Home Second Lead আফগানিস্থানে মানুষ পেটের মেয়ের বদলে বেছে নিচ্ছে নিজের পেটকে

আফগানিস্থানে মানুষ পেটের মেয়ের বদলে বেছে নিচ্ছে নিজের পেটকে

ছবি সংগৃহীত

বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক

নিজের নয় বছরের মেয়েকে বিয়ের নামে ৫৫ বছরের বুড়োর কাছে বিক্রি করে দিলেন বাবা। দরিদ্রতা কোথায় পৌঁছালে তখন মানুষ পেটের মেয়ের বদলে বেছে নেয় নিজের পেটকেই! তার জ্বলন্ত উদাহরণ এই ঘটনা ।

নাবালিকার বয়স ৯ বছর। জোর করে ছোট্ট এই মেয়েটাকে বিয়ে দেওয়া হল ৫৫ বছরের এক বুড়োর সঙ্গে। ঘৃণ্য এই ঘটনাটি ঘটেছে আফগানিস্থানের বদঘিস প্রদেশে।

আফগনিস্তানে প্রতিদিন দুবেলা খাবারের জন্যও টাকা জোগাড় করতে পারছে না অনেক পরিবার। পেটের ক্ষুধা মেটাতে তাই বিক্রি করতে হচ্ছে সন্তানদের। বিয়ের বয়স না হওয়া সত্ত্বেও ছোট মেয়েদের তুলে দিতে হচ্ছে ক্রেতা পুরুষদের হাতে। সম্প্রতি মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন এর খবরে প্রকাশিত হয়েছে এমনই এক ভয়ঙ্কর তথ্য। মাত্র ৯ বছরের কন্যা সন্তানকে বিক্রি করে দিয়েছেন বাবা। পরিবারের বাকি সদস্যদের মুখে খাবার তুলে দিতে বিক্রি করতে হয়েছে শিশুকন্যাকে, সংবাদমাধ্যমে সে কথা স্বীকারও করেছেন ওই বাবা।

আফগনিস্তানের বদঘিস প্রদেশের উদ্বাস্তু বাসিন্দা আব্দুল মালিক গত মাসে বিক্রি করে দিয়েছেন তাঁর ৯ বছরের কন্যা পরওয়ানা মালিককে। বিক্রি করেছেন ৫৫ বছরের কোরবান নামে এক ব্যক্তির কাছে। কয়েকদিন আগেই পরিবারের বড় মেয়েকেও বিক্রি করেছিলেন, এ বার অভাবের তাড়নায় বিক্রি করলেন ছোট মেয়েটিকেও।

সংবাদ মাধ্যমে আব্দুল জানিয়েছেন, তাঁর পরিবারে আরও আট সদস্য রয়েছন। তাঁদের দু’বেলা খাবার জুটছিল না। তাই বাধ্য হয়ে কন্যাকে বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। তিনি এই সিদ্ধান্তের জন্য অনুতপ্ত, কিন্তু বাঁচার আর কোনও রাস্তা খোলা ছিল না তাঁর কাছে।

আব্দুল জানিয়েছেন, তিনি মেয়েকে প্রথমে বলেছিলেন, ৫৫ বছরের কোরবান তাঁর স্বামী। মেয়ে ভয় পেয়েছিল, ভেবেছিল, বিয়ের পর তাঁকে মারধর করা হবে, অত্যাচার করা হবে শ্বশুরবাড়িতে। সেই কারণে যে দিন তাঁর মেয়ের বাড়ি থেকে যাওয়ার কথা, সে দিন কোরবানকে ডেকে তিনি বলেছেন, ‘মেয়েকে আদরে রাখবেন। দেখবেন, পরিবারের এক জন হয়ে যেন বাঁচতে পারে। মারধর করবেন না’।

আব্দুল জানিয়েছেন, মেয়েকে বিক্রি করে তিনি পেয়েছেন ভেড়ার পাল, সামান্য পরিমাণ জমি ও নগদ কিছু টাকা। সেই দিয়েই আপাতত কয়েকদিন পেটা চালাতে পারবেন বলে মনে করছেন আব্দুল।

