অগ্রনৈতিক অগ্রযাত্রায় ২০২০ সাল হবে মাইলফলক। এমনটিই মনে করেন দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী নেতা ও শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীর। বিজনেসটুডে২৪ এর সাথে আলাপে তারা এ আশা পোষণ করেন।
চিটাগাং চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম আশা করেন যে নতুন বছর দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় মাইলফলক হবে ২০২০। আরও বলেন,নতুন বছর মানে নতুন নতুন স্বপ্ন। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে পাওয়া আমাদের এই দেশ যেন তার মর্যাদা সমুন্নত রেখে আরও সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারে নতুন বছরে এটাই সবার প্রত্যাশা। চেম্বার সভাপতি বলেন, দেশকে এগিয়ে নিতে সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে। পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে আমাদেরকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে বলে উল্লেখ করেন মাহবুবুল আলম।
বিজিএমইএ-র প্রথম সহ-সভাপতি মো. আবদুচ ছালাম বলেছেন, বিদায়ী ২০১৯ সাল ছিল অত্যন্ত ডিফিকাল্ট পিরিয়ড। আশা করছি, সবার সহযোগিতায় ২০২০ সাল ভাল যাবে।বিদায়ী বছরের কথা উল্লেখ করে বলেন, সবচেয়ে বড় এলার্মিং বিষয় গত ৫ মাসের প্রবৃদ্ধি ছিল নেতিবাচক। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় তা ইতিবাচক করতে হবে। সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সরকারি সহযোগিতা-সহায়তা, আমরা যেসব চেয়েছি সেগুলোর ব্যাপারে। সেইসঙ্গে প্রয়োজন কাস্টম মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ণ, বন্দর ও কাস্টম হাউসে কাজের প্রক্রিয়া সহজীকরণ ইত্যাদি।
মেট্রোপলিটন চেম্বার-এর সহ-সভাপতি ও বিজিএমই পরিচালক এ এম মাহবুব চৌধুরী আশা করেন যে কাস্টম হাউসের হয়রানি এবং বন্দর সুবিধার অপর্যাপ্ততার কারণে পোশাক শিল্পের যেসব বৈদেশিক ক্রেতা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন তারা আবার ফিরে আসবেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমদানি পণ্য খালাসে কাস্টম হাউসের কাযক্রম সম্পন্ন করতে প্রচুর সময় ক্ষেপণ হয়। কখনও কখনও তা ১৫ দিন থেকে একমাস।বহির্নোঙরে জাহাজকে অপেক্ষমান থাকতে হয় ১০ দিন। এভাবে সময় নষ্ট হওয়ায় বিরক্ত হয়ে বিদেশি ক্রেতারা বিমুখ হয়েছেন।এ কারণে আমাদের রপ্তানি হ্রাস পেয়েছে।আগস্টে কমেছে ১১ শতাংশ, সেপ্টেম্বরে ৭.৫ শতাংশ, অক্টোবরে ১৯ শতাংশ এবং নভেম্বরে ২০ শতাংশ কমে গেছে। এই প্রবণতা রোধ করা না গেলে দেশের রপ্তানি হ্রাস পাবে এবং শিপিং কোম্পানি, সিএন্ডএফ এজেন্ট, ব্যাংক এবং বিমা কোম্পানিগুলোর ব্যবসা লাটে উঠবে। নতুন বছরে আমদানি পণ্য ভিয়েতনাম বা কম্বোডিয়ার মত দ্রুত ২ দিনের মধ্যে সম্পন্ন করা ব্যবস্থা সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করবে বলে তিনি আশা করেন।
