Home অন্যান্য নোয়াবের বিবৃতিতে বিএফইউজে-ডিইউজের বিস্ময়

নোয়াবের বিবৃতিতে বিএফইউজে-ডিইউজের বিস্ময়

  • নোয়াব চট্টগ্রাম থেকেই গণমাধ্যমে নৈরাজ্য সৃষ্টির পাঁয়তারা করেছিল
  •  আগস্ট বাংলাদেশে একটি চক্রান্তের মাস। দেশ ও জাতির বিরুদ্ধে এ মাসেই চক্রান্তকারিরা বেশি তৎপর হয়।  গত শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভয়াবহ ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার বিষয়ে বিএনপি নেতারা যে ভাষায় কথা বলেছে নোয়াবের বিবৃতিতে তার গন্ধ পাওয়া যায়।
  • কেউ যদি মনে করেন, প্রচলিত আইন মেনে তার পক্ষে প্রতিষ্ঠান চালানো সম্ভব নয়, তবে তিনি প্রচলিত আইন অনুসরণ করতে পারেন।
  • এত লোকসান দিয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালাতে তাদের কে বলেছে?

 

‘সংবাদপত্রশিল্প রক্ষার আহ্বান’ জানিয়ে শুক্রবার (২১ আগস্ট) নিউজপেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নোয়াব) যে বিবৃতি দিয়েছে, তাতে বিস্ময় প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)।
সংগঠন দুটি বলেছে, নোয়াবের এই বিবৃতি সংবাদপত্র শিল্পে চরম নৈরাজ্য সৃষ্টির সুগভীর চক্রান্তের বহিঃপ্রকাশ। বিবৃতির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নোয়াব যেসব বক্তব্য উপস্থাপন করেছে তা মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন ও সত্যের অপলাপ মাত্র।  বরং দেশে একটা নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টির মাধ্যমে ঘোলাপানিতে মাছ শিকারের উদ্দেশ্যে প্রতীয়মান।
বিএফইউজে সভাপতি মোল্লা জালাল, মহাসচিব শাবান মাহমুদ এবং ডিইউজে সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ ও সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু শনিবার এক যুক্ত বিবৃতিতে এ কথা বলেন।
নেতৃবৃন্দ বলেন, আগস্ট বাংলাদেশে একটি চক্রান্তের মাস। দেশ ও জাতির বিরুদ্ধে এ মাসেই চক্রান্তকারিরা বেশি তৎপর হয়।  গত শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভয়াবহ ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার বিষয়ে বিএনপি নেতারা যে ভাষায় কথা বলেছে নোয়াবের বিবৃতিতে তার গন্ধ পাওয়া যায়। নোয়াব সংবাদপত্র শিল্প রক্ষার জন্য সরকারে কাছে বেশ কিছু দাবি উত্থাপন করেছে। এ সব দাবির যৌক্তিতা বুঝাতে গিয়ে তারা বলেছে, ওয়েজ বোর্ড রোয়েদাদ অযৌক্তিক। শুধু নবম ওয়েজ বোর্ড নয়, এ পর্যন্ত যত ওয়েজবোর্ড রোয়েদাদ হয়েছে, তার সবই অবান্তর ও অযৌক্তিক।
নোয়াবের এই বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিএফইউজে-ডিইউজে নেতারা বলেন, নোয়াব প্রতিষ্ঠার বহু আগে থেকেই সংবাদপত্রের সাংবাদিক-শ্রমিক-কর্মচারীদের জন্য ওয়েজবোর্ড রোয়েদাদ কার্যকর রয়েছে।  নোয়াব পরিবারের একাধিক সদস্য একসময় এই ওয়েজবোর্ড রোয়েদাদের আওতায় চাকরি করে জীবিকা নির্বাহ করেছেন। আজকে তাদের অনেকেই নোয়াবের সদস্য।
তারা ধিক্কার জানিয়ে বলেন, কোনো মানুষেরই এত দ্রুত তার অতীত ভুলে যাওয়া উচিত নয়। নোয়াবের মনে রাখা দরকার ওয়েজবোর্ড রোয়েদাদ রাষ্ট্রের আইন।  সংবাদপত্রকেও রাষ্ট্রের আইন মেনে চলতে হয়।  রাষ্ট্রের আইন মানতে না চাইলে তার পরিণতির কথাও বিবেচনায় রাখতে হবে। নোয়াবের জন্মের পর থেকেই মূলত ওয়েজবোর্ড রোয়েদাদ আইন ভঙ্গ করার প্রবণতা শুরু হয়।  তারা নানা কৌশলে নিয়োগপত্রবিহীন সাংবাদিক, কম বেতন, থোক বেতন ও সংবাদকর্মীদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের প্রয়াস শুরু করে।  নোয়াব কোনোকালেই কোনো ওয়েজবোর্ড পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়ন করেনি। কিন্তু সরকারের প্রদত্ত সব সুযোগ-সুবিধা ঠিকই নিয়েছে।
বিএফইউজে ও ডিইউজে নেতারা বিবৃতিতে আরও বলেন, সরকার মনে করলে নোয়াবকে সরকারি খাজনা উজাড় করে দিতে পারে।  কিন্তু এই দেওয়া-নেওয়ার সাথে সাংবাদিক-শ্রমিক-কর্মচারীদের ন্যায্য অধিকারের কোনো সম্পর্ক নেই।  সংবাদপত্রশিল্পের মালিককে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী সাংবাদিক-শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দিতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। কেউ যদি মনে করেন, প্রচলিত আইন মেনে তার পক্ষে প্রতিষ্ঠান চালানো সম্ভব নয়, তবে তিনি প্রচলিত আইন অনুসরণ করতে পারেন। কিন্তু কোনো ধরনের বাহানা দেখিয়ে বেতন না দিয়ে, বেতন কমিয়ে, ছাঁটাই করে সংবাদকর্মীদের দাস হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। স্বেচ্ছাচারী হয়ে মর্জিমাফিক প্রতিষ্ঠান চালানোর কোনো সুযোগ নেই। বিএফইউজে ও ডিইউজে প্রয়োজনে ফেডারেশনের সব সদস্য সংগঠনসহ সারাদেশের সংবাদকর্মীদের নিয়ে এ ধরনের স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলবে।
সাংবাদিক নেতারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, নোয়াবই দেশের গণমাধ্যমের একমাত্র প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন নয়। সংবাদপত্রের সম্পাদক-প্রকাশকদের আরও সংগঠন আছে। নোয়াব পরিবারের সদস্যরাই শুধু গণমাধ্যমের প্রতিনিধিত্ব করেন না। নোয়াব হচ্ছে দু-একজন লোকের কুক্ষিগত একটি প্ল্যাটফর্ম। বেশিরভাগ সংবাদপত্রের সাথে নোয়াবের সম্পর্ক নেই।  কোনো গণমাধ্যমের সম্পাদক-প্রকাশকের কোনো সমস্যা হলে নোয়াব একটা বিবৃতি পর্যন্ত দেয় না।  শুধু নিজেদের স্বার্থের ধান্ধা নিয়ে চলে।
নেতারা বলেন, নোয়াব করোনার অজুহাত দেখিয়ে সংবাদপত্রশিল্পের সংকটের কথা বলছে। উদাহরণ হিসেবে তারা চট্টগ্রামের কথা বলেছে।  নোয়াব চট্টগ্রাম থেকেই গণমাধ্যমে নৈরাজ্য সৃষ্টির পাঁয়তারা করেছিল।  কিছুদিন আগে তারা বিবৃতিও দিয়েছিল। কিন্তু ইউনিয়ন নেতাদের সময়োচিত হস্তক্ষেপে নোয়াবের মিশন ব্যর্থ হয়।  বাংলাদেশে করোনা এসেছে এ বছরের মার্চ মাসে। কিন্তু তার আগে বহু বছর ধরে সংবাদপত্রের মালিকরা নিরঙ্কুশভাবে সরকারের দেয়া সকল সুযোগ-সুবিধা ভোগ করলেও প্রতিষ্ঠানের সব কর্মীকে ওয়েজবোর্ড রোয়েদাদ মোতাবেক বেতন-ভাতা দেয়নি।  বরাবর নানা ছলচাতুরির আশ্রয় নিয়ে সংবাদকর্মীদের ঠকানো হয়েছে।  এখন তারা করোনার অজুহাতে ঢালাওভাবে ছাঁটাই, বেতন কমানো এবং বেতন-ভাতা না দেয়ার পাঁয়তারা শুরু করেছেন, যা দেশের প্রচলিত আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শনের শামিল।
‘নোয়াবের এসব দাবি গণমাধ্যমে অস্থিরতা সৃষ্টির কোনো অপকৌশল কি-না, দেশের সার্বিক স্থিতাবস্থা বিনষ্ট করার কোনো চক্রান্তের অংশ কি-না, সরকারকে তা খতিয়ে দেখতে হবে। কারণ তাদের দাবিগুলোর সারাংশে সরকারকে জিম্মি করে স্বার্থ হাসিল করার পাশাপাশি সংবাদকর্মীদের আইনসঙ্গত ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করার প্রসঙ্গ রয়েছে।’
সাংবাদিক নেতারা বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারের উচিত সংবাদপত্রের সম্পাদক-প্রকাশক, পরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে আহ্বান করে তাদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেয়া।  যারা বর্তমান সময় পর্যন্ত সরকার প্রদত্ত সুযোগ-সুবিধা নিয়ে প্রতিষ্ঠান চালাতে সক্ষম তারা চালাবেন। যারা পারবেন না তারা প্রচলিত আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নেবেন। এখানে জোর-জুলুম করার কিছু নেই।  তবে মনে রাখতে হবে, সাংবাদিক-শ্রমিক-কর্মচারীরা ঘোলাজলে কাউকে মাছ শিকার করতে দেবে না।  নোয়াব বলেছে, দেশের অর্থনীতি নাকি স্থবির হয়ে গেছে। যদি তাই হয় তবে এত আবদার কেন? এত লোকসান দিয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালাতে তাদের কে বলেছে? সংবাদপত্রের প্রিন্ট ভার্সন বন্ধ করে বিপুলসংখ্যক সংবাদকর্মীকে চাকরিচ্যুত করে আবার ‘অনলাইন’ চালু রাখা হচ্ছে কিসের ধান্ধায়। এগুলো করার সময় তো সরকারের অনুমতির প্রয়োজন হয়নি?
অনলাইনে কর্মরত সংবাদকর্মীদের বেতন-ভাতা ও অন্যান্য ন্যায্য পাওনা প্রদানের ক্ষেত্রেও বেতন কাঠামোর কোনো নিয়ম নীতি অনুসরণ করা হচ্ছে না বলে উল্লেখ করা হয় বিএফইউজে-ডিইউজের বিবৃতিতে।