রাশেদুজ্জামান তাওহীদ
কালের সাক্ষী হয়ে ঝোপ জঙ্গলের মাঝে মাথা উঁচু করে বিস্তীর্ণভাবে দাঁড়িয়ে আছে বিশাল আকৃতির একটি গাছ। প্রায় ৫০০ (পাঁচশত) বছরের পুরোনো এই গাছটির নাম পরিচয় জানেনা কেউ। তাই ব্রিটিশ আমলে এর নামকরণ করা হয়েছে অচিন গাছ। গাছের নামে এই গ্রামের নাম রাখা হয়েছে অচিন গাছ গ্রাম। গাছটি কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলার চাকির পশার ইউনিয়নের জয়দেব হায়াত মৌজায় অবস্থিত।
যুগ যুগ ধরে অনেক উদ্ভিদ বিজ্ঞানী গাছটির নাম পরিচয় নিয়ে গবেষণা করলেও কারো ভাগ্যে জোটেনি সফলতার আলো। তবে এ সফলতা পেয়েছেন কুড়িগ্রাম সরকারী কলেজের উপাধ্যক্ষ ও উদ্ভিদ বিজ্ঞানী প্রফেসর মীর্জা মোঃ নাসির উদ্দিন। তিনি ২০১২ খ্রিস্টাব্দ থেকে ২০২১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত প্রায় ১০ বছর গবেষণার ফলে আবিষ্কার করেছেন উদ্ভিদটির পরিবার ও বৈজ্ঞানিক নাম। উদ্ভিদ বিজ্ঞানী নাসির উদ্দিনের গবেষণার সমস্ত নমুনা এবং দলিলপত্র পর্যালোচনা করে বাংলাদেশ ন্যাশনাল হারবেরিয়াাম কর্তৃপক্ষ আবিষ্কৃত নামটি সঠিক মর্মে স্বীকৃতির সনদসহ তালিকা নম্বর প্রদান করেছেন। স্বীকৃতিপত্র থেকে জানা যায় গাছটি মোরেসী পরিবারভুক্ত এর বৈজ্ঞানিক নাম ফিকাস ল্যাকর বুচ-হাম । উদ্ভিদটি দেখতে স্থানীয় পাকুর গাছের মতো হলেও এর বৈশিষ্ট্য ভিন্ন। গাছটির একেক ডালে রয়েছে একেক রকমের পাতা। এর বাকল ধূসর এবং মসৃন। নতুন শাখাগুলো কিছুটা বাদামী রঙের। তিক্ত স্বাদ যুক্ত গোলাকার ফলের রং সবুজ। পাখিদের প্রিয় খাদ্য এই ফল মাটিতে পড়লেও কখনো চারা উৎপন্ন হয়নি। ঝড় বাদলে কখনো গাছের ডালপালা ভেঙে পড়ার ইতিহাস নেই। গাছের বাকল, পাতা এবং ফলে রয়েছে নানা ধরনের ঔষধি গুনাগুন। গাছের গোড়ায় মহাদেবের স্থান রয়েছে মনে করে স্থানীয় সনাতন ধর্মালম্বীরা পূজা-আর্চনার জন্য এর চারদিকে গড়ে তুলেছেন কয়েকটি মন্দির। এ ব্যাপারে কথা হলে কুড়িগ্রাম সরকারী কলেজের উপাধ্যক্ষ এবং উদ্ভিদ বিজ্ঞানী প্রফেসর মীর্জা মোঃ নাসির উদ্দিন জানান, আমি দশ বছর ধরে গাছটির পাতা, ডালপালা, বাকল,ফল ইত্যাদি নিয়ে গবেষণা করি পরবর্তীতে আমার গবেষণাপত্র বাংলাদেশ ন্যাশনাল হারবেরিয়াাম কর্তৃপক্ষ পর্যালোচনা করে আবিষ্কৃত নামটি সঠিক মর্মে স্বীকৃতির সনদসহ তালিকা নম্বর প্রদান করেছেন। এলাকাবাসী জানান, আমাদেও পূর্ব পুরুষদের কেউ এই গাছের নাম জানেনা তাই আমরা এই গাছকে অচিন গাছ নামে জানি। তবে বর্তমানে গাছটির পরিচয় জানতে পেরে আমাদের অনেক ভালো লাগছে । কুড়িগ্রাম জেলার উইকিপিডিয়াতে ইতিহাস-ঐতিহ্যেও নিদর্শন হিসেবে অচিন গাছের নাম তালিকাভুক্ত রয়েছে।
কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলায় কালের সাক্ষী হিসেবে দাড়িয়ে আছে বিশাল আকৃতির এক অচিন গাছ (Achin Tree)। রহস্যকেন্দ্রিক গাছটির বয়স আনুমানিক ৫শ বছরের
কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলায় কালের সাক্ষী হিসেবে দাড়িয়ে আছে বিশাল আকৃতির এক অচিন গাছ (Achin Tree)। রহস্যকেন্দ্রিক গাছটির বয়স আনুমানিক ৫শ বছরের অধিক হলেও সবাই নিজেদের বাপ দাদাদের কাছ থেকে গাছ সম্পর্কে বিভিন্ন কাহিনী শুনেছেন। স্থানীয়রা পৌরনিক কাহিনী ছাড়া এই গাছটির জন্ম বৃত্তান্ত বা পরিচয় এসব কিছুই বলতে পারে না। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই গাছটি পাকুর প্রজাতির। কথিত আছে, ভারতের আসাম রাজ্যের কামরূপ-কামাখ্যা হতে আগত একদল জাদুঘর চোখের পলকে এই অচিন গাছটি এখানে লাগিয়েছিলেন। আর গাছটির নাম কেউ না জানার কারণে স্থানীয়রা একে “অচিন গাছ” হিসেবে নামকরণ করে। আবার অনেকের মতে, এক পীর সুদূর পশ্চিম দিক থেকে অপরিচিত এই গাছের চারা এনে রোপণ করেছিল। সেই কারণে এটি অচিন গাছ হিসেবেই পরিচয় লাভ করে। এমন রহস্যের কারণে অচিন গাছকে ঘিরে কৌতূহলী মানুষের আগ্রহের কমতি নেই।
