আমিরুল মোমেনিন
ঢাকা: আজ রবিবার নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন (নাসিক) নির্বাচন। এটা হচ্ছে ইসির নূরুল হুদা কমিশনের বিদায়ের শেষ পর্যায়ের কোনো আলোচিত নির্বাচন।
সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ৫ লাখ ১৭ হাজার ৩৬১ ভোটার অধ্যুষিত নাসিক নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৭ জন প্রার্থী। ২৭টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ১৪৮ জন এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিল পদে ৩৪ জন । নির্বাচনে মেয়র পদে মূল লড়াই হবে নৌকার প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী আর হাতি মার্কার প্রার্থী অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারের মধ্যে। আইভী বলেছেন, নির্বাচনের বিশৃঙ্খলা না হলে কমপক্ষে ১ লাখ ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হবো। আর অ্যাডভোকেট তৈমূর তার কর্মী সমর্থকদের গ্রেফতারের অভিযোগ করে বলেছেন, সুষ্ঠু ভোট হলে ১ লাখ ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হবো। তবে নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের প্রতি ভোটারদের আর্তি তারা যেন নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারেন।
নাসিক নির্বাচনে এবার ১৯২ কেন্দ্রের সবকটিতেই ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ করা হবে। এ জন্য ২৯১২ ইভিএম মেশিন প্রস্তুত করা হয়েছে। ভোট গ্রহণে বিশৃঙ্খলা এড়াতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর নজরদারি করবে।
নির্বাচনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তৈমুর-আইভী ছিলেন আলোচনায়। আর প্রার্থী না হয়েও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য শামীম ওসমান।
প্রচারণার শুরুতে আইভী-তৈমুরের ভোটের সমীকরণ ছিল একরকম। তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং তাদের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপির জাতীয় ও স্থানীয় রাজনীতির প্রভাবে পরিস্থিতি অনেকটাই বদলে গেছে। আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীর চেয়ে ব্যক্তি আইভী বেশি জনপ্রিয়, এমনটাই বলছেন সাধারণ মানুষ। অনেক ক্ষেত্রে ‘নৌকা’ প্রতীক তার জন্য প্রতিবন্ধক হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে। তারা বলছেন, নগরজুড়ে স্থানীয় প্রভাবশালী এক জনপ্রতিনিধির কর্মী-সমর্থকদের জোর-জুলুমের কারণে এই এলাকায় ‘নৌকা’ অনেকটাই অজনপ্রিয় হয়ে উঠেছে; যার প্রভাব নাসিক ভোটেও পড়তে পারে।
আবার কিছু লোক বলছেন, আইভীর জন্য ‘নৌকা’ রাজনীতির চরম ও পরম প্রাপ্তি। তাদের মতে, ‘নৌকা’ প্রতীক না পেলে নারায়ণগঞ্জে আইভীর কর্মী-সমর্থক এবং অনুসারীদের অস্তিত্ব সংকটে পড়তে পারত।
স্থানীয় অনেকের মতে, নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের মধ্যে বিভাজন দৃশ্যমান। শামীম ওসমান এবং আইভীর মধ্যে দীর্ঘদিন যাবত দ্বন্দ্ব চলমান। যার প্রভাবে দুজনের কর্মী-সমর্থক এবং অনুসারীরাও বিভক্ত। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায়ের একাধিক নেতা নানা প্রচেষ্টায় একটা ঐক্যমতের চেষ্টা করলেও, তা ভোটের ফলাফলে খুব একটা কাজ করবে না বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রভাবশালী নেতা তৈমুর আলম খন্দকার। যাকে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির ‘ডিসিশন মেকার’ও বলা হয়। কেন্দ্রীয় নির্দেশ অমান্য করে মেয়র প্রার্থী হয়ে হারিয়েছেন সব পদ-পদবি। ‘ধানের শীষ’ না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রতীক ‘হাতি’ নিয়ে নির্বাচন করছেন। কেন্দ্রীয় নির্দেশ অমান্যকারী তৈমুরকে ভোট দেয়া ঠিক হবে কি-না, এমন প্রশ্নে তৃণমূল বিএনপির কর্মী-সমর্থকরাও দ্বিধা-দ্বন্দ্বে আছেন।
বাকি পাঁচ মেয়র প্রার্থীর মধ্যে হাতপাখা প্রতীকের প্রচারণা সাধারণ মানুষের নজরে পড়েছে। এই প্রতীকে মাঠে আছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মাওলানা মো. মাছুম বিল্লাহ। বাড়ি বাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার চর লহনীয়া গ্রামে। থাকেন নগরীর নবাব ছলিমুল্লাহ রোডে। ৩৯ বছর বয়সী, উচ্চ শিক্ষিত, পেশায় ব্যবসায়ী এই প্রার্থীর নামে কোন মামলা নেই। স্থানীয় অনেকের মতে, হাতপাখার কিছু রিজার্ভ ভোট আছে। ‘চরমোনাই’ পীরের মুরিদ যারা নাসিকে আছেন তাদের অধিকাংশ ভোট হাতাপাখায় পড়বে। অন্য চার প্রার্থী খেলাফত মজলিসের এবিএম সিরাজুল মামুন (দেয়ালঘড়ি), বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মো. জসীম উদ্দিন (বটগাছ), বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির মো. রাশেদ ফেরদৌস (হাতঘড়ি) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল ইসলামের (ঘোড়া) প্রচারণা খুবই সীমিত।