সুগার কমে যায়নি তো?
ফ্যানের তলায় বসেও দরদর করে ঘাম হচ্ছে। হঠাৎই মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠল। চোখের সামনে অন্ধকার। গায়ে-হাত পায়ে ব্যথা, শরীর যেন আর টানাই যাচ্ছে না। হার্ট অ্যাটাক হল কি?
ডাক্তারবাবুরা বলছেন, রক্তে শর্করা (Blood Sugar) বা সুগারের মাত্রা আচমকা কমে গেলে এমনসব লক্ষণ দেখা যায়। ডায়াবেটিসের রোগীদের ভয়ের কারণ বেশি। সাধারণত, ডায়াবেটিস হলে রক্তে শর্করার পরিমাণ মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যায়। একে বলে হাইপারগ্লাইসেমিয়া। কিন্তু যদি হঠাৎ করেই সুগার লেভেল কমে যায় তাহলে বড় বিপদ। বাড়াবাড়ি হলে জ্ঞান হারিয়ে রোগী কোমায় চলে যেতে পারে। রক্তে শর্করার মাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় কমে গেলে ডাক্তারি পরিভাষায় বলা হয় ‘হাইপোগ্লাইসিমিয়া’। হাইপো মানে হল কম। হাইপোগ্লাইসিমিয়ায় (Hypoglycemia) হলে হাজারো শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
কী কী লক্ষণ দেখা দেয়
প্রচণ্ড মাথা ঘুরতে থাকে
শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে
বুক ধড়ফড় করে
ক্লান্তিবোধ তো আছেই
ঝিমুনি, পেশির খিঁচুনি দেখা দেয় অনেকের, শরীর কাঁপতে থাকে
খিদে পেয়ে যায়
শরীরে অস্থিরতা দেখা দেয়
ইনসুলিন কি বেশি নিচ্ছেন? সাবধান
হাইপোগ্লাইসেমিয়া নানা কারণে হতে পারে। প্রথমত ডায়াবেটিসের রোগীদের বেশি সতর্ক থাকতে হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রয়োজনের থেকে বেশি ইনসুলিন নিয়ে ফেললে বিপদ। তাছাড়া, কম খেলে বা সঠিক ডায়েট না করলে সমস্যা হতে পারে। আবার প্রয়োজনের অতিরিক্ত শরীরচর্চা, পুষ্টিকর খাবারের ঘাটতি, অতিরিক্ত মদ্যপান রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ কমিয়ে দিতে পারে। গর্ভধারণ করলে বা স্তন্যপান করালেও রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ কমে। তখন পুষ্টিকর খাবার খেতে হয়।
মস্তিষ্কের কাজ পরিচালনার জন্য রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণে ভারসাম্য বজায় রাখতে হয়। শরীরের অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কাজের জন্যও গ্লুকোজ দরকার। শরীরে শক্তির উৎসই হচ্ছে গ্লুকোজ বা শর্করা। তাই শর্করার পরিমাণ যজি প্রয়োজনের চেয়ে কমে যায় তখন তার প্রভাব পড়ে মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রে।
হঠাৎ করে সুগার কমে গেলে কী করবেন?
ডাক্তারবাবুরা বলছেন, ডায়াবেটিক রোগীর যখন ইনসুলিন বা ওষুধ চলছে, তখন তার রক্তে তার গ্লুকোজ় লেভেল স্বাভাবিকের কাছাকাছিই থাকে। অনেকসময় রোগী সেটা বুঝতে পারে না। হয়ত তিনি খালি পেটে খুব ভারী ব্যায়াম করতে গেলেন বা ঠিক সময় খাবার খেলেন না, তখন বিপত্তি বাঁধে। এতে কিন্তু হাইপোগ্লাইসেমিয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। অর্থাৎ ব্লাড সুগার লেভেল হুট করে অনেকটা নেমে গিয়ে রোগীর শরীরে ক্ষতি করতে পারে।
ইনসুলিন বা নিয়মিত ওষুধ চললে আরও সতর্ক হতে হবে। ব্যায়ামের আগে অবশ্যই হালকা কিছু খেয়ে নিতে হবে। নিয়মিত ব্লাড সুগার পরীক্ষা করাও জরুরি।
সুগার লেভেল কমে যাচ্ছে, শরীরে অস্বস্তি শুরু হয়েছে বুঝতে পারলেই ঈষদুষ্ণ জলে সামান্য গুড় বা এক চামচ চিনি মিশিয়ে সঙ্গে সঙ্গে খেয়ে নিন। হাতের কাছে থাকলে গ্লুকোজ ট্যাবলেট খেতে পারলে ভাল হয়। এক কাপ চিনির সিরাপ, হাফ কাপ ফলের রস খেলেও উপকার হয়। খাবার খাওয়ার মিনিট পনেরো পরে, রক্তে কতটা শর্করা আছে দেখা উচিত। তখনও যদি সুগার লেভেল ৭০ মিলিগ্রাম/ ডেসিলিটারের কম থাকে তাহলে আরও খেতে হবে। রোজকার ডায়েটে কড়াইশুঁটি, কলা, বার্লি, দুধ, কাজুবাদাম, সয়াবিন, দই ইত্যাদি রাখুন। এই খাবারগুলিও সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। ঘন ঘন হাইপোগ্লাইসেমিয়া হলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
এখন অনেকেই সেডেন্টারি জীবনযাপনে অভ্যস্ত, ফলে খুব সহজেই থাবা বসাচ্ছে ডায়াবিটিস। শরীর সুস্থ রাখতে সময় থাকতেই জীবনযাপনে বদল আনুন। ধূমপান ছেড়ে দিন বা ধীরে ধীরে কমিয়ে আনুন। কম ফ্যাট এবং মাপমতো কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবার খান। একবারে কম খেয়ে বার বার অল্প অল্প করে খান।-দি ওয়াল