চার বছর ধরে তার পরিবার উত্তর-পশ্চিম বাদঘিস প্রদেশের একটি উদ্বাস্তু শিবিরে বসবাস করছে। মানবিক সহায়তা এবং কায়িক পরিশ্রম করে দিনে কয়েক ডলার উপার্জন করে বেঁচে আছে তারা। কিন্তু গত ১৫ আগস্ট তালেবানদের ক্ষমতা দখলের পর থেকে জীবন আরও কঠিন হয়ে উঠেছে।

আন্তর্জাতিক সাহায্য বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এবং দেশের অর্থনীতি ভেঙে পড়ায় তারা খাদ্যও যোগাড় করতে পারছেন না।

দেশটিতে মানবিক সঙ্কট গভীর হয়ে উঠায় অনেক অল্পবয়সী আফগান মেয়েকেই বিক্রি করে দিচ্ছে তাদের পরিবার। ক্ষুধা দেশটির অনেক পরিবারকে হৃদয়বিদারক সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করছে, বিশেষ করে নির্মম শীতকাল আসার সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে উঠেছে।

বাদঘিসের মানবাধিকার কর্মী মোহাম্মদ নাঈম নাজেম বলেন, ‘দিন দিন পরিবারগুলোর তাদের সন্তানদের বিক্রি করার সংখ্যা বাড়ছে। খাদ্যের অভাব, কাজের অভাব, তাই পরিবারগুলো বাধ্য হয়েই এই কাজ করছে’।

পারওয়ানার বাবা আব্দুল মালিকও মেয়েকে বিক্রির আগের রাতে ঘুমাতে পারছিলেন না। তিনি সিএনএনকে বলেন যে, তিনি অপরাধবোধ, লজ্জা এবং উদ্বেগে ভেঙ্গে পড়েছিলেন।

তিনি মেয়েকে বিক্রি করা এড়াতে চেষ্টা করেছিলেন। প্রাদেশিক রাজধানী শহর কালা-ই-নাউতে গিয়েছিলেন কাজের সন্ধানে, কিন্তু কাজ মেলেনি। এমনকি আত্মীয়দের কাছ থেকে ‘অনেক টাকা’ ধার নিয়েছিলেন এবং তার স্ত্রী খাবারের জন্য ক্যাম্পের অন্যান্য বাসিন্দাদের কাছে ভিক্ষাও করেছিলেন।

কিন্তু তিনি অনুভব করেন যে, তিনি যদি তার পরিবারকে খাওয়াতে চান তবে তার আর কোনো বিকল্প নেই।

তিনি সিএনএনকে বলেন, ‘আমরা আট সদস্যের পরিবার। পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের বাঁচিয়ে রাখতে আমাকে মেয়েকে বিক্রি করতেই হবে’।

পারওয়ানাকে বিক্রি করে পাওয়া অর্থ শুধুমাত্র কয়েক মাস তার পরিবারকে টিকিয়ে রাখবে। এরপর মালিককে অন্য সমাধান খুঁজে বের করতে হবে।

পারওয়ানা বলেছিল যে, সে তার বাবা-মায়ের মন পরিবর্তন হওয়ার আশা করেছিল। তার স্বপ্ন ছিল একজন শিক্ষক হওয়ার এবং সে তার পড়ালেখা ছেড়ে দিতে চায়নি। কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয়নি।

গত ২৪ অক্টোবর ক্রেতা কোরবান তাদের বাড়িতে এসে পারওয়ানার বাবাকে ভেড়া, জমি এবং নগদ ২ লাখ আফগানী (প্রায় ২,২০০ ডলার) হস্তান্তর করেন।

গলায় রঙিন ফুলের মালা এবং মাথায় একটি কালো হিজাব পরা পারওয়ানা তার মুখ লুকিয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছিল, আর তার বাবাও কাঁদতে কাঁদতে কোরবানকে বলেছিল, ‘সে আপনার বধূ। দয়া করে তার যত্ন নিবেন, আপনিই এখন তার সব, দয়া করে তাকে মারবেন না’।

এরপর কোরবান পারওয়ানার হাত ধরে দরজার বাইরে নিয়ে গেল। মেয়ের চলে যাওয়ার সময় বাবা দরজায় দাঁড়িয়ে শুধু কাঁদছিল। পারওয়ানা যেতে চাইছিল না, কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয়নি। তাকে অপেক্ষমাণ গাড়ির কাছে টেনে নিয়ে যাওয়া হয়, এরপর ধীরে ধীরে গাড়ীটি তার বাবার চোখের সামনে থেকে অদৃশ্য হয়ে যায়।