Home রকমারি সংবাদ আন্টার্কটিকায় ভেঙে পড়ছে বরফের চাঁই

আন্টার্কটিকায় ভেঙে পড়ছে বরফের চাঁই

ছবি: ইন্টারনেট

বিশাল উঁচু বরফের দেওয়াল এক ঝটকায় হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ছে। বিস্তৃীর্ণ এলাকা জুড়ে হিমবাহে ফাটল। ঝুরঝুর করে নেমে আসছে বরফের প্রকাণ্ড চাঁই। উপগ্রহচিত্রে আন্টার্কটিকার পাইন আইল্যান্ডের এমনই ভয়ানক ছবি দেখাল নাসা।

বিশ্ব উষ্ণায়ণের জেরে তাতছে পৃথিবী। জলবায়ু বদলের ভয়ঙ্কর প্রভাব পড়েছে দক্ষিণ মেরুর বরফের দেশে। প্রকাণ্ড সব হিমবাহ হলতে শুরু করেছে। ভেঙে পড়ছে বরফের দেওয়াল। সেই বরফ গলা জল সমুদ্রে গিয়ে মিশে জলস্তর বাড়িয়ে তুলছে। ধ্বংসের পথে আরও একধাপ এগিয়ে যাচ্ছে মানব সভ্যতা। নাসার স্যাটেলাইট ইমেজে ২০১৭ থেকে ২০২০ সাল অবধি কয়েকটি ছবি ধরা পড়ছে যা হাড়হিম করে দিয়েছে বিশ্বের তাবড় পরিবেশবিদ ও বিজ্ঞানীদের। পাইন আইল্যান্ডের ‘আইস সেলফ’-এ ভাঙন ধরেছে এমন খবর আগেই ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক কিছু ছবি দেখিয়েছে, ভয়ানক ধস নেমেছে বরফের প্রাচীরে। ভেঙে খসে পড়ছে বরফের টুকরো। দ্রুত গতিতে গলতে শুরু করেছে হিমবাহ।

Timelapse shows the Pine Island Glacier flowing towards the sea as chunks of its ice shelf break off into the water

উপগ্রহচিত্র দেখে পরিবেশবিদরা বলছেন, ভেঙে পড়া হিমবাহের অভিমুখ সমুদ্রের দিকে। প্রতি বছর দেড় মাইল থেকে আড়াই মাইল এগিয়ে যাচ্ছে সমুদ্রের অভিমুখে। এই গতি ইদানীংকালে আরও বেড়েছে। সম্প্রতি ‘সায়েন্স অ্যাডভান্স’ জার্নালে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে। সেখানে গবেষকরা বলছেন, পশ্চিম আন্টার্কটিকায় উপকূল বরাবর বিশাল হিমবাহগুলিতে চিড় ধরেছে। ইতিমধ্যেই হিমবাহ ভেঙে সমুদ্রের জলস্তর বেড়েছে। পুরোপুরি গলতে শুরু করলে সমুদ্রের জলস্তর ৫ শতাংশ অবধি বাড়তে পারে বলেও মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। পাইন আইল্যান্ডের যে বরফের প্রাচীর ভেঙে পড়েছে তার কারণেই সমুদ্রের জলস্তর ৪ ফুট (১.২ মিটার) বাড়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

ওন্টারিওর ইউনিভার্সিটি অব ওয়াটারলু-র গ্লেসিয়ার হাইড্রলজি ও আইস ডায়ানামিক্সের শীর্ষ বিজ্ঞানী ক্রিস্টিন ডো বলেছেন, বিশাল উঁচু বরফের দেওয়াল ২০ শতাংশ সঙ্কুচিত হয়েছে। কোনও কোনও এলাকা থেকে আবার বরফের চাঁই অদৃশ্য হয়ে গেছে। হিমবাহে ভাঙন এত দ্রুত হচ্ছে যে চিন্তার কারণ রয়েছে। বেশ কিছু এলাকায় বরফের দেওয়ালে বিপজ্জনক চিড় ধরে রয়েছে, যেগুলো ক্রমাগত বাড়ছে।

Pine Island Glacier In Antarctica Splits | Greener Ideal

গবেষকরা বলছেন, রেকর্ড হারে বরফ গলছে মেরু অঞ্চলগুলিতে। বিশেষত গত কয়েক বছরে গ্রিনল্যান্ডে বড় বড় বরফের চাঁই অদৃশ্য হয়েছে। যার মানেই হল সেইসব হিমশৈল গলে সমুদ্রে মিশে গেছে। যার ফলে সমুদ্রের জলস্তরও বেড়েছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, বরফ গলার হার যত বাড়বে, তত বাড়বে পৃথিবীর উষ্ণতা। আর তত দ্রুত গতিতে গলতে থাকবে বরফ। অর্থাৎ গোটাটা চক্রবৃদ্ধিহারে এগোতে থাকবে।

Rift on Pine Island Glacier

বিজ্ঞানীরা অঙ্ক কষে দেখেছেন, ১৯৯০ থেকে ২০০০ সাল অবধি প্রতি বছরে ৮০ হাজার কোটি টন করে বরফ গলেছে। ২০০০ সালের পর থেকে উষ্ণায়ণের প্রকোপ বাড়ায় আরও বেশি হারে বরফ গলতে শুরু করেছে পৃথিবীতে। ২০১৭ সাল অবধি বছরে গড়ে প্রায় ১ লক্ষ ৩০ হাজার কোটি টন করে বরফ গলেছে।

জলবায়ু বদলের ভয়ঙ্কর প্রভাব পড়েছে গ্রিনল্যান্ডে। এখানেই সবচেয়ে বেশি বরফের চাদর মেরুকে ঢেকে রয়েছে। গত কয়েক বছরে বিশ্ব উষ্ণায়ণে এই বরফের চাদর গলতে শুরু করেছে। তাপমাত্রা বাড়ায় বিশাল বিশাল বরফের চাঁই গলে সমুদ্রে ভেসে বেড়াচ্ছে। দেখা গেছে, ২০১৯ সালের পর থেকে প্রতি মিনিটে দশ লক্ষ টন করে বরফ গলছে গ্রিনল্যান্ডে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, যদি গ্রিনল্যান্ডের হিমবাহ সম্পূর্ণ গলে যায়, তাতে গোটা পৃথিবীতে সমুদ্রের জলস্তর গড়ে ২৩ ফুট বাড়বে।

-দি ওয়াল