ভারতের কেরালা রাজ্যের সমুদ্র সৈকতে ২০১৫ সাল থেকে নতুন বন্দর তৈরির কাজ শুরু করেছে ভারতের অন্যতম শিল্পগোষ্ঠী আদানি। প্রায় এক বিলিয়ন ডলার খরচ করে তৈরি করা হচ্ছে এই অত্যাধুনিক বন্দর। সিঙ্গাপুর, কলম্বো ও দুবাই বন্দরের সাথে প্রতিযোগিতার জন্য নতুন এই বন্দর তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু গত অগাস্ট মাস থেকে ওই জায়গায় বিরাট শামিয়ানা টাঙিয়ে আন্দোলন শুরু করেছেন কয়েক হাজার মৎসজীবী। তাদের অভিযোগ, পরিবেশ ধ্বংস করে তৈরি হচ্ছে বন্দর। ইতিমধ্যেই বাড়ি নষ্ট হয়েছে বহু মানুষের।
আন্দোলনকারীদের বক্তব্য, ওই অঞ্চলে প্রায় ৫৬ হাজার মৎসজীবী থাকেন এবং মাছ ধরার কাজ করেন। আদানি যে বন্দর তৈরি করছে, তা প্রাকৃতিক বন্দর নয়। সমুদ্রের একটি অংশ ঘিরে ওই বন্দর তৈরির কাজ হচ্ছে। যার ফলে সমুদ্র সৈকতের বিপুল ক্ষতি হচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, পানির স্তর উঁচু হয়ে ঘর ভেসে যাওয়ার আশঙ্কাও আছে বলে মনে করছেন আন্দোলনকারীরা। ফলে, তারা জানিয়ে দিয়েছেন, কোনোভাবেই ওখানে বন্দরের কাজ করতে দেয়া হবে না।
ডয়চে ভেলের সাথে কথা বলেছেন আন্দোলনকারী জ্যাকসন থুম্বাকরন। তিনি বলেছেন, ‘বেশ কিছু মানুষের বাড়ি ইতিমধ্যেই নষ্ট হয়েছে। তারা শিবিরে গিয়ে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। আমার বাড়িও যে কোনো সময় ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। আমরা এই বন্দর তৈরি হতে দেব না।’ জ্যাকসনের অভিযোগ, পরিবেশের কথা না ভেবেই এই বন্দর তৈরির কাজ শুরু হয়েছে।
কেরালার রাজধানী তিরুবন্তপুরম থেকে এই বন্দরের দূরত্ব ৪০ মিনিট। যাদের বাড়ি ইতিমধ্যএই নষ্ট হয়েছে, তারা এখন তিরুবন্তপুরমে একটি সিমেন্ট কারখানায় তৈরি অস্থায়ী শিবিরে আছেন। ডয়চে ভেলে কথা বলেছে সেখানে বসবাসকারী দেবা সহায়মের সাথে। তিনি জানিয়েছেন, প্রায় এক বছর হতে চলল তিনি ওই শিবিরে আছেন। তার কথায়, ‘আদানি গোষ্ঠী বা সরকার কেউ কোনো ক্ষতিপূরণ দেয়নি এখনো। পরিবার নিয়ে আশ্রয়শিবিরেই বসবাস করতে হচ্ছে।’ দেবার বক্তব্য, বন্দর তৈরি হয়ে গেলে আরো বাড়ি নষ্ট হবে। ক্ষতিপূরণ না পাওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
মৎসজীবীরা তাদের দাবি এভাবেই জানিয়ে দিয়েছেন। মৎসজীবীরা তাদের দাবি এভাবেই জানিয়ে দিয়েছেন।
বস্তুত, খ্রিস্টানপ্রধান ওই এলাকায় আন্দোলনে যুক্ত হয়েছে স্থানীয় চার্চের কর্মকর্তারাও। এছাড়াও বাম, দক্ষিণপন্থি দলগুলোও আন্দোলনকারীদের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। ঘটনাস্থলে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আদালত কাজ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিলেও পুলিশ লাঠিচার্জ করে বিক্ষোভকারীদের তুলে দিতে চাইছে না।
প্রশাসনের বক্তব্য, শক্তিপ্রয়োগ করলে সমস্যা আরো বাড়বে। আদানি গোষ্ঠী অবশ্য জানিয়েছে, পরিবেশ সংক্রান্ত সমস্ত ছাড়পত্র নিয়েই তারা বন্দর তৈরির কাজ করছে। ফলে তাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠছে তা ভিত্তিহীন। দেশের গুরুত্বপূর্ণ সংস্থাগুলো গিয়ে সেখানে পরিবেশ-সংক্রান্ত বিষয় পরীক্ষা করে গেছএ। তারা ছাড়পত্র দেওয়ার পরেই কাজ শুরু হয়েছে।
কিন্তু আদানি গোষ্ঠীর এই বক্তব্য মানতে নারাজ আন্দোলনকারীরা। তারা জানিয়েছে, দাবি না মানলে আন্দোলন আরো তীব্র হবে।
সূত্র : ডয়চে ভেলে