চিটাগাং মেট্রোপলিটন চেম্বারের পরিচালক, বিএসএম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল বশর চৌধুরী বললেন, নতুন বছরে প্রত্যাশা অনেক । ২০১৯ মোটামুটি ভাল গেছে। বর্তমানে ব্যাংকিং সেক্টরে যে অস্থিরতা বিরাজমান তাতে কর্মসংস্থান, ব্যবসা, শিল্প কারখানা স্থাপন ও সম্প্রসারণে সংকট চলছে। ব্যাংকে মন্দ ঋণ বাড়ছে বলে আগের মত ঋণ দিতে পারছে না। এতে দেশে অর্থনৈতিক মন্দা বেড়ে যাবে।কারণ, আমরা প্রধানত আমদানি নির্ভর। রপ্তানি আয় এবং আমদানি ব্যয়ের মধ্যে ব্যবধান প্রচুর। অনেক শিল্প কারখানার কাজ অসমাপ্ত পড়ে আছে। আবার সম্প্রসারণ কাজ করতে পারছেন না বহু উদ্যোক্তা। শুধুমাত্র তৈরি পোশাকের দিকে তাকিয়ে থাকলে হবে না। নতুন নতুন পণ্য নতুন নতুন দেশে রপ্তানি বাড়ানোর সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিতে হবে। নতুবা ভারসাম্য আসবে না। জনশক্তি রপ্তানি খাতে প্রচুর রেমিটেন্স আয় হচ্ছে সত্য, কিন্তু সেটা দ্বিগুণ করা যায়। এরজন্য প্রয়োজন দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা। বর্তমানে বিদেশে কর্মরতদের অধিকাংশ অদক্ষ।
খাতুনগঞ্জ ট্রেড এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও চিটগাং চেম্বার পরিচালক সৈয়দ ছগীর আহমেদ আশা করেন যে ২০২০ সাল হবে ব্যবসা বান্ধব। এ লক্ষে নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প, বন্দরের বে-টার্মিনাল প্রকল্পসহ অন্যান্য প্রকল্প স্বচ্ছতার সাথে দ্রুত সম্পন্ন হওয়া আবশ্যক। সেই সঙ্গে প্রয়োজন সিঙ্গেল ডিজিট ব্যাংক ইন্টারেস্ট অবিলম্বে কাযকর করা। চলমান অবস্থায় ব্যাংকের সুদ এবং এস্টাবলিশমেন্ট খরচের পর মুনাফা করা দূরুহ। সৈয়দ ছগীর আহমেদ আশা করেন, চট্টগ্রামকে সত্যিকারের বাণিজ্যিক রাজধানী করা, শাহ আমানতের সাথে পূর্বমুখী দেশসমূহের সংযোগ, রেলব্যবস্থার উন্নয়ন, ঢাকা-চট্টগ্রাম ৮ লাইন সড়ক ইত্যাদি বিষয়ে সরকার ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
বাংলাদেশ শিপ হ্যান্ডলিং এন্ড বার্থ অপারেটরস্ এসোসিয়েশন-এর চেয়ারম্যান এ.কে.এম. শামসুজ্জামান (রাসেল)বলেছেন, একজন ব্যবসায়ী নেতা হিসাবে আমি চাই নতুন বছর তথা ২০২০ সালে জাহাজ জট, শ্রমিক অসন্তোষ ও দুর্নীতিমুক্ত এবং বিশ্বের একটি আধুনিক ও গতিশীল বন্দর হিসেবে চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম পরিচালিত হউক।বন্দরের উন্নয়নে ইতিমধ্যে গৃহিত বে-টার্মিনাল, পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল ও অন্যান্য প্রকল্প ২০২০ সালে সম্পন্ন করা সম্ভব হলে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা দ্বিগুণ বৃদ্ধি পাবে এবং বহির্বিশ্বে সুনাম বৃদ্ধি পাবে। তাছাড়াও চট্টগ্রাম বন্দরের আওতায় মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে গভীর সমুদ্র বন্দর গড়ে তোলা হচ্ছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে চট্টগ্রাম বন্দরের উপর চাপ অনেকটা কমবে। সেইসঙ্গে বিভিন্ন দেশকে ট্রানজিট সুবিধা দিয়ে দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সংযোগ রক্ষাকারী হিসাবে বিশেষ অবদান রাখতে পারবে গভীর সমুদ্র বন্দর।চেয়ারম্যান ও শীর্ষ কর্মকর্তাদের দূরদর্শীতা, আন্তরিকতা ও সর্বাত্মক সহযোগিতার কারণে বন্দরে উৎপাদনশীলতা লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করেছে বিদায়ী বছরে।যা দেশের ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য নি:সন্দেহে একটি ভাল লক্ষণ।
বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস্ এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান এহসানুল হক চৌধুরী নতুন বছরে বন্দর আরও গতিশীল হবে এবং নতুন নতুন সুবিধা তৈরি হবে বলে প্রত্যাশা করন।বিজনেসটুডে২৪ কে তিনি বলেন, বন্দর যেসব প্রকল্প হাতে নিয়েছে সেগুলো নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে বাস্তবায়ন আবশ্যক। পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল চালু হলে জাহাজের অপেক্ষাকাল কমে যাবে। আমদানি পণ্য আনস্টাফিং বাইরে করতে হবে। এর ব্যবস্থা নিতে হবে এনবিআরকে। অফডককে না দিলেও বাফাকে দিয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে বন্ডেড ওয়্যারহাউজ সুবিধা তৈরি করা যায়।তা করা হলে জেটিতে জট কমবে।
বহুজাতিক শিপিং কোম্পানি পিআইএল-এর বাংলাদেশ’র কান্ট্রি ইনচার্জ, বাংলাদেশ কন্টেইনার এসোসিয়েশনের নির্বাহী সদস্য আবদুল্লাহ জহির বিজনেসটুডে২৪ কে বলেন, বাংলাদেশে আমদানি-রপ্তানি খাতে যে বিশাল প্রবৃদ্ধি তা সামাল দেয়ার জন্য বিশেষত বে-টার্মিনাল প্রকল্প, পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনালসহ অন্যান্য প্রকল্পসমূহের কাজ প্রধানমন্ত্রীর ফাস্ট ট্র্র্যাক-এ নেয়া আবশ্যক।বন্দরে আরও জেটি প্রয়োজন, আরও ইকুইপমেন্ট প্রয়োজন। ভারতের পণ্য যদি আসতে শূরু করে সেটা মোকাবেলায় আমাদেরকে তৈরি থাকতে হবে। তিনি আশা করেন যে নতুন বছরে এ সব বিষয়ে সরকার ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স-এর সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী আশা করেন যে নতুন বছরে সরকার কক্সবাজারে বহুমাত্রিক পর্যটন সুবিধা গড়ে তোলার জন্য ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করবে।
বিজনেসটুডে২৪ কে তিনি বলেন, দেশের অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে প্রবৃদ্ধি এবং টেকসই অর্থনীতির ভিত্তি স্থাপনের জন্য যা যা করণীয় তার সব যেন করা হয়, দুর্নীতি বন্ধের সর্বাত্মক পদক্ষেপ এবং বড় বড় প্রকল্পসমূহ সময় মত বাস্তবায়ন হোক এই প্রত্যাশা তার। আবু মোরশেদ বলেন, আমরা ব্যবসায়ীরা ব্যবসা, শিল্পখাতে বিনিয়োগ করতে চাই। ব্যাংক থেকে ঋণ সুবিধা পাচ্ছি না।সিঙ্গেল ডিজিট সুদের কথা শুনে আসছি মাসের পর মাস ধরে। বাস্তবে এবার যেন তা হয় তার দিকে তাকিয়ে আছি।কক্সবাজার অঞ্চলে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন রোহিঙ্গাদের কারণে। এই প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক ত্রাণ স্ংস্থা এবং এনজিওদের কাছে প্রত্যাশা যেন স্থানীয় ব্যবসায়ীদের অগ্রাধিকার দেয়া হয়।কক্সবাজারে যেসব সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে যেগুলোতে স্থানীয় বেকার যুবকদের সম্পৃক্ত করা হবে নয়া বছরে এই আশা করেন চেম্বার সভাপতি।