বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, চুয়াডাঙ্গা: চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার মাত্র একটি বিদ্যালয় ব্যতীত ১২১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ রেখে মিলনমেলা ও বনভোজন আয়োজন করেছেন শিক্ষক ও শিক্ষক সমিতির নেতারা।
স্কুল বন্ধ রেখে বনভোজন আয়োজন করায় বিষয়টি নিয়ে অভিভাবক মহলে শুরু হয় তীব্র সমালোচনা। একপর্যায়ে তাৎক্ষণিক ছুটি বাতিল করে বিদ্যালয় খোলার নির্দেশ দেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার। এছাড়া শিক্ষকদের ছুটি মঞ্জুর করার কারণেে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে শোকজ করা হয়েছে। এক দিনের মধ্যে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।
গতকাল সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) চুয়াডাঙ্গা বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা শাখার ব্যানারে আক্কাছ লেক ভিউ পার্ক অ্যান্ড রিসোর্টে এ আয়োজন করা হয়।
এদিকে, কীভাবে ও কেন ছুটি দিয়েছে তা জানতে চুয়াডাঙ্গা উপজেলার শিক্ষা অফিসার লাইলা তাসলিমা নাসরিনের কাছে ব্যাখ্যা তলব করেছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস। আজ মঙ্গলবারের মধ্যে তাকে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।
জানা যায়, স্কুল বন্ধ রেখে এই আয়োজন করায় আলোচনার জন্ম হলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, উপজেলা শিক্ষা অফিসার, সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারসহ প্রায় সব কর্মকর্তা কর্মচারী দাওয়াত পেলেও শেষ পর্যন্ত বেশ কয়েকজন যোগ দেননি।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে সংরক্ষিত ছুটির আবেদন করা হয়। প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আমাদের ছুটি মঞ্জুর করেন। এরপরই আমরা মিলনমেলা ও বনভোজনের আয়োজন করি। আয়োজন চলাকালীন সময়ে হঠাৎ আমাদের জানানো হয় ছুটি বাতিল করা হয়েছে। তখনই স্কুল খোলার নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপরই দুপুর ২টার মধ্যে আমরা গুছিয়ে বের হই।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষকরা বছরে তিনটি সংরক্ষিত ছুটি পেয়ে থাকেন। সেই ধারাবাহিকতায় আমরা ছুটি পাস করিয়ে আয়োজন করেছিলাম। তবে কয়েকটা বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অংশগ্রহণ না করায় তাদের বিদ্যালয় খোলা ছিল। এ বিষয়টি এখন কেন প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে তা আমার জানা নেই।
বনভোজনে অংশ নেওয়া এক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আগে কখনোই বিদ্যালয় বন্ধ রেখে এভাবে প্রাথমিক শিক্ষকদের বনভোজন আয়োজন হয়নি। বনভোজনের জন্য প্রত্যেক শিক্ষকের কাছ থেকে বাধ্যতামূলক ৫০০ টাকা করে চাঁদা নেওয়া হয়। কিন্তু আয়োজনে ত্রুটি থাকায় শেষ পর্যন্ত অনেক শিক্ষক খাবার পায়নি বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার লাইলা তাসলিমা নাসরিন বলেন, শিক্ষা অফিসারের অনুমতিক্রমে প্রধান শিক্ষকরা বছরে তিন দিন সংরক্ষিত ছুটি নিতে পারেন। শিক্ষক সমিতির যারা আছেন উনারা চাইছিলেন তাদের আয়োজনে পিকনিক করবেন। তাই ১২১টি বিদ্যালয়ের সব শিক্ষক সংরক্ষিত ছুটির জন্য আবেদন করেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে আমি ছুটি দেই।
তিনি আরও বলেন, এর আগে কখনো এমন হয়নি। শিক্ষকরা সংরক্ষিত ছুটি নিয়ে থাকেন। আয়োজন চলাকালীন সময়ে ছুটি বাতিল করা হলে সকল শিক্ষকরা তাদের বিদ্যালয়ে যায় এবং ক্লাস শুরু করেন। এ বিষয়ে ব্যাখ্যা জানতে চেয়েছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার। আমি ব্যাখ্যা দেব।
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার অহীন্দ্র কুমার মন্ডল বলেন, বিষয়টি জানার সঙ্গে সঙ্গে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ছুটি বাতিল করে বিদ্যালয় খোলা হয়েছে। সারাদিন ক্লাসও হয়েছে। ছুটি কীভাবে দিয়েছিলেন, কেন দিয়েছেন তা জানতে সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে ব্যাখ্যা তলব করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবারের মধ্যে ব্যাখ্যা জানাতে বলা হয়েছে।