বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম: বাংলাদেশে শিপিং এজেন্টস এসোসিয়েশন ( বিএসএএ ) নির্বাচন ১৩ এপ্রিল। মাঝখানে মাত্র পাাঁচদিন। কিন্তু নির্বাচন নিয়ে এখনও সংশয় সাধারণ ভোটারদের মধ্যে। ক্ষমতাসীন ‘সম্মিলিত পরিষদ’ প্রার্থীরা শিপিং পাড়ায় অফিস থেকে অফিসে ঢুঁ মারছেন আবারও তাদের বিজয় নিশ্চিত করতে। অপরদিকে, ‘বৈষম্যের শিকার ব্যবসায়ী ফোরাম’ যে কোন মূল্যে এই নির্বাচন প্রতিহত করার দৃঢ় প্রত্যয় ঘোষণা করেছে। রবিবার তারা আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকায় শোডাউন করেছেন।
শিপিং এজেন্টস এসোসিয়েশন-এর সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান ও সম্মিলিত পরিষদ প্যানেল থেকে প্রার্থী সৈয়দ ইকবাল আলী জানান, একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী শিপিং সার্কেলে যার অস্তিত্ব ম্রিয়মান তিনি রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ভোট স্থগিত করার জন্য নানাভাবে তৎপর। এতে কোনভাবে তিনি সফল হলে তারপর সিঅ্যান্ডএফ-এর একই কায়দায় চেয়ারম্যানের চেয়ারে বসার খায়েস তাঁর। এসোসিয়েশনের ভোটাররা এটা বেশ ভালভাবে বুঝে গেছেন।
সৈয়দ ইকবাল আলী
বিজনেসটুডে২৪ কে তিনি বলেন, নির্বাচন বোর্ড ভোটের যাবতীয় প্রক্রিয়া বিধি মোতাবেক করেছেন, কোন পর্যায়ে কোন ব্যত্যয় ঘটেনি। এরপরও কেউ যদি ভোটার হওয়ার সুযোগ পাননি বলে অভিযোগ তোলেন সেটা ভিত্তিহীন।
এমজিএইচ গ্রুপের লাইনার ডিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও সৈয়দ ইকবাল আলী জানালেন, নিয়ম মাফিক সবকিছু হওয়ার পরও কারা কি দাবি তুললো না তুললো তা নিয়ে আমাদের কোন মাথাব্যথা নেই। সম্মিলিত পরিষদ পুরোদমে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। ভোটারদের সবার কাছে পৌঁছার চেষ্টা করছি, ব্যাপক সাড়াও মিলছে তাদের কাছ থেকে। তাঁরা আমাদের গত দুবছরের কাজের মূল্যায়ন করছেন। বিএসএএ বোর্ড ঢাকা এবং চট্টগ্রামে শিপিং খাতের নানা সমস্যা নিয়ে কাজ করেছে।
তিনি আশা করেন যে সম্মিলিত পরিষদ প্রার্থীরা আবারও বিপুল ভোটে জয়লাভ করবেন। সৈয়দ ইকবাল আলী বন্দর ও কাস্টমস সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন চলমান মেয়াদে।
বিএসএএ-র ভাইস চেয়ারম্যান, সম্মিলিত পরিষদ থেকে অন্যতম প্রার্থী রেডিয়্যান্ট শিপিং লিমিটেড-এর শফিকুল আলম জুয়েল-এর সাথে যোগাযোগ করা হলে বিজনেসটুডে২৪ কে নির্বাচন প্রসঙ্গে বলেন, একটি দুষ্টচক্র রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় ভোট বানচাল করে সেই অতীতের মত সিলেকশন পদ্ধতিতে গিয়ে সংগঠনটিকে দখল করতে চায়। চক্রটির কোন সমর্থন নেই শিপিং মহলে। তাই তারা উঠেপড়ে লেগেছে যে কোন ছলে বলে কৌশলে ১৩ তারিখের ভোট বন্ধ করার জন্য। বিএসএএ বাণিজ্যিক সংগঠন, রাজনৈতিক দলের সাথে কোন সম্পৃক্ততা কখনও ছিল না।
শফিকুল আলম জুয়েল
তিনি বললেন, এভাবে ঘৃণ্যতম তৎপরতা চালিয়ে কেউ যদি সংগঠনটির ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করে তাহলে তার বিরূপ প্রভাব পড়বে দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের ওপর, ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি। জাহাজ ভাড়া বাড়বে এবং তাতে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাবে। আমাদের ব্যবসা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে, আমরা কখনও সরকারি বেনিফিসিয়ারি না।
