Home আন্তর্জাতিক আন্দামানের রহস্যময় দ্বীপে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া জাহাজ!

আন্দামানের রহস্যময় দ্বীপে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া জাহাজ!

অমৃত মলঙ্গী:

বঙ্গোপসাগরের বুকে রহস্যময় নিষিদ্ধ নর্থ সেন্টিনেল দ্বীপে গুগল ম্যাপের মাধ্যমে একটি জাহাজের মাস্তুল দেখা যাচ্ছে। অনলাইন ফোরাম রেডিটে জাহাজের একটি ছবি নিয়ে আলোচনা শুরু হওয়ার পর রহস্য খুঁজতে গিয়ে পাওয়া গেল বাংলাদেশ কেন্দ্রিক এক শিহরণ জাগানো গল্পের সন্ধান।

ব্রিটিশ গণমাধ্যম এক্সপ্রেস বলছে, জাহাজটি ১৯৮১ সালে বাংলাদেশ থেকে পোলট্রির খাবার নিয়ে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার পথে ঝড়ের কবলে পড়ে। তখন উপজাতিরা জাহাজে আক্রমণ চালায়! পরে জাহাজে থাকা কর্মীর গা হিম করা পরিস্থিতি জয় করে প্রাণে বাঁচলেও জাহাজটি আর আনা যায়নি।

এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেই জাহাজের ছবি সম্প্রতি গুগল ম্যাপের ক্যামেরার মাধ্যমে ধারণ করেছেন এক ব্যবহারকারী।

রেডিট এবং এক্সপ্রেসে ছবিটি দেখার পর জাহাজটি সম্পর্কে আরও তথ্য উদ্ধার করেছেন দেশ রূপান্তরের এই প্রতিবেদক।

মার্কিন ইতিহাসবিদ অ্যাডাম গুডহার্ট ‘আমেরিকান স্কলারে’ ২০ বছর আগে এই জাহাজের কাহিনি বর্ণনা করেন।

‘১৯৮১: গৃহযুদ্ধ জাগরণ’ বইয়ের লেখক তার নিবন্ধে বলেন, ১৯৮১ সালের ২ আগস্ট মধ্যরাতের ঠিক আগে পানামানিয়ান-নিবন্ধিত মালবাহী জলজান ‘প্রাইমরোজ’ বঙ্গোপসাগরের প্রবাল প্রাচীরে আটকে যায়। রাত ভেঙে সকাল আসলে তিনি স্বস্তির আশায় বাইরে চোখ রাখেন।

মাত্র কয়েক গজ দূরেই শুকনো জমি, পরিষ্কার পানি, দূরে ঘন জঙ্গল দেখে তার আশার পালে হাওয়া লাগে। চার্ট বিশ্লেষণ করে তিনি বুঝতে পারেন আন্দামানের নর্থ সেন্টিনেল দ্বীপে আছেন।

এই জায়গায় জাহাজ ডোবার সম্ভাবনা নেই বলে অপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেন, যাতে উদ্ধারকারীর সহজে তাদের দেখতে পান।

কয়েক দিন পর এক তরুণ নাবিক প্রাইমরোজের ওয়াচটাওয়ার থেকে দেখেন, কয়েক জন মানুষ তাদের দিকে এগিয়ে আসছেন। তিনি ধারণা করেন, শিপিং কোম্পানি হয়তো লোক পাঠিয়েছে। এরপর লোকগুলোকে আরও ভালো করে খেয়াল করতে থাকেন।

তারা আকারে ছোট, সুগঠিত, এলোমেলো চুল। দেখতে কালো। পরনে চিকন একটা বেল্ট ছাড়া কিছুই নেই। সবার হাতে বর্শা এবং তীর।

এটি দেখে নাবিকেরা ভয় পেয়ে যান। ওয়ারলেস অপারেটর সাহায্য প্রার্থনা করলে বার্তা যায় হংকংয়ের রিজেন্ট শিপিং কোম্পানির অফিসে। প্রাইমরোজের ক্যাপ্টেন দ্রুততম সময়ে আগ্নেয়াস্ত্র চান। তিন বলেন, হেলিকপ্টারের মাধ্যমে যেন অস্ত্র দেয়া হয়।

সেই বার্তাটি ছিল এমন, ‘হিংস্র মানুষেরা আসছে, আনুমানিক ৫০ জন। সবার হাতে বাড়িতে তৈরি অস্ত্র। আমাদের মেরে ফেলবে। জীবন হুমকির ‍মুখে। ’

ভৌগোলিক সীমারেখার মানদণ্ডে এই দ্বীপটি ভারতের। কিন্তু ভারত সরকার শত চেষ্টা করেও দ্বীপে তাদের নাক গলানোর সুযোগ করতে পারেনি। শেষমেশ ভারত বাধ্য হয়েই আইন করে দিয়েছে, ‘লেট দেম লিভ অ্যালোন’। তাই কেউ এখন আর তাদের নির্জনতা, গোপনীয়তা, রহস্যময়তা, স্বাধীনতা ও স্বকীয়তা ভঙ্গ করার কোনা অধিকার রাখে না। দ্বীপের বাসিন্দারাও সেই অধিকার কাউকেই দিতে চায় না। তারা নিজেই রাজা তাদের সেই নিজের রাজত্বে।

তাত্ত্বিকদের মতে, দ্বীপটির বয়স প্রায় ৬০ হাজার বছর। আয়তন ৭২ বর্গকিলোমিটার। তারা কী খায়, কী ভাষায় কথা বলে, সেটি এখনো অজানা।

উপজাতিরা নাবিকদের হামলা করার সময় আবার সেই ঝড় শুরু হয়, যে ঝড়ে জাহাজটি প্রবালে আটকে পড়েছিল। ঝড় এবার নাবিকদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে দেখা দেয়। প্রবল বাতাসে উপজাতিরা তীর-ধনুক দিয়ে সুবিধা করতে পারেনি। জাহাজের দিকে ছোড়া সব অস্ত্র বাতাসের তোড়ে অন্য দিকে যায়। এভাবে কেটে যায় ২৪ ঘণ্টা। নাবিকেরা ভেতরে থেকে কুড়াল, বিভিন্ন ধরনের পাইপ দিয়ে নিজেদের রক্ষা করেন।

ধীরে ধীরে হংকংয়ের মাধ্যমে এই খবর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। প্রায় এক সপ্তাহ পর ভারতের নৌবাহিনী হেলিকপ্টার দিয়ে বিপদগ্রস্ত নাবিকদের উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। ধীরে ধীরে শান্ত হয় দ্বীপটি।

কিন্তু পানির বুকে পড়ে থাকে প্রাইমরোজ…।

-সূত্র: দেশ রুপান্তর