Home Uncategorized অমানবিক

অমানবিক

ছবি সংগৃহীত

বাইরের শহরে কাজ করতে গেছিলেন। তখনই শরীরে কোভিডের উপসর্গ দেখা দেয়৷ জ্বর গায়ে ফেরত আসায় তাঁকে ঢুকতে দেয়নি গ্রামবাসীদের একাংশ। তারপর মুমূর্ষু অবস্থায় ধুঁকতে ধুঁকতে যখন মারা যাওয়ার জোগাড়, তখন হুঁশ ফেরে অনেকের। টলতে টলতে বাড়ির বাইরে এসে লুটিয়ে পড়েন তিনি।

এখানেই শেষ নয়। তখনও অমানবিক ছবির অন্তটুকু দেখা বাকি। কারণ, স্বামীকে ওভাবে পড়ে থাকতে দেখেও দরজা খোলেননি তাঁর স্ত্রী। উল্টো খিল তুলে দেন। কিন্তু আটকানো যায়নি বছর সতেরোর মেয়েকে। বাবার মুখে এক ফোঁটা পানি তুলে দিতে এগিয়ে যায় সে। মায়ের বারণকে উপেক্ষা করে। শেষরক্ষা অবশ্য হয়নি। কিছুক্ষণ পরে দরজার বাইরে শুয়েই বছর পঞ্চাশের ওই ব্যক্তি মারা যান।

ঘটনাস্থল ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীকাকুলাম। মৃতের পরিবারের দাবি, ওই ব্যক্তি বিজয়ওয়াড়ায় কাজ করতেন। রবিবার জ্বর গায়ে ফিরে আসেন তিনি। কিন্তু গ্রামের লোকেরা রাস্তা আটকায়৷ জানানো হয়, কোনও আক্রান্তকে গ্রামে ঢুকতে দেওয়া হবে না। কারণ, তাঁরা এলেই সংক্রমণ বাড়বে। বাধ্য হয়ে তিনি গ্রামের বাইরে একটি খেতে পড়ে থাকেন।

পরে অবস্থার অবনতি হলে ঢোকার অনুমতি মেলে। কিন্তু ততক্ষণে যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে গিয়েছে। কোনওমতে বাড়ির সামনে এসেই টাল খেয়ে পড়ে যান ওই ব্যক্তি। এই দৃশ্য দেখেও মুখ ফিরিয়ে নেয় তাঁর পরিবার। দরজায় খিলও তুলে দেয় তারা। অথচ একমাত্র মেয়েটিকে আটকানো যায়নি। শত নিষেধ সত্ত্বেও পানির বোতল হাতে বাবার কাছে ছুটে আসে সে।

গোটা ঘটনার ভিডিও এক গ্রামবাসী রেকর্ড করেন। পরে তা সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে দেখা যায়, মেয়েটি এগিয়ে এলেও তাঁর মা ক্রমাগত বাধা দিচ্ছেন। এমনকী তাঁকে বলতে শোনা যায়, বাবাকে পানি দিলে বাড়ির সবাই করোনায় আক্রান্ত হবে।

কিন্তু কোভিডে ধুঁকতে ধুঁকতে এভাবে তাঁর মৃত্যু হল কেন? ভিডিও রেকর্ড করতে থাকা ব্যক্তির বক্তব্য অনুযায়ী, গ্রামের আশপাশের কোনও হাসপাতালেই বেড খালি নেই। ফলে কার্যত বিনা চিকিৎসাতেই ওই ব্যক্তি মারা যান৷

যদিও চিকিৎসা পরিকাঠামোর বেহাল দশার বদলে নেটিজেনদের ঘুম উড়িয়েছে ছোঁয়াছুঁয়ি নিয়ে গ্রামবাসীদের কুসংস্কার। করোনা আক্রান্তের পাশে দাঁড়ানোর বদলে তাঁকে দূরে ঠেলে দেওয়া সামাজিক ব্যাধির চেহারা নিতে পারে। সংক্রমণের ছোঁয়াচ যত বাড়বে, এই সমস্যা ততই গভীর হবে বলে দুশ্চিন্তা প্রকাশ করেছেন নেটনাগরিকদের একটা বড় অংশ৷

-দি ওয়াল