনরেলওয়ে উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। আমরা জনদুর্ভোগ চাই না। দুঃখ প্রকাশ করছি। এখন থেকে ধর্মঘট বাদ দিচ্ছি। কর্মবিরতি প্রত্যাহার করলাম।
এর আগে সোমবার দিনগত রাত ১২টা থেকে মঙ্গলবার রাত আড়াইটা পর্যন্ত মোট সাড়ে ২৬ ঘণ্টা সারাদেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল।
শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে নিজ বাসভবনে মঙ্গলবার মধ্যরাতে বৈঠকে বসেন রেলওয়ে উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। বৈঠকে বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী এবং জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সমন্বয়ক শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস এবং বৈঠকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহও উপস্থিত ছিলেন।
সোমবার (২৭ জানুয়ারি) দিবাগত রাত ১২টা থেকে সারা দেশে কর্মবিরতি পালন করেন রেলওয়ের রানিং স্টাফরা। এদের মধ্যে রয়েছেন লোকো মাস্টার, গার্ড, সহকারী চালক এবং ভ্রাম্যমাণ টিকিট পরীক্ষক (টিটিই)।
২২ জানুয়ারি সংবাদ সম্মেলন করে মাইলেজের ভিত্তিতে পেনশন ও আনুতোষিক প্রদান এবং নিয়োগপত্রের দুই শর্ত প্রত্যাহারসহ বিভিন্ন দাবি জানিয়েছিলেন রেলের রানিং স্টাফরা। তা না হলে ২৮ জানুয়ারি থেকে ট্রেন চলাচল বন্ধের হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন।
কর্মবিরতি থেকে সরে আসতে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের ভিআইপি রুমে রানিং স্টাফদের নিয়ে বৈঠকে বসেছিলেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ফাহিমুল ইসলাম। এতে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী ও জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসও। কিন্তু বৈঠকে কোনো সুরাহা না হওয়ায় রানিং স্টাফরা বেরিয়ে আসেন।
প্রায় ১৭০০ রানিং স্টাফ কর্মচারী রয়েছে। এই রানিং স্টাফরা হলেন গার্ড, ট্রেনচালক (লোকোমাস্টার), সহকারী চালক ও টিকিট পরিদর্শক (টিটিই)। দৈনিক কর্মঘণ্টা ৮ ঘণ্টা হলেও রানিং স্টাফদের গড়ে ১৫ ঘণ্টার বেশি কাজ করতে হয়। এজন্য দূরত্ব অনুযায়ী তাদের বিশেষ আর্থিক সুবিধা দেয়া হয়, যাকে বলা হয় মাইলেজ। এটা তাদের বেতনের অংশ। প্রতি ১০০ কিলোমিটার ট্রেন পরিচালনা করলে তারা মূল বেতনের একদিনের বেসিকের সমপরিমাণ টাকা অতিরিক্ত পেতেন। এছাড়া মূল বেতনের হিসাবে অবসরকালীন ভাতা যা হয়, তার সঙ্গে অতিরিক্ত আরও ৭৫ শতাংশ টাকা বেশি দিয়ে তাদের পেনশন দেয়া হতো।
২০২২ সালের জানুয়ারিতে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে রানিং স্টাফদের সেই সুবিধা বাতিল করা হয়। এরপর থেকে বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ঐক্য পরিষদে ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন করে আসছে।