পতিত সরকারের প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গীর হওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে শফিকুল আলম জুয়েল বলেন, আমি তো কখনও কোন সরকার প্রধানের বিদেশ সফরসঙ্গী হইনি, কেউ যদি হয়েও থাকেন তবে সেটা ট্রেড অর্গানাইজেশনের প্রতিনিধি হিসেবে। রাজনৈতিক দলের সহযোগী হিসেবে নয়। ২০০৫ সালে থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ১১০ দেশের ব্যবসায়ীদের নিয়ে ‘বিজনেস সামিটে’ বাংলাদেশ থেকে কেবল আমি ছিলাম। সেটা ছিল ব্যবসায়ী হিসেবে ব্যক্তিগতভাবে পাওয়া আমন্ত্রণে যাওয়া।
জুয়েল বলেন, ইলেকশন হতে না দেয়ার প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত ওই দুষ্ট চক্রটির সাথে আর কিছু লোক আছে তাদের উদ্দেশ্য ভেন্ডারিং থেকে শুরু করে শিপিং সংশ্লিষ্ট এ ধরনের কিছু কাজ হাতিয়ে নেয়া এবং সেই সঙ্গে এই ট্রেডটাকে ধ্বংস করা। তিনি আশা করেন যে দেশের ব্যবসা, বাণিজ্য ও অর্থনীতির বৃহত্তর স্বার্থে শুভবুদ্ধির উদয় হবে অপতৎপরতায় লিপ্ত সবার।
সম্মিলিত পরিষদ মনোনীত প্রার্থী বিএসএএ-র ভাইস চেয়ারম্যান মো. রিয়াজউদ্দিন খান বলেন, আমরা আশা করি সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ঐতিহ্যবাহী এই সংগঠনটির সাধারণ নির্বাচন যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হবে এবং সম্মিলিত পরিষদ মনোনীত
মো. রিয়াজউদ্দিন খান
প্রার্থীরা আবারও বিপুল ভোটে জিতবেন। সেই লক্ষ্য নিয়ে সম্মিলিত পরিষদ ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছে।
সম্মিলিত পরিষদ প্রার্থীরা টানা নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছেন। তারা শিপিং পাড়ার অফিসে অফিসে গিয়ে মালিক এবং ভোটারদের কাছে তাদের আবেদন পেশ করছেন। ভোটাররাও তাদেরকে আশ্বস্ত করছেন। সেই সঙ্গে তারা জানতে চাচ্ছেন শেষ পর্যন্ত ১৩ এপ্রিলে ভোট হবে কী না।
বৈষম্যবিরোধী শিপিং এজেন্ট ব্যবসায়ী ফোরাম রবিবার আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকায় শোডাউন করেছে। সেখানে তারা বলেন, হঠাৎ গজিয়ে ওঠা কতিপয় শিপিং ব্যবসায়ী ফেনীর সাবেক সাংসদ আলাউদ্দিন নাছিমসহ পতিত স্বৈরাচারের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় গত চার বছর ধরে শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন দখল করে রেখেছে।

যোগাযোগ করা হলে ফোরামের আহ্বায়ক মশিউল আলম স্বপন বলেন, আমরা নেতা হতে চাই না, ভোট দিতে চাই। গোপনে ভোটার তালিকা করে আমাদেরকে বঞ্চিত করা হয়েছে। এ এ শিপিং সার্ভিসের স্ব্ত্ত্বাধিকারী স্বপন বলেন, স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হতে হবে। নীল নকশার কোন পাতানো নির্বাচন হতে দেয়া হবে না। স্বৈরাচারের মদতদাতা যে ক’জন বর্তমান বোর্ডে আছেন তাদেরকে বাদ দিয়ে নতুনভাবে ভোটের আয়োজন করতে হবে। স্বৈরাচারের দোসর ও তার সিন্ডিকেটভুক্তদের কলোটাকার প্রভাবমুক্ত নির্বাচন নিশ্চিত করতে হবে। বিএসএএ দখল নিতে বিএনপি মরিয়া বলে যে অভিযোগ ওঠেছে সে বিষয়ে তিনি সাফ জানালেন, আমি বিএনপি’র রাজনীতি করি সত্য। কিন্তু বৈষম্যবিরোধী শিপিং এজেন্ট ব্যবসায়ী ফোরামের আন্দোলনের সাথে দলের বা দলের কোন নেতার দূরতম সম্পর্ক নেই।
বৈষম্যবিরোধী শিপিং এজেন্ট ব্যবসায়ী ফোরাম রবিবার শোডাউনশেষে বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস এসোসিয়েশন কার্যালয়ে যায়। সেখানে তারা ভোট স্থগিত করার দাবি জানিয়ে নির্বাচন বোর্ড বরাবরে একটি চিঠি হস্তান্তর করেন।
বিএসএএ নির্বাচনে জেনারেল ক্যাটেগরিতে ১৬ পরিচালক পদের বিপরীতে প্রার্থী ২২ জন, এসোসিয়েট ক্যাটেগরিতে ৮ পরিচালক পদের বিপরীতে প্রার্থী সংখ্যা ১৫। সম্মিলিত পরিষদ মনোনীত প্যানেলের বাইরে প্রার্থী রয়েছেন জেনারেল ক্যাটেগরিতে ৬ জন এবং এসোসিয়েট ক্যাটেগরিতে ৭ জন।