বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
রাজশাহী: উপমহাদেশের প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী এন্ড্রু কিশোর ক্যানসারের কাছে হেরেই গেলেন । সোমবার (০৬ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টা ৫৫ মিনিটে রাজশাহী মহানগরীর মহিষবাথান এলাকায় বোনের বাসায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন এই খ্যাতিমান কণ্ঠশিল্পী। তার বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর।
এন্ড্রু কিশোর সংসার জীবনে স্ত্রী ছাড়াও সজ্ঞা (২৬) নামে এক মেয়ে ও সপ্তক (২৪) নামে এক পুত্র সন্তান রেখে গেছেন। দুজনই অস্ট্রেলিয়ায় পড়াশোনা করছেন। সজ্ঞার পড়াশোনা প্রায় শেষের দিকে।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে এন্ড্রু কিশোরের দেহে ক্যানসার ধরা পড়ে। সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা করেও ক্যানসার নির্মুল হয়নি তার। চিকিৎসক হাল ছেড়ে দেয়ায় গত ১১ জুন ক্যানসার নিয়েই ফিরতে হয়েছে দেশে। তারপর থেকেই ছিলেন রাজশাহীতে।
এন্ড্রু কিশোরের বোন জামাই প্যাট্টিক বিপুল বিশ্বাস জানান, সিঙ্গাপুরে কেমোথেরাপি ও রেডিওথেরাপি দিলেও ক্যানসার দূর হয়নি। চিকিৎসকরা হাল ছেড়ে দিয়েছিলেন। তাই এন্ড্রু কিশোরের ইচ্ছায় তাকে দেশে আনা হয়। এরপর থেকে বোনের বাসায় ছিলেন। এটি ক্লিনিকও। সেখানেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন।
১৯৫৫ সালের ৪ নভেম্বর রাজশাহীতে জন্মগ্রহণ করেন এন্ড্রু কিশোর। তার বাবার নাম খিতিশ চন্দ্র বাড়ই। মা মিনু বাড়ই। রাজশাহীতেই কেটেছে এন্ড্রু কিশোরের শৈশব ও কৈশোর। এন্ড্রু কিশোর প্রাথমিকভাবে সংগীতের পাঠ শুরু করেন রাজশাহীর খ্যাতনামা ওস্তাদ আবদুল আজিজ বাচ্চুর কাছে। একসময় গানের নেশায় রাজধানীতে ছুটে যান। মুক্তিযুদ্ধের পর তিনি রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলসংগীত, আধুনিক গান, লোকগান ও দেশাত্মবোধক গানে রেডিওর তালিকাভুক্ত শিল্পী হন।
১৯৭৭ সালে আলম খানের সুরে ‘মেইল ট্রেন’ সিনেমায় ‘অচিনপুরের রাজকুমারী নেই যে তার কেউ’ গানের মধ্য দিয়ে এন্ড্রু কিশোরের চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক যাত্রা শুরু হয়। সেই শুরুর পর থেকে তাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। এরপর আটবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। নিজেকে নিয়ে গিয়েছেন জনপ্রিয়তার শীর্ষে। ‘জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প’, ‘হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস’, ‘ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে’, ‘আমার সারা দেহ খেও গো মাটি’, ‘আমার বুকের মধ্যে খানে’সহ অসংখ্য জনপ্রিয় বাংলা গান উপহার দিয়েছেন শ্রোতাদের।
সংগীতে অসামান্য অবদানের জন্য দেশ-বিদেশের আরও অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন উপমহাদেশের খ্যাতনামা এই শিল্পী। প্লে ব্যাক সম্রাট এন্ড্রু কিশোর সব সময় সাদামাটা জীবনযাপন করেছেন। কখনও তাকে নিয়ে কোন বিতর্ক ওঠেনি। হাজারও ভক্ত অনুরাগীদের কাঁদিয়ে দেশবরেণ্য এই শিল্পী পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে গেলেন।
রবিবার রাতেই এন্ড্রু কিশোরের সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা জানিয়ে ফেসবুক পেইজে পোস্ট দিয়েছিলেন স্ত্রী লিপিকা এন্ড্রু। প্রাণ খুলে দোয়া চেয়েছিলেন সবার কাছে। ওই পোস্টে তিনি এন্ড্রু কিশোরের চিকিৎসা থেকে শুরু করে যাবতীয় বিষয় লিখেছেন। আবেগঘন ওই পোস্টে ভাল কোন খবর ছিল না।
তিনি লিখেন: ‘এটাই শেষ পোস্ট, এর পর আর কিছু বলা বা লেখার মত আমার মানসিক অবস্থা থাকবে না। এখনও মাঝে মাঝে দুঃস্বপ্ন মনে হয়। কিশোর থাকবে না, অথচ আমি থাকব। মেনে নিতে পারছি না। এই অসময়ে সবাই সাবধানে থাকবেন। নিজের প্রতি যত্ন নিবেন, সুস্থ থাকবেন, ভাল থাকবেন। আর এন্ড্রু কিশোরের প্রতি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টি রাখবেন। প্রাণ খুলে দোয়া করবেন।’