Home চট্টগ্রাম অনাবৃষ্টি ও খরায় চট্টগ্রাম ভ্যালিতে চা উৎপাদনে ধস

অনাবৃষ্টি ও খরায় চট্টগ্রাম ভ্যালিতে চা উৎপাদনে ধস

সংগৃহীত ছবি

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম ভ্যালির বাগানসমূহে চা উৎপাদনে ধস নেমেছে। প্রায় ৫ মাস ধরে কাঙ্খিত বৃষ্টিপাত না  হওয়ায় ফলন মার খাচ্ছে। বাগানের ভিতরে যেসব জলাধার রয়েছে সেগুলো শুকিয়ে গেছে। সেচ দেয়া যাচ্ছে না। প্রচণ্ড তাপ থেকে বাগান রক্ষা করতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ।

বাগান ব্যবস্থাপকরা জানালেন, সাধারণত প্রতিবছর ফেব্রুয়ারিতে বৃষ্টিপাত হয়। তখন না হলে মার্চের প্রথম সপ্তাহে বা তারপরে মুষলধারে বৃষ্টিপাত হয়। চা-গাছ সবুজ পাতা মেলতে শুরু করে। কিন্তু এবারে পরিস্থিতি এর বিপরীত। ফেব্রুয়ারিতে বৃষ্টি হয়নি, মার্চেও না। গত সপ্তাহে সামান্য বৃষ্টিপাত হয়েছে। পরিমাণ ইঞ্চি দুয়েকের মত। তাতে মাটিও ভিজেনি। বৃষ্টির পর ঝকঝকে রোদ, সঙ্গে সুনীল আকাশ চায়ের জন্যে আদর্শ। বৃষ্টি না হয়ে যদি আবার কুয়াশাচ্ছন্ন মেঘলা আকাশ থেকে গেলে চা পাতার গুণগত মান ভালো হবে না, নানা রোগপোকার আক্রমণের আশঙ্কা বাড়বে। তেমন অবস্থাই এখন। ওই সামান্য বৃষ্টিপাতের পর প্রায় প্রতিদিনই মেঘলা আকাশ। এসব প্রেক্ষাপটে এবছরে মওসুমের এখন পর্যন্ত উৎপাদন পরিস্থিতি অত্যন্ত খারাপ। চট্টগ্রাম ভ্যালির বাগানসমূহে ৫০ শতাংশ চা পাতা উৎপাদন কম হয়েছে গত বছরের একই সময়ের তুলনায়।

ভুজপুর চৌধুরী চা-বাগানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম এই তথ্য জানিয়ে বলেন, চা শিল্প বলা চলে পুরোপুরি প্রকৃতি নির্ভর।  এবারে মওসুমের শুরু থেকে প্রকৃতি বিরূপ। বৃষ্টিপাত হয়নি। এর প্রভাব পড়েছে চা উৎপাদনে।  সেই সঙ্গে বেড়ে গেছে রোগবালাই। লাল মাকড়সার আক্রমণ ‍ বৃদ্ধি পেয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, ওইরকম অবস্থা কেবল ভুজপুর বাগানে নয়, চট্টগ্রাম ভ্যালির সব বাগানে। তবে, যে কয়েকটি বাগানের নিজস্ব সেচ ব্যবস্থা রয়েছে সেগুলোর অবস্থা কিছুটা ভাল। অন্য সব বাগানের পরিস্থিতি খারাপ। চলতি মওসুমে এই ভ্যালির বাগানসমূহ বৃষ্টিপাতের ছোঁয়া পেয়েছে গত সপ্তাহে । ইঞ্চি দুয়েকের মত বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে চা ভ্যালিতে।  বাগান নির্বাহিরা জানালেন, পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের প্রয়োজন এখনই। কাঙ্খিত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় কোন কোন বাগানে ফলন কমেছে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত। মওসুমের সামনে যদি আবহাওয়া অনুকূলও হয় তারপরও এই বিশাল ঘাটতি পূরণ হওয়া বেশ কঠিন।

চট্টগ্রাম ভ্যালিতে ২২টি চা বাগান। এগুলোর ১৭ টি ফটিকছড়ি উপজেলায়। ২০২৩ সালে বাগানগুলো উৎপাদন লক্ষ্য ছাড়িয়ে যায়। পরের বছর আবার লক্ষ্যমাত্রা থেকে নিচে নেমে আসে। এবারেও যে অবস্থা তাতে উৎপাদন আরও কমে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

দেশে চা শিল্পের ইতিহাসে রেকর্ডভাঙা উৎপাদন হয়েছে ২০২৩ সালে। ১০ কোটি ২০ লাখ কেজি পাতা উৎপাদিত হয়। তারপরের বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালে এক লাফে হ্রাস পায় ৯০ লাখ কেজি। মোট ৯ কোটি ৩০ লাখ কেজি চা উৎপাদিত হয়েছে।