দল ছেড়ে যাওয়া নেতাদের সমালোচনা করে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি বলেছেন, ‘আমরা এই সরকারকে সমর্থন করেছি। এমনকি সরকারে অংশগ্রহণ করেছি। আমাদেরকে বলা হয়েছে, আমরা নাকি নৌকা প্রতীক নিয়ে হাতুড়ি আত্মসমর্পণ করেছি বুর্জোয়াদের হাতে।’
শনিবার সন্ধ্যায় যশোর টাউন হল ময়দানে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির খুলনা বিভাগীয় জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাশেদ খান মেনন একথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়াই করে হেরে গেলে তো দুঃখ হবেই। নৌকা প্রতীক আপনারা নেন নাই, নিয়েছেন? সেদিন বলেছিলাম বাঘারপাড়ায় নৌকা প্রতীক যদি নাও পাই, হাতুড়ি নিয়েই লড়াই করব আমরা। সেদিন আপনারা রাজি হন নাই, কেন রাজি হন নাই? কারণ নৌকা পেলে আপনাদের ভালো হয়। ওয়ার্কার্স পার্টি দশম কংগ্রেসে সিদ্ধান্ত নিয়েছে আগামী নির্বাচনে হাতুড়ি প্রতীক নিয়েই ভোট করবে।’
যশোর জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি অ্যাড. আবু বকর সিদ্দিকের সভাপতিত্বে জনসভায় রাশেদ খান মেনন আরও বলেন, ‘অভিযোগ করা হয়েছে আমরা ১৪ দল করে আত্মসমর্পণ করেছি। যদি ১৪ দল না হতো, আমার রাসেল খান জীবন না দিত, আপনারা কেন, ক্ষমতাসীনরাও এই মাঠে দাঁড়িয়ে বক্তব্য দিতে পারতেন না। জামায়াত, জঙ্গিবাদ, শায়খ, বাংলাভাইদের হাতে দেশ চলে যেত। আমার গরিব মানুষ, শ্রমিক, ক্ষেতমজুর কোথায় যেত ? সমস্ত পাটকল, কেমিক্যাল কোম্পানি ব্যক্তি মালিকানার হাতে তুলে দেওয়া হতো। সেদিন আমরা লড়াই করেছিলাম বলেই পরিবর্তন হয়েছিল। ফখরুদ্দীন-মঈনুদ্দিনের শাসন এসেছিল।’
তিনি বলেন,‘ ওয়ার্কার্স পার্টি বলেছিল, এই শাসন মানি না। তাহলে এই কথাই সত্য, একমাত্র ওয়ার্কার্স পার্টি সাহসের সঙ্গে শ্রমিকের অধিকার, ক্ষেতমজুর, যুবক, ছাত্রের সাংবাদিকের অধিকার নিয়ে লড়াই করেছে। লড়াই করবে। সমতা ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনের রাজনীতি শুরু হয়েছে। এই আদর্শের রাজনীতিতে গণমানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে সঙ্গে থাকবে।’
মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ কমরেড আসাদ, তোজো, শান্তি, নজরুল, হেমকে স্মরণ করে জনসভায় রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘বিভ্রান্তির রাজনীতি সেদিন অসংখ্য তরুণের প্রাণ নিয়েছিল। কিন্তু শহীদের খাতায় তাদের নাম উঠেনি। আজকে আবার সেই যশোর থেকেই দেখি বিভ্রান্তির রাজনীতি শুরু হয়েছে। যখন সমস্ত দেশ উন্নয়নের পথে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে, সমতার যুদ্ধে লড়াই বিস্তৃত হচ্ছে। কৃষকের ধানের দাম, পাটকল শ্রমিকের জন্য যে লড়াই বিস্তৃত হচ্ছে। তখন আমাদের তত্ত্ব দেওয়া হচ্ছে মতাদর্শ রক্ষা করতে হবে। এখন মতাদর্শ রক্ষা করতে হবে, দল ভেঙে দল ছুট হয়ে। আপসোস আপনাদের কারণে এই দলছুট। তবে এতে ওয়ার্কার্স পার্টির কোন ক্ষতি হয়নি।’
জনসভায় বিশেষ অতিথি বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা এমপি বলেন, ‘যারা যশোরে ওয়ার্কার্স পার্টির মতাদর্শ রক্ষার সম্মেলন করেছেন তাদের সংখ্যা ৫৫ জন। তারা সারাদেশ থেকে লোকজন ডেকে নিয়ে এসে সম্মেলন দেখিয়েছেন। যারা এই সম্মেলন করেছেন তাদের আদর্শের উৎস বিমল বিশ্বাস। তিনি তাদের প্রধান উপদেষ্টা। এই বিমল বিশ্বাস ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের পতাকা চিনতেন না। তিনি আর সিপিবি আজ এক হবেন, এটাই স্বাভাবিক। তাদের প্রধান প্রবণতা হচ্ছে সাম্প্রদায়িক শক্তিকে তারা দেখতে পান না। সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই তারা বুঝতে পারেন না। তারা বাংলাদেশের মূল রাজনীতি বুঝতে পারে না এটাই বাস্তবতা। সিপিবি বাংলাদেশের রাজনীতিতে কোনো ভূমিকা পালন করে নাই।’