Home Second Lead কুড়িগ্রামে ২৫ ইউনিয়নের মানুষ পানিবন্দি

কুড়িগ্রামে ২৫ ইউনিয়নের মানুষ পানিবন্দি

নয়ন দাস, কুড়িগ্রাম থেকে :  কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি ঘটেছে। শনিবার (২৭ জুন) দুপুরে ধরলা নদীর পানি বিপদসীমার ৪৩ সে.মিটার এবং ব্রহ্মপূত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে ৩৮ সে.মিটার এবং নুনখাওয়া পয়েন্টে ২৪ সে.মিটার বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

উজান থেকে নেমে আসা পানি প্রবাহ অব্যাহত থাকায় জেলার ২৫টি ইউনিয়নের মানুষ পানিবন্দি হয়েছে। এতে তলিয়ে গেছে প্রায় ৫শ’ হেক্টর জমির আউশ, পাট, ভুট্টা, কাউন, চিনা ও শাকসবজির ক্ষেত। এছাড়া ও নদী ভাঙনে ভিটেমাটি হারিয়েছে প্রায় ২ শতাধিক পরিবার।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানান,  ২৪ ঘন্টায়, ধরলা নদীর পানি ৩৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৪৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অপরদিকে চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি ৩৪ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৩৮ সে.মিটার এবং নুনখাওয়া পয়েন্টে ৩১ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ২৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়াও কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি ২৭ সে.মিটার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

সরেজমিন সদর উপজেলার পাঁচগাছি ইউনিয়নের কদমতলা, আরাজি কদমতলা, গোবিন্দপুর ও মধ্য সিতাইঝাড় মুসল্লীপাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা গেল এই ইউনিয়নের পূর্বে দিক থেকে ব্রহ্মপূত্র নদের পানি এবং পশ্চিম দিক থেকে ধরলা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে দু’দিক থেকে হু-হু করে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে। তলিয়ে গেছে শত শত হেক্টর জমির সবজি ও আমন ক্ষেত।

 বন্যায় আঞ্চলিক সড়কগুলোতে পানি ওঠায় যাতায়াত সমস্যায় ভুগছে মানুষ। অপরদিকে যাত্রাপুর ইউনিয়নের চরযাত্রাপুর এলাকার অধিকাংশ বাড়িতে বন্যার পানি প্রবেশ করছে। করোনার কারণে এমনিতেই কাজকর্ম নেই, তার উপর বন্যার আঘাতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে বানভাসিরা। এই গ্রামের আবুল হোসেন জানান, চরের আবাদ সব নষ্ট হয়ে গেছে। বাড়ির চারপাশে যারা সবজি লাগিয়েছেন সেগুলো এখন পানিতে তলিয়ে গেছে।

শৌচাগার ডুবে যাওয়ায় বিপদে পড়েছে নারী ও শিশুরা। আরাজী পার্বতীপুর গ্রামের ছকিনা ও তাহেরা জানান, পুরুষ মানুষ বাইরে লেট্রিন সাড়লেও মহিলারা দুর্ভোগে ।

নদী ভাঙনের মুখে পড়েছে উলিপুর উপজেলার হাতিয়া, থেতরাই, বুড়াবুড়ি, বেগমগঞ্জ এলাকার মানুষ। ভাঙছে রৌমারীর কর্ত্তিমারী, চিলমারীর নয়ারহাট, কুড়িগ্রাম সদরের মোগলবাসা ও সারডোব এলকায়। গত এক সপ্তাহের ভাঙনে বিভিন্ন উপজেলা মিলিয়ে প্রায় ২ শতাধিক বাড়িঘর নদীগর্ভে গেছে।

ব্রহ্মপুত্রের চর মশালের চরের বাসিন্দা মুসা মিয়া ও ভগবতির চরের জাহাঙ্গীর আলম জানান, চরের অধিকাংশ ঘর বাড়িতে পানি উঠেছে। অনেকেই উঁচু ভিটায় থাকলেও নিচু ভিটার বাসিন্দারা নৌকা ও চৌকির উপর আশ্রয় নিয়েছে। কেউ কেউ নিকটবর্তী আশ্রয়কেন্দ্র ও স্কুলে আশ্রয় নিয়েছে বলে জানান তারা।

কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, ভাঙন কবলিতদের সরিয়ে আনতে কাজ করছে উপজেলা প্রশাসন। শুক্রবার ভাঙন কবলিত উপজেলাগুলোতে ৩০২ মে.টন চাল ও ৩৬ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে।