বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক
১-২ নয়, প্রায় ৪৯ বছর অলিম্পিকের আসরে ফিরল মিউনিখ হত্যাকাণ্ডের স্মৃতি। করোনায় মৃতদের পাশাপাশি প্রায় পাঁচ দশক আগে প্রাণ হারানো অ্যাথলিট এবং অন্যদের শুক্রবার স্মরণ করা হল অলিম্পিক উদ্বোধনের মঞ্চে।
১৯৭২ সালের ৫ সেপ্টেম্বর মিউনিখে গেমস ভিলেজে হামলা চালায় প্যালেস্টাইনের জঙ্গি সংগঠন ব্ল্যাক সেপ্টেম্বর। তাতে মোট ১৭ জনের মৃত্যু হয়। এদিন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এক ঘোষক বলেন, অলিম্পিক সমাজের তরফে আমরা প্রয়াত সব অলিম্পিয়ান তথা আমাদের সমাজের সদস্যদের স্মরণ করছি। বিশেষভাবে স্মরণ করতে চাই যাঁরা অলিম্পিক চলাকালীন প্রাণ হারিয়েছেন। এরমধ্যে ১৯৭২ মিউনিখ গেমসের সময় প্রাণ হারানো অ্যাথলিটরা আমাদের মনে বিশেষ জায়গা অধিকার করে রয়েছেন।
অতর্কিতে হামলা চালিয়ে গেমস ভিলেজে ঢুকে ইজারায়েলি অ্যাথলিটদের পণবন্দী করে জঙ্গিরা। দীর্ঘক্ষণ আলোচনায় কাজ না হওয়ায় প্রত্যুত্তর দেওয়া শুরু করে পুলিশ। ২৪ ঘণ্টা পর অপারেশন শেষ হলে দেখা যায়, প্রাণ হারিয়েছেন ১১ জন ইজরায়েলি অ্যাথলিট। সঙ্গে একজন জার্মান পুলিশ এবং পাচ প্যালেস্তাইনিও মারা যান। এতদিন ইজরায়েল দাবি জানালেও তা পাত্তা দেয়নি আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি। শেষ পর্যন্ত শহিদরা প্রাপ্য স্বীকৃতি পাওয়ায় খুশি সেদেশের সংস্কৃতি ও ক্রীড়ামন্ত্রী হিলি ট্রোপার।
প্রত্যাশামতো শুক্রবার স্থানীয় সময় রাতে জাপানের সম্রাট নারুহিতোর হাত ধরে আনুষ্ঠানিকভাবে অলিম্পিকের সূচনা হল। ১৯৬৪ সালে শেষবার টোকিওয় অলিম্পিকের সূচনা করেছিলেন তাঁর দাদু সম্রাট হিরোহিতো। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে দাদুর সেই নজিরকে স্মরণ করলেন জাপ সম্রাট। এবারের অলিম্পিক অবশ্য সব দিক থেকেই ব্যতিক্রমী। প্রতিবার মার্চ পাস্টের পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হয়। এবার সেখানে যাবতীয় নাচ-গান শেষে মাঠে এলেন অ্যাথলিটরা।
এদিন অনুষ্ঠান দেখতে ৬৮ হাজারের দর্শকাসনে উপস্থিত ছিলেন প্রায় এক হাজার বিশেষ অতিথি। নিয়ম মেনে সবার আগে ছিলেন অলিম্পিকের আঁতুড় গ্রিসের অ্যাথলিটরা। ভারতীয়রা ছিলেন ২৫ নম্বরে। সামনে জাতীয় পতাকা হাতে হকি অধিনায়ক মনপ্রীত সিং, পাশেই বক্সার মেরি কম। এদিন ছেলেদের পরনে ছিল নীল গলাবন্ধ, মেয়েরা পরেছিলেন ঘিয়ে রংয়ে চুড়িদার। আগের দিন ৩০ জন অ্যাথলিট উপস্থিত থাকার কথা ঘোষণা করা হলেও এদিন হাজির হলেন ২২ জন। সঙ্গে ৬ জন অফিশিয়াল।
এদিন বন্ধ দরজার পেছোনে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হবে জেনেও টোকিওর ন্যাশনাল স্টেডিয়ামের বাইরে হাজির হয়েছিলেন কয়েক হাজার মানুষ। বাইরে দাঁড়িয়ে দেখলেন আতসবাজি আর আলোর খেলা। এমনই একজন আইকো হিরোতো ঘণ্টা ছয়েক আগেই চলে এসেছিলেন। তাঁর কথায়, জানি দর্শক প্রবেশের অনুমতি নেই। তবে স্টেডিয়ামের বাইরেই যে পরিবেশ তৈরি হল, তাতে আমি মুগ্ধ। আশা করছি, গ্যালারি ফাঁকা থাকলেও অ্যাথলিটরা জানতে পারবে বহু মানুষ ওদের পাশে আছেন। এছাড়া জাপানের মাকু ফুকুহারা, চিনের চো কৌকো বা তাইওয়ানের হান ই-তিং ছিলেন ওই ভিড়ে।
করোনাকালে অলিম্পিক আয়োজন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চাপে রয়েছে আইওসি। একের পর এক সমীক্ষার ফলে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে অলিম্পিক বিরোধী মতের পরিমাণ। শুক্রবার রাতে উদ্বোধনের মঞ্চে দাঁড়িয়ে বাইরের দৃশ্য দেখতে পেলে, নিশ্চিতভাবেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতেন আইওসি প্রধান টমাস বাখ।