কলকাতা: শিল্পপতি অনিল অম্বানীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ঋণ নিয়ে শোধ না করার অভিযোগ খতিয়ে দেখতে সক্রিয় হল ন্যাশনাল কোম্পানি ল ট্রাইব্যুনাল। অনিলের মালিকানাধীন দু’টি সংস্থা দেউলিয়া হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে বৃহস্পতিবার ‘ব্যাঙ্করাপসি অ্যাডমিনিস্ট্রেটর’ নিয়োগ করেছে আদালত। প্রায় ১২০০ কোটির বকেয়া ঋণ উদ্ধারের জন্য অনিলের সংস্থা রিলায়্যান্স কমিউনিকেশনস লিমিটেড (আর-কম) এবং রিলায়্যান্স ইনফ্রাটেল লিমিটেডের -এর বিরুদ্ধে মামলা করেছিল স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া (এসবিআই)। তারই প্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্ত।
স্টেট ব্যাঙ্কের তরফে মুম্বইয়ের ন্যাশনাল কোম্পানি ল ট্রাইব্যুনালের সামনে দাবি জানানো হয়েছিল, বর্তমান পরিস্থিতিতে অনিলের মালিকানাধীন কোনও সংস্থাই যাতে সম্পত্তি কেনাবেচা করতে না পারে, তার নির্দেশ জারি হোক। কিন্তু আদালত সেই দাবি খারিজ করায় কিছুটা স্বস্তি পেয়েছেন রিলায়্যান্স অনিল ধীরুভাই অম্বানী গ্রুপের কর্ণধার। অনিলের মুখপাত্র বলেন, ‘‘ন্যাশনাল কোম্পানি ল ট্রাইব্যুনালের রায়ের কোনও প্রভাব রিলায়েন্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড, রিলায়েন্স পাওয়ার লিমিটেড ও রিলায়েন্স ক্যাপিটাল লিমিটেডের উপর পড়বে না।’’
২০১৬ সালে আর-কম এবং রিলায়্যান্স ইনফ্রাটেল লিমিটেডের হয়ে ঋণ নেওয়ার সময় অনিল অম্বানী নিজেকেই ব্যক্তিগত গ্যারান্টর হিসেবে দেখিয়েছিলেন। অঙ্কটি ছিল প্রায় ১৬ কোটি ডলার (প্রায় ১,১৯৯ কোটি টাকা) কিন্তু অনিলের প্রায় সব সংস্থাই ঋণে জর্জরিত। ঋণের টাকা ফেরত দেওয়ার মতো অবস্থাই নেই। এই পরিস্থিতিতে বকেয়া উদ্ধারের জন্য ন্যাশনাল কোম্পানি ল ট্রাইবুনালের দ্বারস্থ হয়েছিল দেশের বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক। এই ট্রাইব্যুনালেই দেউলিয়া মামলার শুনানি হয়।স্টেট ব্যাঙ্ক বাদে চিনের তিনটি ব্যাঙ্কের কাছেও বিপুল অঙ্কের অর্থ ধার করেছিলেন অনিল। তাও তিনি শোধ করতে পারেননি।
একটি সূত্রে জানা যায়, চিনের তিনটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক ২০১২ সালে অনিলের রিলায়েন্স কমিউনিকেশনস লিমিটেডকে ৬৬ হাজার কোটি টাকার বেশি ধার দেয়। অনিল ব্যক্তিগতভাবে গ্যারেন্টার হন। সেই অর্থ ফেরত পাওয়ার জন্য লন্ডনের কোর্টে মামলা করা হয়েছে। নিয়মমতো মামলা শুরুর আগে কোর্টে অনিলকে একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের অর্থ জমা রাখতে হবে। সেই অর্থ যাতে জমা রাখতে না হয়, সেজন্য গত ফেব্রুয়ারি মাসে অনিলের কৌঁসুলি রবার্ট হাওয়ি আদালতে জানিয়েছিলেন, তাঁর মক্কেলের মূল্য এখন শূন্য।
হাওয়ি বলেন, অনিলের কাছে এমন কোনও ধনভাণ্ডার নেই যেখান থেকে তিনি ১০ লক্ষ ডলার বার করতে পারেন। এক কোটি কিংবা ১০০ কোটি ডলারের তো প্রশ্নই ওঠে না। চিনের তিনটি ব্যাঙ্কের কৌঁসুলি বানকিম থানকি বলেন, “অনিল পাওনাদারদের এড়াতে চেষ্টা করছেন। তাঁর আচরণ সুবিধাবাদীর মতো।”
৬০ বছর বয়সী অনিলের বিরুদ্ধে দেশেও ঋণের অর্থ ফেরত না দেওয়ার গুরুতর অভিযোগ উঠেছিল গতবছর। সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল, রিলায়েন্স কমিউনিকেশনস যদি এরিকসন এবির ভারতীয় শাখাকে অবিলম্বে ৫৫০ কোটি টাকা ঋণ না শোধ করে, তাহলে অনিলকে জেলে পাঠানো হবে। এই সময় তাঁর দাদা মুকেশ ঋণের টাকা দিয়ে দেন। সেজন্য অনিলকে জেলে যেতে হয়নি।