অচিন গাছটি তাঁর শাখা প্রশাখা বিস্তার করে প্রায় ১০ শতাংশ জায়গা জুড়ে অবস্থান করছে। ডুমুরের পাতা সদৃশ এই গাছের মরা পাতা নাকি আপনা আপনিই নতুন পাতায় রূপান্তর হয় এবং একেক পাশের পাতার আকৃতি এক এক রকম। অতীতে গাছটির ছায়ায় স্থানীয়রা নিয়মিত ধান-পাট শুকাতো এবং প্রতিদিন সন্ধ্যায় সনাতন ধর্মাবলম্বীরা গাছটির গোঁড়ায় এসে মানত করে দক্ষিণা দান করত। কালের বিবর্তনে গাছটির শাখা-প্রশাখা অনেকটা কমে গেলেও যুগ যুগ ধরে স্থানীয় পূর্ব পুরুষদের গাছটিকে ঘিরে পূজা আর্চনা করার রীতি এখনো রয়ে গেছে। প্রতি দুই বছর অন্তর সনাতন ধর্মাবলম্বীরা জাঁকজমকপূর্ণভাবে অচিন গাছকে ঘিরে পূজা আর্চনা করে। বর্তমানে এই গাছটির একটি শাখা গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর উপজেলার বাঁশতলী গ্রামে ও আরেকটি জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে মানিক মিয়া এভিনিউতে লাগানো হয়েছে।
কিভাবে যাবেন
রাজধানী ঢাকার আসাদগেট, কল্যাণপুর ও গাবতলি থেকে নাবিল, হক স্পেশাল, হানিফ, তানজিলা ও এনার মতো বাসে কুড়িগ্রাম যাওয়া যায়। আবার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশান থেকে কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস ট্রেনে ঢাকা থেকে সরাসরি কুড়িগ্রাম যাওয়া যায়। কুড়িগ্রাম থেকে স্থানীয় পরিবহণে অচিন গাছ দেখতে যেতে পারবেন।
কোথায় থাকবেন
কুড়িগ্রাম শহরের ঘোষপাড়া ও কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের কাছে বিভিন্ন মানের বেশ কয়েকটি আবাসিক হোটেল আছে। আবাসিক হোটেলগুলোর মধ্যে হোটেল অর্নব প্যালেস, হোটেল ডিকে, হোটেল স্মৃতি, হোটেল নিবেদিকা ও হোটেল মেহেদী উল্লেখযোগ্য।
কোথায় খাবেন
কুড়িগ্রামের শাপলা মোড়ে অবস্থিত নান্না বিরিয়ানি ও এশিয়া হোটেলের খাবার বেশ ভালমানের। এছাড়া কুড়িগ্রামের জনপ্রিয় খাবারের মধ্যে সিদল ভর্তা ও তিস্তা নদীর বৈরাতী মাছ অন্যতম।
কুড়িগ্রাম জেলার দর্শনীয় স্থান
কুড়িগ্রামের অন্যান্য দর্শনীয় স্থানের মধ্যে উলিপুর মুন্সিবাড়ী, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি ফলক, ধরলা ব্রিজ, ভেতরবন্দ জমিদার বাড়ি ও চান্দামারী মসজিদ উল্লেখযোগ্য।
সতর্কতাঃ হোটেল, রিসোর্ট, যানবাহন ভাড়া ও অন্যান্য খরচ সময়ের সাথে পরিবর্তন হয় তাই ভ্রমণ গাইডে প্রকাশিত তথ্য বর্তমানের সাথে মিল না থাকতে পারে। তাই অনুগ্রহ করে আপনি কোথায় ভ্রমণে যাওয়ার আগে বর্তমান ভাড়া ও খরচের তথ্য জেনে পরিকল্পনা করবেন। এছাড়া আপনাদের সুবিধার জন্যে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে হোটেল, রিসোর্ট, যানবাহন ও নানা রকম যোগাযোগ এর মোবাইল নাম্বার দেওয়া হয়। এসব নাম্বারে কোনরূপ আর্থিক লেনদেনের আগে যাচাই করার অনুরোধ করা হলো। কোন আর্থিক ক্ষতি বা কোন প্রকার সমস্যা হলে তার জন্যে ভ্রমণ গাইড দায়ী থাকবে না।